• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আঁখি আমার নিয়মিত রোগী ছিলেন না : ডা. সংযুক্তা সাহা


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২৩, ১২:০৯ পিএম
আঁখি আমার নিয়মিত রোগী ছিলেন না : ডা. সংযুক্তা সাহা

রাজধানীর গ্রিন রোডের সেন্ট্রাল হসপিটালে ভুল চিকিৎসায় মারা যাওয়া মাহবুবা রহমান আঁখি তার নিয়মিত রোগী ছিলেন না বলে জানিয়েছেন অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. সংযুক্তা সাহা।

মঙ্গলবার (২০ জুন) রাজধানীর পরীবাগের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

ডা. সংযুক্তা সাহা বলেন, “আঁখি আমার রোগী ছিলেন না। তিনি কুমিল্লার একটি স্থানীয় হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়েছেন। এ বছরের মার্চে তিনি দুইবার সেন্ট্রালে এসে আমাকে দেখিয়েছিলেন। নিয়মিত রোগী হতে হলে একজন গর্ভবতীর গর্ভাবস্থার শুরুতে প্রতি মাসে একবার এবং শেষের দিকে দুই সপ্তাহে একবার দেখাতে হয়।”

সংবাদ সম্মেলনে এই চিকিৎসক আরও বলেন, “আঁখি যখন হাসপাতালে, তখন আমি দেশে ছিলাম না। আমার টিকিট ও বোর্ডিং পাস আমার কাছে আছে। আমি ভিডিও কলেও অপারেশন মনিটর করিনি। সব মিথ্যা।”

এ সময় সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অভিযুক্ত করে সংযুক্তা সাহা বলেন, “সেন্ট্রাল হসপিটাল আমার নাম ব্যবহার করে অনিয়ম করেছে। তারা এমন অনিয়ম করবে, আমি ভাবতেও পারিনি।”

ডা. সংযুক্তা সাহা বলেন, “আমাদের সবার জন্য এই অবহেলাজনিত মৃত্যু কাম্য নয়। এই সমস্যাকে এড়িয়ে না গিয়ে প্রকৃত দোষীকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসি। একটি স্বার্থান্বেষী মহল এ ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ও নিজেদের দোষ আড়াল করার জন্য সর্বপন্থা অবলম্বন করছে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে ব্যস্ত। আমি একজন সন্তানের মা, চিকিৎসক এবং এ দেশেরই লোক। দেশ ও সমাজের প্রতি যে দায়বদ্ধতা, তা নিয়েই আজ আমি সত্যতা তুলে ধরতে চাই।”

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “সেন্ট্রাল হাসপাতালে আমি ২০০৭ সাল থেকে কর্মরত। সেন্ট্রাল হাসপাতালে কোনো চিকিৎসকের অধীনে রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়মাবলি নেই। বছরের পর বছর ধরে গড়ে ওঠা প্রচলিত প্র্যাকটিসের ওপর নির্ভর করে কোনো চিকিৎসকের লিখিত সম্মতি না নিয়ে কোনো রোগীই অত্র চিকিৎসকের অধীনে ভর্তি হয় না। আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনিয়ম সাম্রাজ্য রক্ষার ক্ষেত্রে সহজ লক্ষ্যে পরিণত হয়ে গেছি। আমাদের আন্দোলন ছিল অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান করব না, নরমাল ডেলিভারিতে উদ্বুদ্ধ করব। এটাই কি আমাদের অপরাধ?”

গত ৯ জুন প্রসবব্যথা উঠলে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে আঁখিকে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সেই সময় ডা. সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন না। তবু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি আছেন এবং অপারেশন থিয়েটারে কাজ করছেন। একপর্যায়ে আঁখি সেন্সলেস হয়ে যান। এমন অবস্থায় ডেলিভারি করলে হার্টবিট বন্ধ হয়ে আইসিউতে মারা যায় নবজাতকটি। এমন ঘটনার পর আঁখিকে সেন্ট্রাল হাসপাতাল থেকে ল্যাবএইড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

ল্যাবএইডের চিকিৎসকরা জানান, তার শরীরের কিডনি, লিভার, হার্ট এবং অন্য কোনো অংশ কাজ করছিল না। এর মধ্যে ব্রেন স্ট্রোকও করেন আঁখি। তার সঙ্গে রক্তক্ষরণও বন্ধ হচ্ছিল না।

বুধবার (১৪ জুন) ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু এবং মা মৃত্যুঝুঁকিতে পড়ার ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’র একটি মামলা করা হয়। মামলায় ডা. শাহজাদী, ডা. মুনা, ডা. মিলি, সহকারী জমির, এহসান ও হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়। মামলার পর বুধবার রাতেই ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনাকে হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনা দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত পরিদর্শন টিম গত শুক্রবার (১৬ জুন) বিকেলে হাসপাতালটি পরিদর্শন করে। পরে সেন্ট্রাল হাসপাতালে সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে গাইনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহা হাসপাতালটিতে আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা দিতে পারবেন না বলেও জানানো হয়।

Link copied!