• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ, অভিযানেও কাজ হচ্ছে না


জাহিদ রাকিব
প্রকাশিত: জুন ৪, ২০২৩, ০৯:৫৪ পিএম
লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ, অভিযানেও কাজ হচ্ছে না

রাজধানীসহ সারা দেশে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। ডেঙ্গু মোকাবিলায় ঢাকার দুই সিটি মেয়রের তৎপরতাও চোখে পড়ার মতো। জোনভিত্তিক চালানো হচ্ছে অভিযান। এডিস মশার লার্ভা পেলে করা হচ্ছে জরিমানা।

রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতাল ও এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঢাকার মিরপুর, বাড্ডা, রামপুরা, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা ও পুরান ঢাকার মানুষ বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে। যারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, তারা সবাই সবই এসব এলাকার।

খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা আবুল কাশেম (৪০) হঠাৎ জ্বর ও সর্দিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরীক্ষা করে জানতে পারেন তার ডেঙ্গু হয়েছে। সংবাদ প্রকাশকে তিনি বলেন, “হঠাৎ গত তিন দিন জ্বর। কোনোভাবেই জ্বর কমছে না। পরীক্ষার পর জানতে পারি ডেঙ্গু।”

রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে ২৩ বছর বয়সী তানজিলা জ্বরে আক্রান্ত হন গত ১৬ মে। জ্বর শুরুর পর চার দিন স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে বাসাতেই চিকিৎসা নেন। তবে একপর্যায়ে জ্বরের পাশাপাশি শুরু হয় শারীরিক দুর্বলতা। তখন বাধ্য হয়েই ভর্তি হন হাসপাতালে।

ময়নুল হক নামের একজন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “মুগদা হাসপাতালে আমার ছোট ভাইকে ভর্তি করিয়েছি। জ্বরে আক্রান্ত থাকা অবস্থায় নিয়ে এসেছি তাকে। হাসপাতালে পরীক্ষা করার পর জানা গেছে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে ভর্তি করিয়েছি।”

মৌসুমের শুরুতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে চিন্তিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “চলতি বছরে হাসপাতালের চিত্র দেখে মনে হচ্ছে ডেঙ্গু থাকবে সারা বছর। আগে মে-অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুর মৌসুম দেখা যেত। এখন সারা বছর ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া আগে ডেঙ্গু ছিল শহরকেন্দ্রিক। কিন্তু এখন সারা দেশে। নিজেরা সচেতন না হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এখন জ্বর হলেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “এখন জ্বর হলে একদিন পরেই ডেঙ্গুর পরীক্ষা করতে হবে। দ্রুত পরীক্ষা করে শনাক্ত করা গেলে, চিকিৎসা সেবা দিতে দ্রুত সুস্থ করা যাবে। দিনের বেলায় মশারি টাঙানো, স্কুলকলেজের শিক্ষার্থীদের ফুল হাতা জামা ও হাত-পায়ে মোজা পরা পড়তে হবে।”

মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন রোগী আসছে আমাদের হাসপাতালে। তারা সবাই তিন থেকে পাঁচ দিন জ্বরে ভুগে হাসপাতালে এসেছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাদের ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। বর্তমানে আমাদের হাসপাতালে শিশু ডেঙ্গু আক্রান্ত আছে ১৮ জন।”

তিনি আরও বলেন, “আগের বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি মনে হচ্ছে। সরকারের পক্ষে থেকেও হাসপাতালে অনেকগুলো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারপরও আমাদের সচেতন হতে হবে।”

ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে ঢাকাবাসীকে সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, “আপনারা বাসা-বাড়ি, স্থাপনার অভ্যন্তরে যে পানি জমে, থেমে থেমে বৃষ্টির ফলে যে পানি জমে, জমা পানি ফেলে দিন। পারলে নিয়মিত জমা পানি ফেলে দিন। কোথাও যদি আমরা পানি জমতে না দেই, তাহলে আমরা এই এডিস মশার বিস্তার রোধ করতে পারব।”

তিনি বলেন, “ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম ও অভিযান চলমান আছে। মশক নিধন অভিযানে আমাদের কর্মীরা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। সেগুলোও নিয়মিত মনিটর করা হচ্ছে। তবে বাসা বাড়িতে পানি জমে থাকায় সেগুলোতে লার্ভা জমাচ্ছে। সেসব জায়গা পরিষ্কার করতে হবে।”

মশকনিরোধ নিয়ে মেয়র আরও বলেন, “মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে দুটো সিটি করপোরেশনেরই কীটনাশক কমিটি রয়েছে। কমিটিতে বিভিন্ন পর্যায়ের বিশেষজ্ঞবৃন্দ রয়েছেন। কমিটির বিশেষজ্ঞদের মতামত ও সুপারিশের ভিত্তিতে আমরা পুরো বছরের কীটনাশক আমদানি ও মজুত করেছি। এছাড়াও ২০২০ সালের পর হতে আমাদের কীটনাশকের মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই।”

এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৯৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়েছে, গত এক দিনে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৭ জন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১০ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৩৮৭ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। ঢাকার ৫৩টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৩৩৮ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।

চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৩৭৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ১ হাজার ৬৯৪ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬৮২ জন। তাদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ হাজার ৯৭৩ জন। ঢাকায় ১ হাজার ৩৪৩ এবং ঢাকার বাইরে ৬৩০ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

Link copied!