• ঢাকা
  • সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,
ইইউ পর্যবেক্ষকদের মিশন শুরু

নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে গুরুত্ব


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ৯, ২০২৩, ০৪:১৭ পিএম
নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে গুরুত্ব

বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে পৃথিবীর বেশকটি শক্তিধর রাষ্ট্র সাম্প্রতিক তাদের উপদেশ, মতামত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। ওইসব দেশের কূটনীতিকরা সরকারকেও বারবার এ বিষয়ে তাগিদ দিয়ে আসছেন। এই ধারাবাহিকতায় আছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নও। তারাও চায় বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হোক। সেই আলোকে জোটটির ৬ সদস্যের স্বাধীন  বিশেষজ্ঞ নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল রোববার (৯জুলাই) ঢাকা সফরে এসেছেন পর্যবেক্ষণ পরিস্থিতি যাচাই করার জন্য। দলটি ঢাকায় পৌঁছেই তাদের নির্ধারিত কর্মসূচি শুরু করেছেন।

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দলটি তাদের মূল্যায়ন ও মতামত জমা দেবেন ইইউর পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেলর কাছে। পর্যবেক্ষণকারী এই দলের মতামত ইতিবাচক হলে আরও একটি প্রতিনিধি দল পাঠাবে ইইউ। প্রতিনিধি দলের মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে কিনা সে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।

জানা গেছে, দুই সপ্তাহ তারা বাংলাদেশে অবস্থান করে তাদের কর্মসূচি সম্পন্ন করবেন। এ সময় দলটি ঢাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, ও গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। তাদের মতামত ইতিবাচক হলে ইইউ বাংলাদেশের নির্বাচনে তাদের প্রতিনিধিদল পাঠাবেন।

নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে ইইউ’র এ দলটির সফর হওয়ায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তেমন কিছু করার ছিল না। তবে দলটির এবারের ঢাকা মিশনকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে কূটনীতিকরা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বেশ সরব। নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাদের এই সরব অবস্থানকে খাটো করে দেখা ঠিক হবে না। তাছাড়া ইইউ’র এই প্রতিনিধি দল যদি ভালো রিপোর্ট দেয় তাহলেই তারা নির্বাচনে প্রতিনিধি দল পাঠাবে। সেজন্য তাদের এই সফরকে গুরুত্ব না দিয়ে উপায় নেই।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শেষ পর্যন্ত যদি ইইউ নির্বাচনে তাদের পর্যবেক্ষক দল না পাঠায়, তাহলে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এ জন্য প্রাথমিক যে দলটি এসেছে তাদের এই সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ইইউ’র ঢাকা অফিস সূত্র জানায়, মিশনের কর্মপরিধি, পরিকল্পনা, বাজেট, লজিস্টিক ও নিরাপতআতার বিষয়টি মূল্যায়ন করবে। দলটি বাংলাদেশে অবস্থানকালে সরকারে প্রতিনিধি, নির্বাচন সঙশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা বাহিনীর কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন।

এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, শেষ পর্যন্ত ইইউ’র চূড়ান্ত দল যদি বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে না আসে তাহলে বাংলাদেশের অনেক ক্ষতি হবে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে এ কথা বলা যাবে না। সুতারাং তাদের এ সফর বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

এদিকে শনিবার এক অনুষ্ঠানে পরররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এম আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষক আসতে চাইলে ভালো। কিন্তু না এলে আমরা পরোয়া করি না। মোমেন ‘নির্বাচনে পর্যবেক্ষক না এলেও সেটি দেশের ক্ষতির কারণ হবে না’ বলে মন্তব্য করে বলেন, ‘দুনিয়ার বড় বড় দেশে নির্বাচন দেখার জন্য কোনো পর্যবেক্ষক যায় না। আমাদের দেশে পর্যবেক্ষক এলো কি এলো না, এতে কিছু যায় আসে? বিদেশি পর্যবেক্ষক যদি আসতে চায়, তবে আমাদের আপত্তি নেই।’ তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে একটি সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে বিদেশিদের এনে এনে নির্বাচন দেখানো। আমার মতে, এটি ভবিষ্যতে বন্ধ করা দরকার। আমাদের দেশে অনেক বাড়তি কাজ হচ্ছে এবং এটি বন্ধ করা উচিত।’

এদিকে, ইইউর বিশেষজ্ঞ দলের ঢাকা পা ফেলার কয়েক ঘণ্টা আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জ্যেষ্ঠ এক কূটনীতিক বলেন, নির্বাচন নিয়ে বিদেশিরা খুব নজর রাখছে। পশ্চিমারা প্রতিনিয়ত বক্তব্যও দিচ্ছে। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার জন্য হলেও আমাদের বিদেশি পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানানো উচিত। আমাদের যারা নীতিনির্ধারক আছেন তাদের হিসেব করে কথা বলা দরকার।

সাবেক পররাষ্ট্রসচিব তৌহিদ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ইইউ অনেক দিন ধরে বাংলাদেশ ইস্যুতে সরব। তারা যেসব বিষয়ে অসংগতি দেখছে, কথা বলছে, ইদানিং যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু খুব সরব, সেক্ষেত্রে আমাদের তাদের পালসটা ধরতে হবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র কোনো সিদ্ধান্ত নিলে ইইউ কিন্তু তাদের পক্ষেই মত দেবে।’

 

Link copied!