• ঢাকা
  • রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬
ডেঙ্গুর প্রকোপ

১ রোগীর জন্য সরকারি ব্যয় ৫০ হাজার টাকা


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ২৯, ২০২৩, ০৫:০৮ পিএম
১ রোগীর জন্য সরকারি ব্যয় ৫০ হাজার টাকা
ফাইল ছবি

সপ্তাহখানেক আগে ডেঙ্গু জ্বর ধরা পড়ে মাহমুদা আক্তার বৃষ্টির ৬ বছরের ছেলে জুনায়েদের। ডেঙ্গু আক্রান্ত ছেলেকে প্রথমে তিনি বাড়িতেই চিকিৎসা করান। এতে তার খরচ হয় প্রায় ১২ হাজার টাকা। কিন্তু জুনায়েদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউটে (বিএসএইচআই) ভর্তি করা হয়। সেখানে দুদিনেই  চিকিৎসা বাবদ তার খরচ হয়েছে ৭ হাজার টাকা।

মাহমুদা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করেন। স্বামী শফিকুল পেশায় নিরাপত্তাকর্মী। দুজনের মিলিত মাসিক আয় ২০ হাজার টাকা। এমনিতেই বাসা ভাড়া দেওয়ার পর সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। এর মধ্যে ছেলের চিকিৎসা ও যাতায়াতে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। এভাবে আর কতদিন জুনায়েদের চিকিৎসা চালাতে হবে, জানেন না এই দম্পতি।

জানা গেছে, ডেঙ্গু রোগীদের এনএস-১ অ্যান্টিজেন পরীক্ষার খরচ সরকারি হাসপাতালের জন্য ১০০ টাকা এবং বেসরকারি হাসপাতালের জন্য ৩০০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এখন থেকে এটি অব্যাহত থাকবে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন। 

গত ২৭ আগস্ট রাজধানীর শেরাটন হোটেলে ‘ডেঙ্গু মোকাবিলায় করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বলেছেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত একজন রোগীর জন্য সরকারের গড়ে ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন , “সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। চলতি মৌসুমে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ডেঙ্গু চিকিৎসায় ব্যয় করেছে সরকার। দেশের সরকারি হাসপাতালে ৭০ শতাংশ রোগী চিকিৎসা নিয়েছে।”

আর বাকি ৩০ শতাংশ রোগী বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিয়েছে। সাধারণত দুই ধরনের ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। অনেকের প্লাটিলেট ও আইসিইউ প্রয়োজন হয়। আবার অনেকে শুধু ওষুধেই সুস্থ হয়ে যায়।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের দ্বিমত রয়েছে। যেমনটি বলছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রাইভেট সেক্রেটারি (পিএস-১) ডা. অধ্যাপক রাসেল । 

তার কথায়, “ডেঙ্গু রোগীর জন্য প্যারাসিটামল ছাড়া তেমন কোনো ওষুধের প্রয়োজন নেই। সঙ্গে বেশি বেশি তরল খাবার দিতে হবে। ডেঙ্গুতে ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট জরুরি। ডেঙ্গু রোগীদেরে প্লাটিলেট মাত্রা জানতে প্রতিদিনই রক্ত পরীক্ষা করতে হয়। তাই বাসায় থেকে চিকিৎসা নিলেও রক্ত পরীক্ষা ও তরল খাবারে গড়ে ১০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়ে যায়। তবে এ বছর ডেঙ্গু রোগীরা ভাইরাসের একাধিক ভেরিয়েন্টের কারণে দ্রুত শকে চলে যাচ্ছে। তাই অনেক ক্ষেত্রেই বাড়িতে রেখে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে না।”

অনুসন্ধানে জানা যায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা সরকারি হাসপাতালে চিকৎসা নিলেও তাদের ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। আবার বেসরকারি হাসপাতালে এই ব্যয় দুই থেকে তিন গুণ বেশি। রোগীদের প্লাটিলেট দেওয়া বা আইসিইউতে রাখার প্রয়োজন হলে খরচ বেড়ে যায় কয়েকগুন বেশি।

আড়াই বছরের নিলীমা চৌধুরীর ডেঙ্গু চিকিৎসায় শিশু হাসপাতালে ৯ দিনে প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান নিলীমার বাবা রণি চৌধুরী। তিনি বলেন, “প্রতিদিন ৩০০ টাকার সিবিসি টেস্ট, ৭০০ টাকা বেড ভাড়া ও ৫০০-৭০০ টাকার ওষুধ কিনতে হয়। একদিন ২ হাজার ৫০০ টাকার ওষুধ কিনতে হয়েছে।”

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির জানিয়েছেন, দ্বিতীয় বারের মতো আক্রান্ত হওয়ার কারণে এ বছর সিভিয়ারিটি অনেক বেশি। এছাড়া ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত তিন দিনে কমে যায়। তবে হঠাৎ করে আবার ৫ দিনের মাথায় রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যেতে পারে। জ্বর কমে গেলে বা না থাকলে রোগী ভেবে নেয় সুস্থ্য হয়ে গেছি। তখন ঠিকমতো লিকুইড খাবার না খেলে, ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে না রাখলে, রোগী শকে চলে যায় বলে জানালেন ডা. কবির। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে  তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

এ বিষয়ে কথা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (একাডেমী) অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, “ডেঙ্গুর ধরন বুঝে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।” 

খরচ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাধারণ বেড হলে খরচ কম, এসি ক্যাবিন হলে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। আর ডেঙ্গুর ধরন জটিল হলে আইসিইউতে নিতে হলে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা ব্যয় হতে পারে। এছাড়া প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হলে খরচ আরও বেশি হবে বলেন তিনি।

এদিকে এপিডেমিওলজিকাল অ্যান্ড ইকোনমিক বার্ডেন অব ডেঙ্গু ইন ঢাকা, বাংলাদেশ’ শীর্ষক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর গড় খরচ ছিল ২২ হাজার ৩৭৯ টাকা এবং বেসরকারি হাসপাতালে ৪৭ হাজার ২৩০ টাকা।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) বাংলাদেশের একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ ডা. আব্দুর রাজ্জাক সরকার জানান, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ডেঙ্গু চিকিৎসার ব্যয় বহন করা কষ্টসাধ্য, তাদের মোট পরিবারিক আয়ের প্রায় শতকরা ১৩৯ ভাগই খরচ করতে হয়।

Link copied!