• ঢাকা
  • সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

দ্বাদশের নৌকায় চড়তে চান সবাই


সফিকুল ইসলাম
প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২৩, ০৫:৫৪ পিএম
দ্বাদশের নৌকায় চড়তে চান সবাই
ছবি : সংগৃহীত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি হতে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন সাবেক আমলা, পুলিশ কর্মকর্তা, চিত্রতারকা, ক্রিকেটার এবং দলের সরাসরি কোনো পদে নেই, এমন ব্যক্তিরা। শুধু তা-ই নয়, দ্বাদশ নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে ইতিমধ্যে এসব ব্যক্তি দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ এবং জমাও দিয়েছেন।

তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি, অভিনেতা সিদ্দিকুর রহমান, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ আরশাদ আদনান, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া আইনজীবী সায়েদুল হক ওরফে সুমন ও সাংবাদিক নঈম নিজাম।

শনিবার (১৮ নভেম্বর) থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয়েছে। ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়া যাবে বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) পর্যন্ত।

দলীয় সূত্রমতে, আগামী দুই দিনে আরও অনেক চিত্রতারকা দলীয় ফরম সংগ্রহ করার বিষয়ে যোগাযোগ করছেন। সরাসরি আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই, এমন অনেক ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীও মনোনয়ন পেতে তৎপর। ইতিমধ্যে আগ্রহী ব্যক্তিদের নামের তালিকায় চিত্রনায়ক ফেরদৌস, আলমগীর, চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে তারকা ও হঠাৎ করে আগ্রহ দেখানো ব্যক্তিদের মধ্যে সাকিব আল হাসানের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা বেশি।

এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রির প্রথম দিনেই সাকিব আল হাসান মাগুরা-১ ও ২ এবং ঢাকা-১০ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। তবে তিনি নিজে নন, প্রতিনিধির মাধ্যমে ফরম কেনেন। সাকিব বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তাই তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

নৌকার মনোনয়ন ফরম কিনলেন মাহি
দলীয় কোনো পদে না থাকলেও দ্বাদশ নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন আলোচিত চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন এবং ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ইতিমধ্যে জমা দিয়েছেন। তিনি প্রথম দিনই মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে বিএনপির তৎকালীন সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের উপনির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে মাহিয়া মাহি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে পাননি।

এ বিষয়ে মাহিয়া মাহি জানান, এলাকার মানুষ চায় বলে তিনি মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। এখন দলের বিবেচনার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন।

নৌকার মনোনয়ন চান রাষ্ট্রপতি-পুত্র
রোববার (১৯ নভেম্বর) নৌকার প্রতীক পেতে পাবনা-৫ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ আরশাদ আদনান। এই আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স। তবে রাষ্ট্রপতির ছেলের মনোনয়ন চেয়ে দৌড়ঝাঁপ ভালোভাবে নেয়নি জেলা আওয়ামী লীগ। 

এ বিষয়ে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার কাছে নালিশও দিয়েছেন জেলার নেতারা। জেলার সাধারণ সম্পাদককে বাদ দিয়ে আরশাদ আদনানকে মনোনয়ন দিলে বড় চমকই হবে।

মনোনয়ন চান সাংবাদিক নঈম নিজাম
কুমিল্লা-১০ আসন থেকে দ্বাদশ নির্বাচন করার লক্ষ্যে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

এ বিষয়ে নঈম নিজাম জানান, তিনি এলাকার মানুষের চাওয়া মেনে ফরম সংগ্রহ করেছেন। বাকিটা দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত।

দ্বাদশ নির্বাচনে এমপি হতে চান আমলারা
এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকায় উঠতে চান বেশ কয়েকজন সাবেক আমলা। ইতিমধ্যে তারা নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায় মনোনয়ন পেতে মাঠ-ঘাট চষে বেড়িয়েছেন। এবার দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ এবং জমাও দিয়েছেন অনেকে। পাশাপাশি কেউ কেউ দলের হাইকমান্ড নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন, খুলনা-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ড. প্রশান্ত কুমার রায়।

দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় জনসংযোগ চালাচ্ছেন তিনি। বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ভোটার ও এলাকাবাসীর খোঁজখবর নেওয়া থেকে শুরু করে প্রচারণা চালাচ্ছেন সাবেক এ সচিব।

ভোলা- ৪ আসন থেকে ভোটে অংশ নিতে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন সাবেক সচিব মেজবাহ উদ্দিন। চরফ্যাশন উপজেলার সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে নানাভাবে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছি) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কিনেছেন সাবেক সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন এবং জমা দিয়েছেন সাবেক সচিব মো. জিল্লার রহমান। অবসর নেওয়ার পর ‘ফুলটাইম’ রাজনীতিক হিসেবে কাজ শুরু করেন জিল্লার রহমান। তার শিবগঞ্জ বাজারের বাসভবনে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের যাতায়াত।

চাঁদপুর-১ (কচুয়া) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কিনেছেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ও সচিব মো. গোলাম হোসেন।

নড়াইল-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কিনেছেন সাবেক সিনিয়র সচিব খাজা মিয়া।

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী কুমিল্লা-১১ আসন থেকে মনোনয়ন কিনেছেন।

খুলনা-১ আসন থেকে মনোনয়ন কিনেছেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ড. প্রশান্ত কুমার রায়।

এ ছাড়া সাবেক অনেক আমলা এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কিনেছেন। তাদেও লক্ষ্য একটাই আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি হওয়া।

নৌকার টিকিটে এমপি হতে চান সাবেক পুলিশ কর্মকর্তরা
সাবেক আমলাদের পাশাপাশি এবার নৌকায় চড়তে চান অন্তত দুই ডজন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে সাবেক আইজিপি, অতিরিক্ত আইজিপি ও সাবেক এসপি রয়েছেন। তারা সবাই ইতিমধ্যে নৌকায় চড়তে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।

কিশোরগঞ্জ-২ আসনের বর্তমান এমপি ও সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ আবারও মনোনয়ন চান দলের। তবে, তার তার প্রতিদ্বন্দ্বীও সাবেক আরেক পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি হলেন আবদুল কাহার আকন্দ। যিনি পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, জেলহত্যা মামলা, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলা, বিডিআর বিদ্রোহ মামলাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে আলোচিত তিনি।

আলোচিত এই পুলিশ অফিসার শনিবার দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ এবং সোমবার (২০ নভেম্বর) বেলা ১১টায় জমা দিয়েছেন। এ সময় তিনি ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিশাল নিজ এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বিশাল মোডাউন দেন।

শরীয়তপুর-১ আসন থেকে মনোনয়ন কিনেছেন সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক।

জামালপুর-১ আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন কিনেছেন সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেসুর রহমান।

বিএনপির আমলে চাকরি হারানো মুক্তিযোদ্ধা বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় কর্মরত সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি আব্দুর রহিমও নৌকার মনোনয়ন চান। ময়মনসিংহ-৮ আসনে গতবারও মনোনয়ন চেয়ে জোটের কারণে বঞ্চিত হন তিনি। বিএনপি-জামায়াত সরকার ২০০১ সালে তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নিরাপত্তায় গঠিত তিন সদস্যবিশিষ্ট বিশেষ টিমে যোগ দেন তিনি।

বগুড়া-৫ আসনের বর্তমান এমপি মো. হাবিবর রহমানও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা। বিএনপির আমলে চাকরি হারান সাবেক এই এসপি। রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকা হাবিবর রহমান এবারও মনোনয়ন চান।

সাতক্ষীরা-৪ আসনে নৌকার মনোনয়ন কিনেছেন সাবেক এএসপি শেখ আতাউর রহমান। তিনি সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য এবং কালীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ ও ওলামা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা।

সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি আব্দুর রহিম খান বাগেরহাট-৪ আসন থেকে মনোনয়ন কিনেছেন। এছাড়া সাবেক অতিরিক্ত আইজিপিদের মধ্যে নুরুল আলম, আলী ইমাম চৌধুরী, খন্দকার মোজাম্মেল হক, গোলাম মোস্তফা, আবদুল মান্নান, সাবেক ডিআইজি দেওয়ান হাবিবুল্লাহ, সফিক উল্লাহ, খন্দকার সাহেব আলী, কাজী নজরুল ইসলাম, মোখলেসুর রহমান ও শাহ আলম সিকদারসহ অন্তত দুই ডজন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কিনেছেন।

মনোনয়ন চান সুপ্রিম কোর্টের ৪০ আইনজীবী
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমলা-পুলিশ এবং চিত্রনায়িকাদের পাশাপাশি নৌকার মাঝি হতে চান সুপ্রিম কোর্টের শতাধিক আইনজীবী। ইতোমধ্যে তাদের অনেকেই নৌকার মনোনয়ন ফরম কিনেছেন এবং জমা দিয়েছেন। 

তাদের মধ্যে অন্যতম, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুন নূর দুলাল, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট রবিউল আলম বুদু, অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক, অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী, অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হোসেন, ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ, ব্যারিস্টার এস এম কফিল উদ্দিন, ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ, অ্যাডভোকেট মো. মোখলেসুর রহমান বাদল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আশরাফুল হক জর্জ, ব্যারিস্টার মোকছেদুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট ড. বশির আহমেদ, অ্যাডভোকেট জেসমিন সুলতানা, ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা-ই-রাকিব, ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমন, ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, ব্যারিস্টার এম. আশরাফুল ইসলাম আশরাফ, প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন, অ্যাডভোকেট সুবীর নন্দী দাস, ব্যারিস্টার সুব্রত কুমার কুন্ডু, অ্যাডভোকেট ড. মোহাম্মদ জগলুল কবির, অ্যাডভোকেট এ বি এম রিয়াজুল কবির কাওসার, অ্যাডভোকেট নিলুফার আনজুম, ব্যারিস্টার আবুল কালাম আজাদ, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম ফজলুল হক, অ্যাডভোকেট মো. সাফায়েত হোসেন সজীব, অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিন, অ্যাডভোকেট সালমা হাই টুনি, অ্যাডভোকেট দিদার হোসেন রিজভী প্রমুখ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, “আওয়ামী লীগ একটা জনপ্রিয় দল। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের আগ্রহ থাকতেই পারে। তবে দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা মনোনয়ন দেবেন জনপ্রিয়তা দেখে।”

Link copied!