• ঢাকা
  • সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

‘রাস্তার পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে অবরোধ নেই’


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২৩, ০৪:০৪ পিএম
‘রাস্তার পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে অবরোধ নেই’
রাজধানীতে স্বাভাবিক রয়েছে যান চলাচল। ছবি : সংবাদ প্রকাশ

সরকারের পদত্যাগ এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলকে অবৈধ ঘোষণা করে তা প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলোর সপ্তম দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ চলছে। এই কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনেও রাজধানীতে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। সড়কে পর্যাপ্ত গণপরিবহন থাকায় নির্বিঘ্নে গন্তব্যে যেতে পারছেন সাধারণ মানুষ।

সোমবার (২৭ নভেম্বর) রাজধানীতে এমন চিত্র দেখা যায়।

এদিকে বিএনপি নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্যই হরতাল-অবরোধ ডেকে সাধারণ মানুষকে কষ্টে ফেলছেন বলে অভিযোগ করছেন অনেকে। তারা বলছেন, “হরতাল-অবরোধে সড়কে সাধারণ মানুষদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করে মানুষের মনে ভয় ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আর কিছুই হচ্ছে না।”

ভিআইপি বাসে থাকা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মুরছালিন নামের এক যাত্রী সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “সপ্তম দফায় অবরোধ কর্মসূচি চলছে। অথচ মাঠে বিএনপির নেতাকর্মীরা নেই। শুধু ফেসবুকে কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েই শেষ। রাজধানীতে যে যার মতো চলছে। গাড়িও স্বাভাবিক দিনের মতো চলাচল করছে।”

অবরোধের দ্বিতীয় দিনে ঢাকার বিভিন্ন সড়কে ছোট-বড় যানবাহনের চাপ বাড়তে দেখা যায়। ফলে যানজটের চিত্রও দেখা গেছে। এ ছাড়া গণপরিবহনে অফিসগামী যাত্রীদের বাসে ওঠার প্রতিযোগিতাও ছিল চোখে পড়ার মতো।

মহাখালী সাতরাস্তায় যানজট নিরসনে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে দেখা যায় সিগন্যালে অবস্থিত এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্যকে। অবরোধেও স্বাভাবিক দিনের মতো যানজট থাকায় পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে তাকে।

সার্বিক পরিস্থিতি জানতে চাওয়া হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ট্রাফিক সদস্য সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “অবরোধের দিনেও যানজট লেগেছে। সকাল থেকেই সড়কে ছোট-বড় যানবাহনের চাপ বেড়েছে। যানজট নিরসনে সাধারণ মানুষ যে নির্বিঘ্নে গন্তব্যে যেতে পারে, সে জন্য আমরা সড়কে সর্বদায় আছি। আমরা চাই জনগণ স্বস্তিতে চলাচল করুক।”

অন্যদিকে রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচলও স্বাভাবিক রয়েছে। দূরপাল্লার বাস চলাচল ক্রমেই বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের আনাগোনাও বাড়তে দেখা যায়।

পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা জানান, অবরোধে যাত্রীর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে দূরপাল্লার বাসও। এরপর অবরোধ থাকলেও বাস চলাচল স্বাভাবিক হবে বলেও মনে করছেন তারা। কারণ, এতে বাস মালিকরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন। বাস না চললেও শ্রমিকদের উপার্জন বন্ধ হয়ে যায়।

সরেজমিনে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-খুলনা রুটের পর্যটক পরিবহন, নবীনগর রুটের তিশা গোল্ডেন, গোপালগঞ্জ রুটের টুঙ্গিপাড়া পরিবহন, সিলেট ও সুনামগঞ্জ রুটের সুনামগঞ্জ এক্সপ্রেস, মিতালী এক্সপ্রেস, মামুন পরিবহন ও ইকোনো সার্ভিস, চট্টগ্রাম রুটের সিডিএম, মাদারীপুর রুটের সার্বিক পরিবহনসহ বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাসগুলো সায়েদাবাদে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিল। এর মধ্যে কোনো কোনোটি টার্মিনাল ছেড়ে যেতে দেখা যায়।

ইকোনো সার্ভিস পরিবহনের এক চালক সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমরা মালিকের কথা মতো সড়কে গাড়ি নামিয়েছি। আর গাড়ি না চালালে আমাদের সংসার চলবে কীভাবে। হরতাল-অবরোধের কথা চিন্তা করলে আমাদের হবে না।”

এক প্রশ্নের জবাবে ওই চালক বলেন, “মরার ভয় করে আমরা সড়কে নামিনি। ঘরে বসে থাকলে কেউ এক পেট খাওয়াবে না। পরিবারের মুখে ভাত তুলে দেওয়ার জন্য হরতাল-অবরোধ চলছে। এই চিন্তা করে লাভ নেই।”

জানতে চাইলে সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, “আজ রাস্তার যে পরিস্থিতি, তাতে মনে হচ্ছে কোনো অবরোধ নেই। আল্লাহর রহমতে সব জায়গার গাড়ি যাচ্ছে। আপনি বলতে পারেন আজকের দিনের পরিস্থিতি একেবারে স্বাভাবিক দিনের মতোই।”

এদিকে অবরোধে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা।

কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ‘শেকড়ের টানে বাড়ির পানে’ ছুটতে ব্যস্ত সাধারণ যাত্রীরা। টিকিট কাউন্টার থেকে শুরু করে স্টেশনের প্লাটফর্মে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। সাধারণ যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে নেওয়া হয়েছে সব রকমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিভিল পোশাকে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) এক সদস্য সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “স্বাভাবিক দিনের মতো আজও স্টেশনে যাত্রীদের চাপ সকাল থেকেই বেশি। যাত্রীরা নির্বিঘ্নে রেলপথে যাত্রা করছেন। তাদের নিরাপত্তায় আমরা সব সময় মাঠে প্রস্তুত আছি।”

Link copied!