• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

মেগা প্রকল্পে বদলে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা


সফিকুল ইসলাম
প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২৩, ০৭:৩৮ পিএম
মেগা প্রকল্পে বদলে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

উন্নয়ন চমকে এবার যুক্ত হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এটি চালু হলে দুই মাস পরই বদলে যাবে রাজধানী ঢাকা। একইসকঙ্গে আগামী সেপ্টেম্বরে দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম পর্বের পাশাপাশি চালু হচ্ছে ১৪ লেনের পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়েটি। অক্টোবরে চালু হওয়ার কথা রয়েছে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পটি। আর সেই মাসের শেষে উত্তরা থেকে মতিঝিলে ছুটবে স্বপ্নের মেট্রোরেল। যোগাযোগ খাতে এসব প্রকল্প গেম চেঞ্জার হিসেবে কাজ করবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার কারণেই উন্নয়নে ভাসছে দেশ। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে দেশ-বিদেশেও প্রশংসিত হচ্ছেন এই সরকার। 

জানা গেছে, আধুনিক ঢাকার অন্যতম গেটওয়ে হিসেবে ধরা হচ্ছে দেশের প্রথম ১৪ লেনের মহাসড়ক পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়েকে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অধীনে নির্মিত নান্দনিক এ সড়ক পথের কাজ একেবারে শেষের দিকে। সেপ্টেম্বরে উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানের চিরচেনা অসহনীয় যানজট থেকে মুক্তি দিতে সেপ্টেম্বরেই চালু হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ। মুহূর্তে চলাচল করা যাবে ফার্মগেট থেকে তেজগাঁও হয়ে বিমানবন্দর পর্যন্ত।

এছাড়া অক্টোবরেই বিআরটি প্রকল্পের আংশিক চালুর কথা ভাবছে কর্তৃপক্ষ। যা দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটাবে। নিশ্চিত করবে ঢাকা-গাজীপুর পথে চলার স্বাচ্ছন্দ্য। তবে রাজধানীবাসীর সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ অক্টোবরের শেষেই মেট্রোরেল পৌঁছাবে মতিঝিল পর্যন্ত। দুই মাসের মধ্যে এই মেগা প্রকল্পগুলো চালু হলে শহরের যানজট পরিস্থিতি স্বাভাবিক হাওয়ার পাশপাশি যোগাযোগ ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে, বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

তবে প্রকল্পগুলোর দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা নিতে হলে সঠিক ব্যবস্থাপনায় জোর দেওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, মেট্রোরেল বাদে বাকি প্রকল্পের সুফল পেতে গুরুত্ব দিতে হবে ট্রাফিক ব্যবস্থপনায়। বিশেষ করে এক্সপ্রেসওয়ের ওঠানামার স্থানে ঢেলে সাজাতে হবে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা।

বিশেষজ্ঞরা এও বলছেন, নগরের ফুটপাত দখলমুক্ত করা, ফিটনেসবিহীন যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেই অনেকটা সহজ হবে রাজধানীবাসীর জীবনমান।

এ বিষয়ে কথা হয় বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান এর সঙ্গে। তিনি বলেন, “এ প্রকল্পগুলো গেম চেঞ্জার হিসেবে কাজ করবে। বিশেষ করে যোগাযোগ ও পরিবহন খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। তবে এই যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ৩২টি র‌্যাম সড়কের বিভিন্ন জায়গায় স্পর্শ করবে, এই র‌্যামগুলোতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা দরকার। কারণ এই র‌্যামগুলোতে যানজটের একটা শঙ্কা থেকেই যায়।

গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহ উদ্দিন বলেন, “যানবাহন চলাচলের জন্য যে অবকাঠামো দরকার, ঢাকায় সেটার খুবই অভাব রয়েছে। মেগা প্রকল্পগুলো চালু হলে অবশ্যই ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। তবে এর সুফল পেতে হলে ট্রাফিকের ক্ষেত্রে অটোমেশন দরকার। এতে করে খুব তাড়াতাড়ি গাড়িগুলো ডেসপাস হতে পারবে। এ ছাড়া গাড়ি ওঠার সময়ও যেন লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে না হয়, সেটার ব্যবস্থাপনা দরকার।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে :
রাজধানীর যানজট নিরসনে সেপ্টেম্বরে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ চালু হবে। রেল লাইন ধরে এই উড়াল সড়ক শুরু, বিমানবন্দর এলাকার কাওলা থেকে সরাসরি গিয়ে মিলবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালীতে।

প্রকল্পের নথি অনুসারে জানা যায়, সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগে (পিপিপি) তিন ধাপে উড়াল সড়ক প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রথম ধাপ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত। দ্বিতীয় ধাপ বনানী রেলস্টেশন থেকে মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত। তৃতীয় ধাপ মগবাজার রেলক্রসিং থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত। এই উড়াল সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রকল্পটির নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে অবশেষে তা আলোর মুখ দেখছে।

পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে :
আধুনিক ঢাকার নতুন গেইটওয়ে হতে যাচ্ছে পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে। দেশের প্রথম ১৪ লেনের মহাসড়ক, যার ৮টি এক্সপ্রেসওয়ে। নান্দনিক এ সড়ক ধরেই তৈরি হচ্ছে পূর্বাচল স্যাটেলাইট সিটির নকশা। মহাসড়কের দুপাশে রয়েছে ১০০ ফিট খাল। রাজধানীর কুড়িল ফ্লাইওভার পয়েন্ট থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত সাড়ে ১২ কিলোমিটার এ সড়কে থাকছে পাঁচটি এ্যাডগ্রেড ইন্টারসেকশন। 

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের অধীনে নির্মিত হচ্ছে এ সড়ক পথ। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরেই এই এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পটির প্রথম মেয়াদ ছিল ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত। তিন বছরে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা ছিল। ২০১৫ সালে প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৫ হাজার ২৮৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এরসঙ্গে আরও তিনটি খাল, সড়ক, সেতুসহ আনুষঙ্গিক বিষয় যুক্ত হওয়ায় সংশোধিত প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৫ হাজার ৪২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বেড়ে যায়। এতে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়ায় ১০ হাজার ৩২৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ১৪৫ দশমিক ২৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়।

বিআরটি প্রকল্প : 
যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে রাজধানীর এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প। ২০১২ সালে শুরু হওয়া বিআরটি প্রকল্পের অধীন ২০১৬ সালে বিশেষ বাস চালুর কথা ছিল। প্রকল্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের জয়দেবপুর পর্যন্ত জোড়া লাগানো আধুনিক বাস চলবে। এসব বাসের পথ হবে সড়কের মাঝখান দিয়ে। যানজট, সংকেত কিংবা অন্য কোনো কারণে কোথাও বাসের চলাচল বাধাগ্রস্ত হবে না। ঘণ্টায় ২০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে। যার কাজ এখনও চলমান। 

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে আংশিকভাবে চালু হওয়ার কথা ছিল। তবে এক মাস পিছিয়ে অক্টোবরে চালু হতে যাচ্ছে। আপাতত শিববাড়ী না হলেও ভোগড়া থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। এই পথে ২৫টি স্টেশনের মধ্যে প্রথম দফায় ১১টি চালু হওয়ার কথা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১১টি স্টেশনে ৫০টি বাস দিয়ে চালু হবে এই প্রকল্প। আর এই বাস আসবে চাইনিজ কোম্পানি হাইগার থেকে। সব সীমাবদ্ধতা ছাপিয়ে এই প্রকল্পের শতভাগ কাজ ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ করে পুরোপুরি চলাচল উপযোগী করে ভোগান্তি কমানো যাবে বলে আশাবাদী কর্তৃপক্ষ।

স্বপ্নের মেট্রোরেল : 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ২৪ জুন এমআরটি লাইন-৬ নামে পরিচিত মেট্রোরেল প্রকল্পের নির্মাণ উদ্বোধন করেন। এরপর গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় দেশের প্রথম এলিভেটেড মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন। উত্তরা-আগারগাঁও রুটে মেট্রোরেলের কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। আগামী অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল উদ্বোধন করবেন। তবে উত্তরা থেকে মতিঝিল-কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ২১.২৬ কিলোমিটারের পুরো রুটটি ৪০ মিনিটেরও কম সময়ে ভ্রমণ করা যাবে। মেট্রোরেল প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী বহন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

Link copied!