“বাজারে সব জিনিসের দাম বেশি। শেষ কবে ফল কিনে খেয়েছি, তা মনে নেই। মাছ-মাংস কিনে খেতে পারি না। রিকশা চালিয়ে যে টাকা আয় করি, তা দিয়ে কোনোরকম একটু শাক, ভাত হলেই হয়ে যায়। এতে পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয় না।”
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এই কথাগুলো বলছিলেন আব্দুল আলিম নামে এক রিকশাচালক।
শুধু আব্দুল আলিম নয়। বৃদ্ধ রিকশাচালক নুরুল ইসলাম, পায়ে হেঁটে পান-সিগারেট বিক্রি করা মালেক এবং হাতের চুরি বিক্রি করা শেফালি খাতুনের কথাগুলোও একই রকম। তাদের সবার কথাতে একটা মিল রয়েছে, তা হলো, শেষ কবে পুষ্টিকর খাবার কিনেছি, মনে নেই।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কথা হয় তাদের সঙ্গে। তাদের দৈনিক আয় ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা। একটি পরিবারের জন্য এই অর্থ দৈনিক পুষ্টি চাহিদা পূরণে পর্যাপ্ত নয় বলে দাবি তাদের। সবার অভিযোগ নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দাম। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির রাশ টানতে না পারায় নিম্ন আয়ের এসব ক্রেতাদের পণ্য কিনতে গিয়ে দামে-দামে যেন দম থেমে যায়। এতে পুষ্টিকর খাবার ভুলে গেছেন তারা। অনেকেই হারিয়ে ফেলেছেন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। আক্রান্ত হচ্ছেন নানা রোগে। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় বের করতে সরকারের সদিচ্ছা কামনা করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
শাহবাগ এলাকায় কথা হয় বৃদ্ধ রিকশাচালক নুরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, “পাঁচ-৬শ’ টাকা আয় করে মাছ মাংস কিনে খেতে পারব না। আমাদের বাঁচার কোনো পথ নেই। অসুখ হলে এক থেকে দুই মাস ওষুধ খেতে হয়। এখনো শরীরে রোগ লেগেই আছে। ওভাবেই গাড়ি চালাচ্ছি। আমাদের মতো লোকদের দেখার মানুষ নেই।”
পায়ে হেঁটে পান-সিগারেট বিক্রি করা মালেক বলেন, “আমার বাড়ি ময়মনসিংহ। ঢাকায় এসে ফেরি করে পান সিগারেট বিক্রি করি। যখন দেশের বাড়িতে যাই তখনই ফল কিনি। কিন্তু এখানে থাকলে খাওয়া হয় না। ভাত-চাল কেনার টাকাই হয় না। যে জিনিসপত্রের দাম। এতে পুষ্টির চাহিদা পূরণ না হলেও কিছু করার নেই।”
হাতের চুরি বিক্রি করা শেফালি খাতুন বলেন, “বাচ্চাটার ৬ মাস বয়স। বুকের দুধ ছাড়া, ভালো পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে পারি না। কীভাবে খাওয়াব? এখন বাজারের সব জিনিস ধনীদের জন্য। গরিবদের জন্য বাজার নাই।”
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, “একজন মানুষকে বেঁচে থাকলে হলে তাকে খাবারও খেতে হবে। আর একজন খেটে খাওয়া মানুষ অর্থাৎ যিনি বেশি পরিশ্রম করেন, তাকে অবশ্যই ২২শ’ থেকে ২৪শ’ কিলো ক্যালরি খাবার খেতে হবে। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে তা অনেকাংশই সম্ভব হচ্ছে না। আমি মনে করি, মানুষ পুষ্টিকর খাবার খেতে না পারলে, বেশি বেশি রোগে আক্রান্ত হবেন। এতে স্বাস্থ্য খাতে অতিরিক্ত ব্যয় হবে। কাজেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির দিকে নজর বাড়াতে হবে।”