• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন

ছেলের মুখে হাসি ফুটিয়ে মেয়র হলেন জায়েদা খাতুন


গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মে ২৬, ২০২৩, ০১:১৪ এএম
ছেলের মুখে হাসি ফুটিয়ে মেয়র হলেন জায়েদা খাতুন

নানা জল্পনা-কল্পনা শেষে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (গাসিক) মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জায়েদা খাতুন। তিনি সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লাকে ১৬ হাজার ১শ ৯৭ ভোটে হারিয়েছেন তিনি। জায়েদা খাতুন মোট ভোট পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট। 

বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাত সোয়া ১টার দিকে বেসরকারিভাবে এই ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

এছাড়া অন্য মেয়র প্রার্থী জাতীয় পার্টির এম এম নিয়াজ উদ্দিন (লাঙ্গল) পেয়েছেন ১৬ হাজার ৩শ ৬২ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলাম (হাতি) ২৩ হাজার ৬৫ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. হারুন-অর-রশীদ (ঘোড়া) ৩ হাজার ৪শ ২৬ ভোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান (হাতপাখা)  ৪৫ হাজার ৩শ ৫২ ভোট, জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ এরশাদ (গোলাপ ফুল) ৭ হাজার ২০৬ ভোট, গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম (মাছ) ১৬ হাজার ৯শ ৭৪ ভোট। 

এর আগে সকাল থেকেই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী আলোচনায় থাকা প্রধান তিন মেয়র প্রার্থী। সকাল ৯টার দিকে টঙ্গীর দারুস সালাম মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট দেন আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খান। এ সময় তিনি বলেন, “অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হচ্ছে। মানুষের যে আগ্রহ তা দেখা যাচ্ছে। অনেকেই অপপ্রচার চালিয়ে ছিল যে মানুষ ভোট দিতে আসবেন না।”

জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ জানিয়ে আজমত উল্লা বলেন, “নতুন আশা নিয়ে ভোটাররা সকাল থেকে অপেক্ষা করছে, লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। আমি আমার সম্মানিত ভোটারদের ধন্যবাদ জানাই। আমি আশা করি আজকের জয় একটি দুর্নীতিমুক্ত সিটি করপোরেশন গড়ার প্রত্যয় নিয়ে জনগণ নিজেই জয়ী হবে।”

সকাল ১০টায় কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিয়ে একই কথা জানিয়েছেন স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী জায়েদা খাতুনও। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু আছে। কিছু কিছু জায়গায় আমাদের এজেন্টকে বের করে দেওয়া হয়েছে। ইনশাআল্লাহ সত্যের বিজয় হবে।”

জায়েদা খাতুন আরও বলেন, “বিভিন্ন কেন্দ্রে আমাদের এজেন্টকে ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। কিছু কিছু কেন্দ্রে এরই মধ্যে আমাদের এজেন্টকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে ভয়-ভীতি দেখিয়ে লাভ হবে না মাঠে নেমেছি শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকব। আমি বিশ্বাস করি, প্রশাসন গাজীপুরবাসীকে একটি সুষ্ঠু ভোট উপহার দেবে। শেষ পর্যন্ত ভোট সুষ্ঠু হলে আমাদের বিজয় নিশ্চিত।”

এ দিকে সকাল ৯টায় শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল কেন্দ্রে ভোট দেন আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি। তিনিও জানান, নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ আছে। রনি বলেন, “কেন্দ্রের ভেতরের পরিবেশ ভালো। এই কেন্দ্রে তার পোলিং এজেন্ট আছে। মোটামুটি ভোটার উপস্থিতি আছে।”

গাসিক নির্বাচনে ৪৮০টি কেন্দ্রে ছিল। এতে মোট ৩৩৪ জন প্রার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে মেয়র পদে ৮ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪৬ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৭৯ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে সাধারণ ওয়ার্ডে একজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

এবারের নির্বাচনে সিটির ৫৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৬৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৪৭ জন, নারী ভোটার ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৮ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছে ১৮ জন।

নির্বাচন উপলক্ষ্যে ৫৭টি ওয়ার্ডে ৪৮০টি ভোটকেন্দ্র ও ৩ হাজার ৪৯৭টি ভোটকক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। গাজীপুর সিটির ধীরাশ্রম জিকে হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ১২০টি কেন্দ্রের, চান্দনা উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড স্কুল থেকে ১১৫টি কেন্দ্রের, দারুস সালাম মাদরাসা থেকে ৫৮টি কেন্দ্রের, আজিম উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ৬৮টি কেন্দ্রের ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১১৯ কেন্দ্রের নির্বাচনী সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া ইভিএম, বুথ কক্ষ নির্মাণের জন্য কাপড়, টিস্যু পেপার, অমোছনীয় কালি, হ্যান্ড সেনিটাইজার, ভোটার তালিকা, ভ্যাসলিন, মখমলের কাপড়, স্ক্রু ড্রাইভার, মাল্টিপ্ল্যাগসহ ৪৬ ধরনের সামগ্রী বিতরণ করা হয়।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (এসবি) আবুল বাশার মো. আতিকুর রহমান জানান, নির্বাচনে ৫ হাজার পুলিশ সদস্য, প্রতিটি কেন্দ্রে ২ জন করে মোট ৯৬০ জন আনসার ব্যাটালিয়ন, প্রতি  কেন্দ্রে ১০ জন করে ৪ হাজার ৮০০ গ্রাম পুলিশ, ৫৭টি ওয়ার্ডে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আনসার সদস্য নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়া নগরীর ৫৭টি ওয়ার্ডে ৫৭ জন ম্যাজিস্ট্রেট এবং ১৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ২০ প্লাটুন বিজিবি ও র‌্যাব মোতায়েন ছিল।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতীকে মেয়র পদে নির্বাচন করছেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান। টেবিল ঘড়ি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন।

আজমত উল্লা ও জায়েদা খাতুন ছাড়াও জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে ‘লাঙ্গল’ প্রতীকে নির্বাচন করছেন এম এম নিয়াজ উদ্দিন। ‘হাতি’ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন সরকার শাহনূর ইসলাম (রনি সরকার)। ‘ঘোড়া’ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন মো. হারুন-অর-রশীদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হয়ে ‘হাতপাখা’ প্রতীকে নির্বাচন করছেন গাজী আতাউর রহমান, জাকের পার্টির সমর্থন নিয়ে ‘গোলাপ ফুল’ প্রতীকে নির্বাচন করছেন মো. রাজু আহাম্মেদ এরশাদ ও গণফ্রন্টের প্রার্থী ‘মাছ’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন আতিকুল ইসলাম। 

Link copied!