• ঢাকা
  • সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

দ্বাদশ নির্বাচনে পাঁচ নির্দেশনা শেখ হাসিনার


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২৪, ১০:০২ পিএম
দ্বাদশ নির্বাচনে পাঁচ নির্দেশনা শেখ হাসিনার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন রোববার (৬ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাঁচ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করা, ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো, জাল ভোট বা ভুয়া ভোট বর্জন, কোথাও প্রশাসন যেন হস্তক্ষেপ না করে এবং নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করা।

শনিবার (৬ জানুয়ারি) আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতৃবৃন্দের কাছে এ বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

দলীয় একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করাই সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের নীতিনির্ধারকদের সুস্পষ্ট পাঁচ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। এই নির্দেশনা মান্য করা না হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভন্ডুলের চক্রান্ত যেকোনো মূল্যে প্রতিরোধ করতে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্বাচন ভন্ডুল করার যে চক্রান্ত এখন চলছে এটা আমাদের যেকোনো মূল্যে প্রতিরোধ করতে হবে, প্রতিহত করতে হবে এবং এদের পরাজিত করতে হবে। এটা একটা নির্দেশনা আছে।”

ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমাদের সভাপতি একাধিকবার এই গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন। বিএনপির নেতৃত্বে যে অগ্নিসংযোগ, অগ্নিসন্ত্রাস, বাস পরিবহনে আগুন এসব নাশকতা চলছে সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায়, প্রায় প্রতিদিনই বাস পোড়াচ্ছে। এসব নাশকতার জবাবে আমাদের নেতাকর্মীরা সারা বাংলাদেশে সতর্ক পাহারায় রয়েছে। তাদের আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে আটটি বিভাগীয় কমিটি আছে তাদের আরও সক্রিয় হয়ে প্রত্যেক বিভাগে, জেলায় গিয়ে এই সতর্ক পাহারার বিষয়টা আরও জোরদার করতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমাদের জেলা সংগঠন, থানা সংগঠন, উপজেলা, ইউনিয়ন তার মানে আমাদের তৃণমূলকে আরও সুসংগঠিত করবে।”

দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া নির্দেশনাগুলো হচ্ছে

নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে হবে : দলের নেতাকর্মীদের সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জানিয়েছেন, যেকোনো মূল্যে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে হবে। কোনো প্রার্থী জয়ী হওয়ার জন্য কারচুপির আশ্রয় নিতে পারবে না, প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতে পারবে না, জাল ভোট দিতে পারবে না। যদি এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং সেটি যদি প্রমাণিত হয় তাহলে তাকে আজীবন দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। এমনকি তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, সে যে দলের প্রার্থী হোক না কেন।

ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে হবে : প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় যেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়েছে সেখানে ভোটার উপস্থিতি যেন বাড়ানো হয়, সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের প্রাক্কালে সমস্ত প্রার্থীদের কাছে এক বার্তায় আওয়ামী লীগ সভাপতি জানিয়েছেন যে, প্রার্থীদের প্রধান কাজ হলো ভোটারদের অভয় দেওয়া, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করা এবং বেশিরভাগ ভোটার যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে ভোটকেন্দ্রে যায় সেদিকে নজর রাখা। একইসঙ্গে বিএনপির ডাকা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল মোকাবিলা করে ভোটের মাঠ উৎসবমুখর রাখতে চায় দলটি। ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা যেন না যান, সে জন্য জনগণকে উৎসাহিত করতে হবে। একইসঙ্গে বিএনপির ডাকা হরতালে যেন কোনো ধরনের সহিংস ঘটনা না ঘটে তার জন্য দল, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের ভোটের মাঠে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছে দলটির হাইকমান্ড।

জাল ভোট বা ভুয়া ভোট বর্জন : কোনো অবস্থাতেই কোনো প্রার্থী যেন জাল ভোট না দেয়, কোনো ভুয়া ভোট না দেয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। আওয়ামী লীগ সরকার এবার অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চায়। যার মাধ্যমে সারা বিশ্ব যেন বুঝতে পারে যে আওয়ামী লীগ সরকার অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

কোথাও প্রশাসন যেন হস্তক্ষেপ না করে : আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা দিয়েছেন যে, প্রশাসনকে নির্বাচনে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ এবং নির্মোহভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কোথাও যেন কোনো প্রার্থীর পক্ষে তারা পক্ষপাতিত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন না করে সেটি দেখভাল করতে হবে এবং এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে যেখানে প্রশাসনের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত থাকে।

নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করা : অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে, নির্বাচন কমিশন স্বীয় বুদ্ধি বিবেচনা করে যে ধরনের সিদ্ধান্ত নেবে সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে। কাজেই নির্বাচন কমিশনই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী নির্বাচন সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে। তাই নির্বাচন কমিশনের কোনো বিষয় হস্তক্ষেপ করা যাবে না। নির্বাচন কমিশনকে বাধা দেওয়া যাবে না এবং নির্বাচন কমিশনকে অসহযোগিতা করা যাবে না।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, “৭ জানুয়ারি নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াত হরতালের নামে কোনো রকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করলে আমরাও বসে থাকব না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের প্রতিহত করা হবে। আমরাও মাঠে আছি।”

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, “আমরা সর্বস্তরের জনগণের কাছে ইতোমধ্যে আহ্বান রেখেছি, যেখানে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হবে, সেখানেই ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। বিএনপি যদি হরতালের নামে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে চায় তবে তা কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে আছে। তারা ব্যবস্থা নেবে। আর আমাদের নেতাকর্মীরাও মাঠে আছে। যারা নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Link copied!