• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ইফতার মাহফিল না করে সেই টাকা গরিবদের দেবে আ.লীগ


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মার্চ ২৭, ২০২৩, ০৯:৫৭ পিএম
ইফতার মাহফিল না করে সেই টাকা গরিবদের দেবে আ.লীগ

প্রতিবছর নানা পেশাজীবী ও অসহায় এতিমদের সৌজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে ইফতারের আয়োজন করা হয়। তবে অসহায়-ছিন্নমূল ও গরীব মানুষের কথা চিন্তা করে এবার গণভবনে কোনো ইফতারের আয়োজন করা হচ্ছে না। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ইফতার মাহফিল না করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এককথায় বলতে গেলে এবার রমজানে ‘ইফতার রাজনীতি’ থেকে সরে এসেছে টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগ।

দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগ এবার তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত কোথাও ইফতার মাহফিল না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ইফতার আয়োজনের সকল অর্থ অসহায়-গরিব মানুষের মাঝে সহায়তা হিসেবে প্রদান করবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন দলের নেতারা। তারা মনে করছেন, এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে আওয়ামী লীগ সরকারের ইতিবাচক ভাবমূর্তি বাড়াবে। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে এমন তথ্য জানা গেছে।

রমজানে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা রমজান ইফতার পার্টি করতাম। এবার রমজানে আমরা ইফতার পার্টির না করে সব টাকা ও খাদ্য সাধারণ মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা মানুষের জন্য কাজ করি। মানুষের কল্যাণে কাজ করি।”

সোমবার (২৭ মার্চ) স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

দলের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে দরিদ্র মানুষের পাশে থাকাকে বড় কাজ মনে করছে আওয়ামী লীগ। ইফতার মাহফিলগুলো আয়োজনে বেশ বড় অঙ্কের টাকা খরচ হয়। এ অর্থ সাশ্রয় করে তা দরিদ্র পরিবারগুলোর মধ্যে বিতরণ করা হবে।

তারা আরও জানান, কোভিড মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা বাংলাদেশে ভালোভাবেই লেগেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন দল জাঁকজমকপূর্ণ ইফতার আয়োজন করলে তা মানুষকে আরও বিক্ষুব্ধ করে তুলতে পারে, যা সরকারকে বেকায়দায় ফেলবে। বরং মানুষ যদি দেখে ইফতার মাহফিল না করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গরিব মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, সেটা রাজনৈতিকভাবে সুবিধা আনবে।

প্রতিবছর রমজানে দেশের সব রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেই ইফতার মাহফিল আয়োজন করা হয়। ইফতার মাহফিলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, পেশাজীবী সংগঠন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, ধর্মীয় নেতাসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে দাওয়াত দেওয়া হয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে, যা ‘ইফতার রাজনীতি’ নামে পরিচিত। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে এটাই শেষ রমজান হওয়ায় এবারে ইফতার রাজনীতি জমজমাট হবে বলে ধারণা করেছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ইফতার মাহফিল আয়োজন করবেন না বলে সিদ্ধান্ত দেন। এরপর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও সারা দেশে ইফতার মাহফিল আয়োজন না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এর আগে গত শনিবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশের কথা জানান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত তার দলের নেতাকর্মীদের ইফতার মাহফিল আয়োজন না করার নির্দেশ দিয়েছেন।”

ওবায়দুল কাদের বলেন, “পবিত্র রমজান মাসে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলো কোনো ইফতার মাহফিলের আয়োজন করবে না। আমাদের নেত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। সেই টাকা দিয়ে দরিদ্র মানুষের মধ্যে ইফতারসামগ্রী বিতরণ করবেন। আমরা ইফতারের আয়োজন না করে পার্টির পক্ষ থেকে যারা কষ্টে আছেন, যারা গরিব মানুষ, তাদের হাতে খাবার তুলে দেব।”

এ বিষয়ে কথা হয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, “এবার আমাদের ইফতার আয়োজন না করার পেছনের কারণ সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা। এই টাকাটা আমরা গরিব মানুষের জন্য ব্যয় করব। ইফতার আয়োজন না করার পেছনে এটা ছাড়া আর কোনো কারণ নেই।”

একই কথা বলেছেন দলের আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, “১/১১ পরবর্তী সময়ে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসহায় মানুষদের জন্য অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি শুধু প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি হচ্ছেন বাঙালির প্রতিটি মানুষের নয়নের মনি, মমতাময়ী ‘মা’। কারণ মায়ের আচঁল দিয়ে প্রতিটি দুর্যোগ-দুর্ভোগে মানুষের কষ্ট লাগবে তিনি রাত-দিন জেগে থাকেন এবং কাজ করছেন।”

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, “বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল। তাদের নিজস্ব কর্মসূচি গ্রহণ, পালন ও কর্মসূচির ধরণ নির্ধারণ তারাই করবে সেটাই স্বাভাবিক। ধনী মানুষের দল বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাঝে অর্থ, বিত্ত, আভিজাত্যের ছাপ থাকবে সেটি স্বভাবসুলভ। তাদের কাছে দেশ, দেশের গরিব মানুষ ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কোনো অর্থ বহন করে না।”

Link copied!