• ঢাকা
  • সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

ফকিন্নির বাজারেও মূল্যবৃদ্ধির চাপ


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুলাই ১৮, ২০২৩, ০৫:৪২ পিএম
ফকিন্নির বাজারেও মূল্যবৃদ্ধির চাপ
ফাইল ছবি

রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার রেললাইন ঘিরে গড়ে ওঠা নিম্নবিত্তদের ব্যতিক্রমী এক বাজারের নাম ‘ফকিন্নি বাজার’। এই বাজারে যে কোনো পণ্য অন্য সাধারণ বাজারের চেয়ে প্রায় অর্ধেক দামে পাওয়া যেত।

নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন দামের কারণে এখন এই বাজারের ক্রেতা হয়েছেন মধ্যবিত্তরাও। কিছুটা কম মূল্যে পাওয়ার আশায় নিম্নবিত্তদের পাশাপাশি এই বাজারে ছুটে আসছে এখন মধ্যবিত্তরা। 

দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো ফকিন্নির বাজারেও এখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতির চাপ পড়েছে সাধারণ ক্রেতাদের ওপর। এই বাজারে একমাসের ব্যবধানে কেজি প্রতি প্রায় সব মাছের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৫০ টাকা। একইরকম বেড়েছে পেঁয়াজ, মরিচ, ও সব্জির দাম।

মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) সরজমিনে দেখা যায়, এই বাজারেও সব পণ্যের দাম বেড়েছে লাগামহীনভাবে।

‍‍`বাসা একটু দূরেই। তবু এখানেই বাজার করতে আসি। দাম একটু কমে পাওয়া যায় বলে। শাক সবজি সবসময় ভাল না থাকলেও আমাদের মত নিম্নবিত্তদের জন্য এ বাজার খুব উপকারী। তবে দাম এখন একটু বেশি তারপরও নিতে হয়, নইলে তো অন্যান্য বাজার থেকে আরো বেশি দামে কিনতে হবে। এভাবেই বলছিলেন ফকিন্নি বাজারে আসা ক্রেতা সুবিনয় (ছদ্ম নাম)।

দাম বৃদ্ধির কথা স্বীকার করেন বাজারের দীর্ঘদিনের মাছ ব্যবসায়ী আবুল হাসেমও। তিনি বলেন, “এখন তো সব জিনিসের দামই বেশি। আমরাও তো কিনে আনি। কমে না কিনতে পারলে কম দামে তো বিক্রি করা যায় না। সব কিছুরই দাম এখন বেশি।”

কাটা পেঁপে, চিচিঙ্গা, কচু নিয়ে বসে আছেন একজন সবজি বিক্রেতা দিদার (ছদ্মনাম)। তিনি ১০ টাকা ভাগা বিক্রি করছেন এসব সবজি। তিনি বলেন, “কারওয়ান বাজারে ফেলে দেওয়া সবজি কুড়িয়ে এনে পচা অংশ কেটে বিক্রি করতাম। এখন দাম বেশি তাই পচা সব্জিও কেউ ফেলে না, সব সময় কুড়িয়ে আনতে পারি না, আমাদেরও কিনে আনতে হচ্ছে। সেজন্য দাম একটু বেশিই।”

গতমাসে সিলভার কাপ মাছ কেজি প্রতি বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়  যা আজকে (মঙ্গলবার) বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায়। একইরকম পাঙ্গাস ছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি। অথচ এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে। ছোট রুই মাছ এক মাস আগেও ২৪০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও বর্তমানে কেজি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা। এমনকি ছোট মাছ যেটা এক মাস আগেও বিক্রি হত ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা সেটার কেজি এখন ২০০ টাকা। তবে অপরিবর্তিত আছে তেলাপিয়া মাছের দাম। এই বাজারে তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা কেজি দরে।

মাসের ব্যবধানে দামের প্রভাব পড়েছে শাক সব্জিতেও। কিছুদিন আগেও পুইশাক বিক্রি হতো ১০ টাকা আটি যা বর্তমানে ১৫ থেকে ২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। যা অন্য বাজারে ৩৫ টাকা। মিষ্টি কুমড়ো পিস প্রতি বিক্রি হতো ১৫ টাকা যার বর্তমান মূল্য ২০ থেকে ৩০ টাকা। কাটা আধাপচা আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি যদিও কিছু দিন আগে ভাল আলু পাওয়া যেত এই দামে। আধাপচা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি। মাস খানেক আগেও যে মরিচ এ বাজারে বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকারও কম মূল্যে সেই মরিচ এখন ২০০ টাকা কেজি। তবে এখান থেকে কেউ চাইলে ১০ টাকার মরিচও নিতে পারবেন। চিচিঙ্গা, কাকরল পাওয়া যেত ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে, তবে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা দরে।

এ বাজারে সব ধরণের মাংস পাওয়া না গেলেও সাদা ব্রয়লার মুরগি পাওয়া যায় যেটা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা কেজিতে। কম মূল্যের এই বাজার নিম্নবিত্তদের কিছুটা স্বস্তি এনে দিলেও তাদের স্বস্থি নেই অন্য পণ্যের বাজারে।

আলম মিয়া নামের এক বিক্রেতা বলেন, “আমরা না হয় একটু কম দামে জিনিস দেই কিন্তু আমাদের চাল-ডালের বাজারে গেলে তো মাথায় হাত। এই ব্যবসা করে তো চলা যায় না। বছরেও গরুর মাংসের দেখা পাই না”

Link copied!