মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৫ টা। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে দেখা যায়, এক নারী তার সন্তানকে নিয়ে বসে আছেন। কথা বলে জানা যায়, তার নাম লুৎফুন নেসা আক্তার। তিনি নাচনাপাড়া মানিকখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের সহকারি শিক্ষিকা হিসাবে কর্মরত আছেন।
মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি আদায় আন্দোলনে তিনি অংশ নিয়েছেন। আন্দোলনের অষ্টম দিনে কথা হলে আক্ষেপ নিয়ে লুৎফুন নেসা আক্তার বলেন, “১১ জুলাই আন্দোলনের শুরু থেকে আছি। অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। প্রাকৃতিক কাজ সারতে চরম অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত যাব না “
ক্ষোভ প্রকাশ করে এই শিক্ষিকা আরও বলেন, গত ৮ দিন ধরে কষ্ট করছি। আমরা এখনও কিছু পেলাম না, সপ্তম দিনে পেলাম পুলিশের হামলা আর লাঠিচার্জ। যত কষ্টই হোক না কেন, মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয় করণ না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকে যাব না।”
লুৎফুন নেসার মত অনেকের আক্ষেপগুলো ঠিক একই রকম। যারা বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ) এর ডাক দেয়া অবস্থান কর্মসূচীতে অংশ নিয়েছেন।
এর আগে গত ১১ জুলাই তারা ‘এক দফা, এক দাবি মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয় করণ চাই’ কর্মসূচী শুরু করেন।
মঙ্গলবার (১৮জুলাই) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামানে গিয়ে দেখা যায়, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ) কর্তৃক আয়োজিত আন্দোলনে অংশ নিয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শাখা সমিতির নেতারা। অনেকেই রাস্তার পাশেই বসে আছেন নিজের ব্যাগ পটলা নিয়ে। অনেক নারী শিক্ষিকাদের সঙ্গে বাচ্চাদেরও বসে থাকতে দেখা যায়।
প্রেসক্লাবের দরজার সামনে দেখা যায়, শিক্ষকদের স্ব-রচিত গানে প্রতিবাদ জানাতে। এসময় সমিতির সভাপতি বজলুর রহমান মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদকে বক্তব্য রাখতে দেয়া যায়।
মানিকগঞ্জ জেলার খুরন নাহার উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারি শিক্ষিকা শিউলী ঘোষ বলেন, “আমাদের চারদিকে কষ্ট। আমারা রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে বসে আছি। সবথেকে বড় সমস্যা শৌচাগার না থাকা। অনেকেই প্রেসক্লাবের ভেতরে যেতে চায়। কিন্তু অনুমতি পায় না। অনেক দূরে গিয়ে প্রাকৃতিক কাজ সারতে হয়। এখানে এসেছি ভালো কিছু পেতে। যত কষ্টই হোক দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বাড়ি ফিরব না।”
কিশোরগঞ্জ বাজিত থেকে আসা শিক্ষক মিঠুন দাস বলেন, “১১ জুলাই থেকে এখানে অবস্থান করছি। কোনো প্রকার সাড়া পাই নি। মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমরা শিক্ষক হয়ে আজকে রাজপথে নেমেছি। আমাদের একমাত্র দাবি এবং একটাই দাবি মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয় করণ।
আমাদের এই মানবেতর অবস্থা দেখে শিক্ষামন্ত্রী এসে যদি কথা বলে, দাবি মেনে নেয়। তাহলেই আমরা স্কুলের দরজা খুলব। আমরা পুলিশের হামলার শিকার হয়েছি। এর তীব্র নিন্দা জানাই।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদ বলেন, “আমরা গত ১১ জুলাই থেকে কষ্ট করে আন্দোলন করে যাচ্ছি। যদি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বলি, তবে বলতে হবে কালকে আমাদের ডিজি মহোদয় ডেকেছিলেন। সেখানে ৫ সদস্যের একটি টিম গিয়েছিলাম এবং আলোচনা হয়েছে সেখানে।”
“আলোচনায় আমরা আমাদের দাবি, সুবিধা এবং অসুবিধাগুলো লিখিতভাবে দিয়েছি। তবে এটা আশ্বাস নয়। এই সুবিধা অসুবিধার কথা তারা আগে থেকেই জানে। আজকে নাকি আমাদের সাথে বসবে। বিকাল ৫ টা বেজে গেছে। বসা হবে কি না জানি না। অপেক্ষায় আছি। এখনও আমরা কোনো সাড়া পাইনি।”
তিনি আরো বলেন, “জাতি হিসাবে আমাদের লজ্জার বিষয় কালকে আমরা পুলিশের হামলার শিকার হয়েছি। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। তাদের ধিক্কার জানাই যারা এই কাজের সাথে জড়িত।”
আপনার মতামত লিখুন :