• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার ভেতরেই শুরু মাহে রমজান


জাহিদ রাকিব
প্রকাশিত: মার্চ ২৪, ২০২৩, ০৩:০৮ পিএম
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার ভেতরেই শুরু মাহে রমজান

বিশ্বের মুসলমানদের কাছে রহমত, বরকত আর নাজাতের মাস হিসেবে শুরু হয়েছে মাহে রমজান। মাহে রমজান এমন এক সময়ে শুরু হলো, যখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কবলে বিশ্ব, স্বস্তিতে নেই বাংলাদেশও। রমজান মাস আসার অনেক আগে থেকেই দ্রব্যমূল্য নাগালের বাইরে চলে গেছে সাধারণ মানুষের। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতে সরকার থেকে দফায় দফায় তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন জ্বালানি উপকরণের দাম বাড়ানো হয়েছে।

এদিকে রমজান মাসে পৃথিবীজুড়ে যেখানে দাম কমানোর প্রতিযোগিতা হয়, সেখানে বাংলাদেশে প্রতিযোগিতা হয় নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে। প্রতিবছরের মতো এবারও রমজান মাসকে সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজি লক্ষ করা যাচ্ছে বলে মত অর্থনীতিবিদদের। অভিযোগ উঠেছে, রমজান শুরুর দুই মাস আগ থেকেই বাজারে নিত্যপণ্যের দাম পরিকল্পিতভাবে বাড়ানো হয়েছে, যাতে রমজানে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে অভিযোগ করার কোনো সুযোগ না থাকে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ড. আজম খান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “প্রতিবছরই রোজার এক দেড় মাস আগে থেকে আমাদের কর্তাব্যক্তিরা জোর গলায় বলতে থাকেন সেই একই বুলি—প্রয়োজনীয় সব পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত আছে। এবার কোনোভাবেই কোনো অসাধু চক্র অহেতুক দাম বাড়াতে পারবেন না। কিন্তু এসব বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কর্তাদের বক্তব্য এবং অস্বাভাবিক দাম বাড়ানো দুটোই চলতে থাকে সমান্তরালে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।”

ড. আজম খানের মতে, “বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী ৪৭ নিত্যপণ্যের মধ্যে ২৬টি পণ্যের দাম বেড়েছে। ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। একে অস্বস্তিকর বা অতিরিক্ত নয় বলছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী। অথচ তিনিই গত মাসে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়ার পর বলেছিলেন, সাধারণ মানুষের জন্য এটি চাপ নয়। দ্রব্যমূল্যর এমন অসনীয় চাপ নিয়ে এবার শুরু হয়ে পবিত্র মাহে রমজান।”

বাংলাদেশের সঙ্গে অন্য দেশের তুলনা টেনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আইরিন সুলতানা বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রগুলোতে রমজানের মাহাত্ম্য ও পবিত্রতা রক্ষায় এ সময়ে খাদ্যদ্রব্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ প্রতিটা জিনিসের দাম নাগালে থাকলেও বাংলাদেশের চিত্র পুরোই উল্টো। প্রতিবছর রমজানকে কেন্দ্র করে একশ্রেণির অসাধু, মুনাফালোভী বিক্রেতা নিত্যপ্রয়োজনীয় ও রমজানের চাহিদা উপোযোগী পণ্য যেমন আটা, ময়দা, পেঁয়াজ, রসুন, চাল, তেল, চিনি, বেসন, খেজুর, ছোলা, মুড়ি ইত্যাদিতে আকাশচুম্বী দাম হাঁকায়।”

আইরিন সুলতানা আরও বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই নিত্যপণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বগতিতে স্বল্প বেতনের পেশাজীবী, শ্রমজীবীরা সংকটে রয়েছেন। মধ্যবিত্ত পরিবারে নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার শেষ নেই। বর্তমান বাজেটে কাটছাঁট করেও যারা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন, তারা রমজানের অতিরিক্ত খরচ কিভাবে মেটাবেন তা নিয়ে এখন অনেকেই দুশ্চিন্তায় ভুগছেন।”

সুলতানা মনে করেন বিশ্ব অর্থনীতির মন্দাভাব কাউকেই ছাড় দেয়নি, এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। তিনি বলেন, “দুশ্চিন্তায় স্বাভাবিকভাবে সাধারণ মানুষের ওপর এক ধরনের প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের প্রভাব বেশি পড়বে। কারণ রোজায় উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তদের সহায়তার মাধ্যমে নিম্নবিত্তরা কিছু সহায়তা পেয়ে থাকে। কিন্তু এবার তাঁর ব্যতিক্রম হতে পারে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপে এবার চাপে আছে সবাই। ফলে এবারের রমজানে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা হিমশিম খাবে।”

সামাজিক দ্রব্যমূল্যর অস্বাভাবিক দামের চাপ কমাতে সরকারি সংস্থাগুলোর অদক্ষতা ও সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেন আইরিন সুলতানা। ক্ষুদ্র ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকটের মাধ্যমে বাজারকে যেন অস্থিতিশীল করতে না পারে সে ব্যাপারে মজুতদারদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত, অসাধু চক্র চিহ্নিত করে শাস্তি প্রদান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নিয়মিত তদারকি, সিন্ডিকেট ভাঙতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় মুফতি মুহাম্মদ কাফীলুদ্দীন সরকার সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “মাহে রমজানের সিয়াম সাধনায় রোজাদার ব্যক্তির মধ্যে কেবল আল্লাহভীতিই সৃষ্টি হয় না, বরং তার মধ্যে মানবিক গুণগুলোও বিকশিত হয়। রোজার সফলতা কেবল উপবাসেই নয়, বরং এর সফলতা হলো, রোজাদারের মধ্যে মানবিক গুণগুলো তেজোদীপ্ত করে তোলা। মানুষ সৃষ্টির সেরা বটে, কিন্তু অনেক সময় অমানবিক হয়ে যায়। সে এ জমিনে আল্লাহর খলিফা-প্রতিনিধি হওয়া সত্ত্বে সৃষ্টির প্রতি তার কী কী কর্তব্য রয়েছে তা পালনে সে উদাসীন হয়ে যায়। মানবিকতা হলো, আল্লাহর সৃষ্টিকে ভালোবাসা, তার জন্য দরদী হওয়া, তার সুখে-দুঃখে সুখী এবং দুঃখী হওয়া এবং মানবজীবন থেকে দুর্দশা লাঘবে সাধ্যমত চেষ্টা করা। পরের দুঃখে কাতর, কোমল হৃদয় এবং দয়ালু হওয়া। মানবতা নিয়ে কারো পাশে অবস্থান করা। মানবিক বা মানবিকতার বিপরীত শব্দ হলো, পাশবিক বা পাশবিকতা।”

রোজার মাসে ব্যবসায়ীদের আরও মানবিক হওয়ার আহ্বান জানান এই মুফতি।

Link copied!