বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ড

ঢামেকে ছেলের লাশ খুঁজছেন হাসিনা বেগম


বিজন কুমার
প্রকাশিত: মার্চ ১, ২০২৪, ১২:৫১ পিএম
ঢামেকে ছেলের লাশ খুঁজছেন হাসিনা বেগম
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছেলের লাশ খুঁজছেন হাসিনা বেগম। ছবি : বিজন কুমার

চোখে জল আর কান্নাভরা কণ্ঠ নিয়ে প্রিয় মানুষের খোঁজে আসছেন স্বজনরা। তাদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা। এর মধ্যে মরদেহ শনাক্ত করে আইনি প্রক্রিয়া শেষে স্বজন হারানো বেদনা নিয়ে ঘরে ফিরছেন তারা।

শুক্রবার (১ মার্চ) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের চিত্র এটি। এ সময় জরুরি বিভাগের সামনে কেঁদে কেঁদে সন্তান হারানো কষ্টের কথা আত্মীয়দের বলছিলেন নাজমুলের বাবা নজরুল ইসলাম।

এ সময় ছেলের লাশ খুঁজতে খুঁজতে নাজমুলের মা হাসিনা বেগম আহাজারি করে বলেন, “আমার ছেলে টাকা চাইল, দিলাম। আর ফিরলো না। আমার নাজমুল, আমার নাজমুল চলে গেল...।”

কথা হয় নাজমুলের চাচা মকলেসুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, “গতকাল রাত ৮টায় বন্ধুদের সঙ্গে বাড়ি থেকে বের খাইতে। তারা সকলে ওই ভবনে যায়। এসময় নাজমুল আর তার আরেক বন্ধু ভবনের ৫ তলায় ওঠে। আর বাকিরা যায় তৃতীয় তলায়। ভবনে আগুন লাগলে তার বন্ধুরা নামতে পারলেও তারা দুজন আর নামতে পারেনি।”

তিনি আরও বলেন, “নাজমুলের মরদেহ এখনও শনাক্ত হয়নি। তার বন্ধুর হাতে ঘড়ি ছিল তাই তার পরিবার চিনতে পেরেছে। সে আগে কোনোদিনও ওখানে যায়নি। কাল মনে হয় আজরাইলে তাকে ডেকে নিয়ে গেছে। তার বাবার ইচ্ছা ছিল ইঞ্জিনিয়ার বানাবে। সব পুড়ে ছাই।”

২৫ বছর বয়সী নাজমুল হাসান তার পরিবারসহ রাজধানীর বনশ্রীতে বসবাস করছিলেন। তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্সের শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর বেইলি রোডস্থ সাততলা ভবনে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের মরদেহ মেডিকেল নিয়ে আসা হয়। এরমধ্যেই ছিলেন নাজমুল হাসান।

জেলা প্রশাসক সূত্রে জানা যায়, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মোট ৪৫ জনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। এরপর ভোর ৫টা থেকে মরদেহ পরিচয় শনাক্ত ও হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়। বেলা পৌনে ১২টা পর্যন্ত মোট ৪০টি মরদেহর পরিচয় শনাক্ত হয় এবং হস্তান্তর হয় ৩৫টি মরদেহ।

সূত্রটি আরও জানায়, ২ জনের মরদেহ অতিরিক্ত মাত্রায় পুড়ে যাওয়া তাদের চেনা যাচ্ছে না। আর একজন চিকিৎসাধীন রয়েছে শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড প্লাস্টিক ইনিস্টিউট রয়েছে।

মরদেহর পরিচয় শনাক্ত শেষে সাহবদ্দিন নামের এক ব্যক্তি বলেন, “আমার ভাই আসিফ আর আমি ঢাকা একটা গ্যাসের দোকানে চাকরি করতাম। গতকাল সে ওই ভবনে গ্যাসের বিল তুলতে গিয়ে আটকে যায় পরে আর বের হতে পারেনি। আমাদের ৫ ভাইয়ের মধ্যে সে ছোট। মা অনেক কাঁদছে। কিভাবে বোঝাব, জানি না!”

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এ কে এম হেদায়েতুল ইসলাম সংবাদ প্রকাশ কে বলেন, “মৃতব্যক্তির স্বজনদের আপাতত মরদেহ পরিবহনের খরচ এবং দাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা প্রদান করা হচ্ছে। আর আহত ব্যক্তির ধরণ অনুযায়ী ১০, ১৫ ও ১৫ হাজার করে টাকা দেওয়া হচ্ছে। মরদেহ হস্তান্তর শেষ হলে পূর্ণাঙ্গ পরিচয়ের তালিকা দেওয়া হবে।”

Link copied!