• ঢাকা
  • রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

সমাবেশ থেকে অবরোধ, ৫ দিনে ৮২ অগ্নিকাণ্ড


বিজন কুমার
প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২৩, ০৯:৫৬ পিএম
সমাবেশ থেকে অবরোধ, ৫ দিনে ৮২ অগ্নিকাণ্ড
ফাইল ফটো

সপ্তাহজুড়ে সমাবেশ, মিছিল আর স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। এরই মধ্যে দেশে দীর্ঘদিন পর পালিত হয়েছে হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি। আর এসব কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের কাছে সব থেকে বেশি আতঙ্কের হয়ে দাঁড়িয়েছে অগ্নিকাণ্ড এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাগুলো।

বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) রাতে ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তর থেকে পাঠানো সর্বশেষ প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, গত ৫ দিনে সারা দেশে ৮২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। উচ্ছৃঙ্খল জনতা এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে রাতের বেলায় বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের কোনো খবর জানায়নি ফায়ার সার্ভিস।

এদিকে, ২৮ অক্টোবর রাজধানী ঢাকায় একাধিক রাজনৈতিক দলের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এরপরের দিন ২৯ অক্টোবর নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা, সরকারের পদত্যাগ ও দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়ে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। এর একদিনের বিরতি দিয়ে মহাসমাবেশে পুলিশি বাধা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ এবং সরকারের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত টানা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো।

ফায়ার সার্ভিসের পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দেশজুড়ে ৮২টি অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের দিনই ৩৫ শতাংশের বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। গত ৫ দিনের মধ্যে ওইদিনই সবচেয়ে বেশি অগ্নিকাণ্ড হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে ঢাকা মহানগর ও ঢাকা বিভাগীয় বিভিন্ন জেলা-উপজেলাগুলোতে।

ফায়ার সার্ভিস মনে করে, সাধারণ মানুষের উচিত কোনো প্রকার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা দেখলেই ভিডিও না করে জরুরি সেবা ৯৯৯ অথবা ফায়ার সার্ভিসের হটলাইন ১৬১৬৩ নম্বরে ফোন দেওয়া। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে যাত্রী, চালকদের প্রত্যাশা, সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষায় তাদের সমঝোতায় বসা উচিত।

অপরদিকে ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তর থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৮ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত (৫ দিন) উচ্ছৃঙ্খল জনতা ৮২টি আগুনের ঘটনা ঘটিয়েছে। এরমধ্যে ২৮ অক্টোবর ২৯টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটেছে। ২৯ অক্টোবর ১৯টি, ৩০ অক্টোবর ১টি, ৩১ অক্টোবর ১১টি, ১ নভেম্বর ১৪টি এবং ২ নভেম্বর ঘটেছে ৮টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এসব অগ্নিকাণ্ডে যাত্রীবাহী বাস, কাভার্ডভ্যান, ট্রাক, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, বাণিজ্যিক পণ্যের শো-রুম, বিদ্যুৎ অফিস, পুলিশ বক্সসহ পুড়ে যায় ফায়ার সার্ভিসের অগ্নি নির্বাপণ কাজে ব্যবহৃত একটি গাড়ি।

কথা হয় গাবতলী এলাকায় বাসচালক হেলালের সঙ্গে। তিনি বলেন, “আমরা পেটনীতিতে চলি। রাজনীতির কবলে পড়ে আমাদের পেটে লাথি পড়ছে। মালিক কেবল আমাদের খাবার দেয়। কিন্তু আমার পরিবারের তো দেয় না। দলগুলো সমঝোতায় বসলে আমরা রক্ষা পাই।”

অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তরের মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “একটা সময় আমাদের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোতে কাজ করার পর্যাপ্ত জিনিসপত্র ছিল না। বর্তমান সরকার সেই অভাব পূরণ করেছে। যেকোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা সচেষ্ট রয়েছে। আমরা পুলিশি সহায়তায়ও পাই।”

শাহজাহান শিকদার আরও বলেন, “ঘটনা সময় অনেকেই ভিডিও করেন। আমরা সাধারণ মানুষের কাছে প্রত্যাশা করি তারা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেই যেন আমাদের অবগত করে। এছাড়া সাধারণ মানুষ আমাদের যন্ত্রাংশ না টেনে তারা যেন ঘটনাস্থলে পানির উৎসের সন্ধান দেয়। যেমন পুকুর, জলাশয়। তবেই আমরা দ্রুত কাজ করতে পারব এবং ক্ষতির পরিমাণ কমাতে পারব।”

Link copied!