• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

আনিসুল হক সড়ক দখলমুক্ত রাখা নিয়ে সংশয়!


জাহিদ রাকিব
প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২৩, ০৯:৫৯ পিএম
আনিসুল হক সড়ক দখলমুক্ত রাখা নিয়ে সংশয়!

তেজগাঁও প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক সড়কের উচ্ছেদ অভিযানের পর থেকে এখন পর্যন্ত নির্বিগ্নে চলাচল করছেন সাধারণ মানুষ। আগে এই সড়কের পুরোটা থাকত ট্রাকের দখলে। মাঝে মধ্যে শৃঙ্খলা ফেরাতে সিটি করপোরেশনের চলত উচ্ছেদ অভিযান। এসব অভিযানের কয়েক ঘণ্টা যেতে না যেতেই তা আবার দখল হয়ে যেত। কিন্তু এবার তা আর দেখা যাচ্ছে না।  

সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম সড়কটিতে উচ্ছেদ অভিযানে এসে বলেন, “মেয়র আনিসুল হক সড়কে টম অ্যান্ড জেরি খেলা চলছে। আমি আসছি, তারা ট্রাক নিয়ে চলে যাচ্ছে। পুলিশ আসছে, তারা ট্রাক নিয়ে চলে যাচ্ছে। পুলিশ চলে যাচ্ছে, তারা আবার আসছে।”

গত ২২ ফেব্রুয়ারি উচ্ছেদ অভিযানে যেয়ে এই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাক উচ্ছেদে ৯ সদস্যের কমিটি করে দেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। এরপর থেকে সোমবার (১৩ মার্চ) পর্যন্ত সড়কে রয়েছে পূর্ণ শৃঙ্খলা। কিন্তু সাধারণ মানুষের অভিযোগ, এটি কতদিন ধরে রাখা যাবে তা নিয়ে সংশয় আছে।

সড়কের পাশে থাকা ট্রাকস্ট্যান্ড সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এই কমিটি কাজ করছে না। শুধু শ্রমিক সংগঠনের চেষ্টায় এটি দখলমুক্ত আছে। তবে সবাই দায়িত্ব পালন না করলে এই রাস্তা দখলমুক্ত রাখা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছে কমিটির কয়েকজন সদস্য।

সরেজমিনে দেখা যায়, তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড সড়কের দুই পাশে দীর্ঘ সময় নিয়ে কোনো ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যান দাঁড়ায়নি। কয়েকজন ড্রাইভারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেয়র আসার পর থেকে এখানে আর ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকছে না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ ট্রাক চালক শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তালুকদার মনির সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমরা অনেক কষ্ট করে এই রাস্তা দখলমুক্ত রাখছি। মেয়র এসে আমাদের বললেন, আমরা চাইলেই এই রাস্তা দখলমুক্ত রাখতে পারব। শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু ৯ সদস্যের কমিটির বাকি সদস্যদের সাহায্য পাচ্ছি না। মালিক সমিতি বা পুলিশেরও কোনো সাহায্য পাচ্ছি না।”

এই সড়ক যাতে উচ্ছেদের পর পুনরায় দখল না হতে পারে সেজন্য ৯ সদস্যের কমিটি করেছেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। স্থানীয় কাউন্সিলরের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির দুইজন, বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির দুইজন, বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং পুলিশ বিভাগের প্রতিনিধি নিয়ে এই কমিটি গঠন হয়।

এই কমিটির সদস্যরা সড়ক দখল ও সড়কের শৃঙ্খলার বিষয়টি মনিটরিং করবে।

এদিকে পুলিশ সদস্যরা রাস্তা দখল ঠেকাতে সাহায্য না করলেও ট্রাক ড্রাইভারদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করছে বলে অভিযোগ করেন তালুকদার মনির। রাস্তায় ট্রাক দাঁড়াতে দেখলেই ট্রাকপ্রতি পাঁচশ থেকে দুই হাজার টাকা চাঁদা নিচ্ছে বলে অভিযোগ তার।

তেজগাঁও জোনের ট্রাফিকের এসি স্নেহাশীষ কুমার দাস এই ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির একজন। কমিটি তৈরির তথ্য তার কাছে থাকলেও তাদের কাজ কী, বা তিনি কীভাবে সাহায্য করবেন, তা নিয়ে কোনো তথ্য তার কাছে নেই।

স্নেহাশীষ কুমার সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “পুলিশের বিরুদ্ধে যে চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে, তা পুরো ভিত্তিহীন। ডিএনসিসি মেয়রের নির্দেশে আমরা প্রতিনিয়ত এই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ট্রাক মালিক শ্রমিকদের সঙ্গে কাজ করছি।”

এসি স্নেহাশীষ আরও বলেন, “রাতে মূলত এই রাস্তায় ট্রাকজট শুরু হয়। এটি সরাতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়। প্রতিদিন সকালে তিন ঘণ্টা সময় লাগে এই রাস্তা পরিষ্কার করতে। এরপর বিকালে আরেক দফা চাপ পড়ে। ওই রাস্তায় একজন সার্জেন্ট ও দুইজন কনস্টেবল টহল দেয়। পুলিশ সরে যেতেই ফের রাস্তায় ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যান দাঁড়ায়। লোকবল সংকটের কারণে চব্বিশ ঘণ্টা পুলিশের পক্ষে পাহারা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।”

মনিটরিং কমিটির সভাপতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সফিউল্লাহ শফি বলেন, “আমি এই মুহূর্তে ঢাকার বাইরে আছি। সেখান থেকে ফিরে এই বিষয়ে কথা বলব।”

সড়কের শৃঙ্খলার বিষয়ে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেন, “মেয়রের নেতৃত্বে যে কমিটি তৈরি করা হয়েছে তারা কাজ করবেন। আর যারা এখন নিজ নিজ চেষ্টায় ওই রাস্তা পরিষ্কার রাখছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।”

Link copied!