• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

সংসদ উপনেতা হচ্ছেন মতিয়া চৌধুরী


সফিকুল ইসলাম
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২৩, ১২:১৫ পিএম
সংসদ উপনেতা হচ্ছেন মতিয়া চৌধুরী
মতিয়া চৌধুরী (ফাইল ছবি)

একাদশ জাতীয় সংসদের ‘সংসদ উপনেতা’ হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য মতিয়া চৌধুরী। আপাতত তার কোনো বিকল্প ভাবছেন না দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনটি মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা।

বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সংসদ ভবনে টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে। এরপরই স্পিকার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হবে। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে এ কথা জানা গেছে।

দলীয় সূত্র মতে, মতিয়া চৌধুরীকে দলের কেউ কেউ পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবেও বিবেচনা করছিলেন। কিন্তু দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জ্যেষ্ঠ এই নেতাকে সংসদে তাঁর সহযোগী হিসেবেই রাখতে চেয়েছেন। জাতীয় সংসদে সংসদ নেতা অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর পাশে দীর্ঘদিন ছিলেন সাজেদা চৌধুরী। তিনি মারা যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর পাশে বসেন মতিয়া চৌধুরী।

২০০৯ সালের পর টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। সংসদে দলটির এখন নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা। ২০০৯ সাল থেকে মৃত্যুর আগপর্যন্ত সংসদ উপনেতার পদে আসীন ছিলেন সাজেদা চৌধুরী। গত বছর ১২ সেপ্টেম্বর বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদ মারা যান। এর পর থেকেই সংসদ উপনেতার পদটি ফাঁকা রয়েছে।

সংসদে উপনেতার পদটি পূরণ করার আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে কাউকে উপনেতা করেননি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তবে মন্ত্রী পদমর্যাদার এ পদে বরাবরই জ্যেষ্ঠ কোনো নেতাকে বসিয়েছে আওয়ামী লীগ।

এবার সাজেদা চৌধুরী মারা যাওয়ার পরই মতিয়া চৌধুরীর এ পদে আসার বিষয়টি দলে আলোচিত হয়। কিন্তু সংসদের গত অধিবেশনে আলোচনা থাকার পরও এই পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। মতিয়া চৌধুরী পাঁচবারের সংসদ সদস্য। আওয়ামী লীগের সরকারে তিনি তিনবার কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সাল থেকে তিনি মন্ত্রিসভার সদস্য নন।

দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে আছেন মতিয়া চৌধুরী। দলটি বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় তাঁকে রাজপথে আন্দোলন-কর্মসূচিতে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে। মুক্তিযুদ্ধ এবং পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন তিনি। রাজপথের লড়াই-সংগ্রামের কারণে তিনি ‘অগ্নিকন্যা’ হিসেবে পরিচিতি পান। সাদাসিধে জীবনযাপনে অভ্যস্ত মতিয়া চৌধুরীর ছাত্রজীবন থেকে এখনো রাজনীতিই আঁকড়ে আছেন।

সংসদের ২১তম অধিবেশন শুরু হয়েছে ৫ জানুয়ারি। এর আগে সাজেদা চৌধুরী মারা যাওয়ার পর ৩০ অক্টোবর থেকে ৬ নভেম্বর ২০তম অধিবেশন বসে। আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, ২০তম অধিবেশনেই মতিয়া চৌধুরীকে সংসদ উপনেতা করার বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত ছিল। শেষ মুহূর্তে আর তা হয়নি। দলের জ্যেষ্ঠ আরেকজন নেতা সংসদের উপনেতা হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। ঘনিষ্ঠজনদের মাধ্যমে তা দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার কানেও পৌঁছান। এরপরই মতিয়া চৌধুরীকে ওই অধিবেশনেই উপনেতা করার সিদ্ধান্তটি আর এগোয়নি।

আওয়ামী লীগের দুজন কেন্দ্রীয় নেতা ও একজন মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা সংসদের উপনেতা হিসেবে মতিয়া চৌধুরীকেই বেছে নেবেন—এটি ঘনিষ্ঠদের আগেই জানিয়েছিলেন। কিন্তু একজন জ্যেষ্ঠ নেতার মনোভাব জানার পর তিনি কিছুটা সময় নেন। এবারের অধিবেশনে মতিয়া চৌধুরীকে সংসদ উপনেতা করার পর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন প্রধানমন্ত্রী।

দলীয় সূত্রে আরও জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা সাম্প্রতিক সময়ে কিছু কর্মসূচিতে বেশ মমতায় ও শ্রদ্ধায় মতিয়া চৌধুরীকে কাছে টানেন। সর্বশেষ মেট্রোরেলের উদ্বোধনের পর ট্রেনে চড়ার সময় প্রথমে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানাকে পাশে বসিয়েছিলেন। পরে মতিয়া চৌধুরী আসার পর মেট্রোরেলে তাঁকে পাশে নিয়ে বসান প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি মতিয়া চৌধুরীর প্রতি নিজের সন্তুষ্টির কথা দলের নেতাদের কাছেও প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

সংসদ উপনেতার পদে সংসদের ভোটাভুটির প্রয়োজন হয় না। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী তাঁর অভিপ্রায়ের কথা স্পিকারের কাছে প্রকাশ করেন। এরপর স্পিকার সেটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠান। প্রজ্ঞাপন হলে সংসদ উপনেতার শপথ নিতে হয় না। তবে সংসদ উপনেতা মন্ত্রীর মর্যাদা ও সুবিধা উপভোগ করেন।

সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) রাতে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে টুকটাক আলোচনাও হতে পারে। এরপর স্পিকারের কাছে সংসদ নেতার অভিপ্রায় অনুসারে মতিয়া চৌধুরীর নাম উপনেতা হিসেবে প্রস্তাব করা হবে। দু-এক দিনের মধ্যেই প্রজ্ঞাপন হয়ে যেতে পারে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের সঙ্গে। তিনি বলেন, সংসদের চলতি অধিবেশনে সংসদ উপনেতার পদ পূরণ করা হতে পারে। আজকের বৈঠকে বিষয়টি আসতে পারে বলে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, এই মুহূর্তে মতিয়া চৌধুরীই হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবচেয়ে বিশ্বস্ত। তার বিকল্প হিসবে আপাতত অন্য কিছু ভাবা হচ্ছে না।

Link copied!