দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পেতে হলে তৃণমূলের সঙ্গে সুসম্পর্ক-ব্যক্তি ইমেজ ও সাংগঠনিক দক্ষতা, নিজ নিজ সংসদীয় আসনে জনপ্রিয়তা আছে এমন নেতাদের মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ। তবে ভূমিদস্যু-সন্ত্রাস ও অযোগ্যদের নিয়ে আগামী সংসদ নির্বাচনে লড়তে নারাজ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই দলীয় প্রার্থী নির্বাচনের আগে থেকেই সচেতনতা অবলম্বন করা হচ্ছে। এবার মনোনয়ন পেতে হলে দলের নেতাদের চারটি যোগ্যতা অবশ্যই থাকতে হবে। বর্তমান দলীয় সংসদ সদস্যদের (এমপি) ক্ষেত্রেও এ শর্ত প্রযোজ্য হবে।
রোববার (২২ অক্টোবর) রাতে সংসদীয় দলের প্রধান শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সংসদ ভবনের সরকারি দলের সভাকক্ষে এক ঘণ্টারও বেশি সময় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এতে সংসদ সদস্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মোতাহার হোসেন, শামীম ওসমান, নূর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন, কাজী কেরামত আলী, আবু রেজা মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন নদভী, রুবিনা আক্তার মিরা, অ্যারোমা দত্ত প্রমুখ।
সভায় উপস্থিত বেশ কয়েক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “কাউকে জয়ী করার দায়িত্ব নিতে পারব না। ভোট অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। এই ভোটে সবাইকে জিতে আসতে হবে। জরিপের ভিত্তিতে যোগ্যদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও সার্ভে রিপোর্টের ভিত্তিতে মনোনয়ন দেওয়া হবে। যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তার জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “ভোট অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। এ ভোটে সবাইকে জিতে আসতে হবে। কাউকে জিতে আনার দায়িত্ব আমি নিতে পারব না। আমি কারও চেহারা দেখে মনোনয়ন দেবো না। দেখে-শুনে জনপ্রিয় ব্যক্তিদের নমিনেশন দেবো। এখানে যারা আছেন সবাই মনোনয়ন নাও পেতে পারেন। যাকে নমিনেশন দেবো, তার জন্য কাজ করতে হবে। নমিনেশন পান না পান নৌকার বিরোধিতা করা যাবে না।”
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “আমরা যাকেই মনোনয়ন দিই, ভালো-মন্দ, কানা-খোঁড়া যাই হোক, আপনাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে, তাকেই জয়ী করবেন।”
পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, “নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে। তারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। সেই কারণে নির্বাচন বানচাল করতে পারলে একটি অনির্বাচিত সরকার এনে তাদের ইচ্ছেমতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। তারা জানে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে। এ কারণে তারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়। নির্বাচন বানচাল করে একটি অনির্বাচিত সরকার বসাতে চায়। এটা করতে পারলে তাদের তারা ইচ্ছেমতো সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।”
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারে। সে কারণে নির্বাচন বাদ দিয়ে অনির্বাচিত সরকারকে চায় দেশি-বিদেশি অনেকে। কারণ, অনির্বাচিত সরকার হলে তাদের প্রভাব বিস্তার করতে সুবিধা হয়। ভোট অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে।”
জানা গেছে, বৈঠকে বিএনপির চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। বিএনপি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করলে কোনো বাধা দেওয়া হবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, “তারা আন্দোলন করতে চায়, করবে। কোনো সমস্যা নেই। আমরা বাধা দেব না। তবে অগ্নিসন্ত্রাস, ভাঙচুর করলে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা সব মোকাবিলা করে অভ্যস্ত। হেফাজত মোকাবিলা করেছি। জামায়াত-বিএনপি মোকাবিলা করেছি। এবারও করব।”
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, “মনোনয়নপ্রত্যাশী ব্যক্তির স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয়তা কেমন, দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতা কতটুকু, এমপি হলে দায়িত্ব পালনে কোনো অনিয়ম-অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়েছেন কিনা ও তার কারণে দলে উপদল সৃষ্টি হয়েছে কিনা। এসব বিবেচনায় যারা এগিয়ে থাকবেন তারাই দলীয় মনোনয়ন পাবেন। এটাই চূড়ান্ত।”