• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

২০২২ সালে সড়কে ঝরেছে ৯ হাজার ৯৫১ প্রাণ


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২, ২০২৩, ১২:৩০ পিএম
২০২২ সালে সড়কে ঝরেছে ৯ হাজার ৯৫১ প্রাণ

সদ্য বিদায়ী ২০২২ সালে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ হাজার ৯৫১ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটি আরও জানায়, গত বছর সড়কে মোট ৬ হাজার ৭৪৯টি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে আহত হন ১২ হাজার ৩৫৬ জন। একই সময় রেলপথে ৬০৬টি দুর্ঘটনায় ৫৫০ জন নিহত ও ২০১ জন আহত হয়েছেন।

সোমবার (২ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ প্রতিবেদন তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, নৌপথে ২৬২ দুর্ঘটনায় ৩৫৭ জন নিহত, ৩৫৭ জন আহত ও ৭৪৩ জন নিখোঁজ হয়েছেন। সড়ক, রেল, নৌপথে সর্বমোট ৭ হাজার ৬১৭টি দুর্ঘটনায় ১০ হাজার ৮৫৮ জন নিহত ও ১২ হাজার ৮৭৫ জন আহত হয়েছেন।

সড়ক দুর্ঘটনার বিস্তারিত পরিসংখ্যান তুলে ধরে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ৩ হাজার ৯০ জন চালক, ১ হাজার ৫০৩ জন পথচারী, ৭৪২ জন পরিবহন শ্রমিক, ৮৮৫ জন শিক্ষার্থী, ১৩২ জন শিক্ষক, ২৮৩ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১ হাজার ১৫০ জন নারী, ৭৯৪ জন শিশু, ৪৪ জন সাংবাদিক, ৩১ জন চিকিৎসক, ১৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ৫ জন শিল্পী, ৯ জন আইনজীবী ও ২৯ জন প্রকৌশলী এবং ১৬৮ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে।

সংবাদ সম্মেলনে যাত্রী কল্যাণ সমিতি মহাসচিব আরও বলেন বলেন, নিহত ১১৪ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে ২৭ জন সেনাসদস্য, ৬২ জন পুলিশ সদস্য, ২ র‍্যাব সদস্য, ৯ জন বিজিবি সদস্য, ৫ জন নৌবাহিনীর সদস্য, ৮ জন আনসার সদস্য, ২ জন ডিজিএফআই সদস্য, ১ জন বিমানবাহিনীর সদস্য, ১ জন সিআইডি, ১ জন এনএসআই সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া ১৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ২৪ জন সাংবাদিক, ৭০৩ জন নারী, ৫৮৮ জন শিশু, ৬৬৬ জন শিক্ষার্থী, ১১৭ জন শিক্ষক, ২ হাজার ৩৮৩ জন চালক, ৪২১ জন পরিবহন শ্রমিক, ২৭ জন প্রকৌশলী, ৯ জন আইনজীবী, ১৩৩ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও ৩১ জন চিকিৎসক নিহত হয়েছেন।

পরিসংখ্যানের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২১ সালের তুলনায় বিদায়ী ২০২২ সালে ১.৫২ শতাংশ গাড়িচাপা, ০.৫৬ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ০.১৩ শতাংশ যানবাহনের চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে, ০.৩৪ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনা কমেছে। তবে ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ০.১২ শতাংশ বেড়েছে। সব মিলিয়ে আগের বছরের তুলনায় ২০২২ সালে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ।

দুর্ঘটনার কারণ জানিয়ে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বেপরোয়া গতি, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, রাস্তাঘাটের ত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ, ছোট যানবাহন বৃদ্ধি, সড়কে চাঁদাবাজি, রাস্তার পাশে হাটবাজার, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় নামানো, দেশব্যাপী নিরাপদ ও আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থার পরিবর্তে টুকটুকি-ইজিবাইক-ব্যাটারিচালিত রিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশানির্ভর গণপরিবহন ব্যবস্থার দিকে ধাবিত হওয়া সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ার অন্যতম কারণ।

এ সময় সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এ সময় সমিতির পক্ষ থেকে বেশ কিছু সুপারিশমালাও তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো সড়ক নিরাপত্তায় বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করা, আইনের ত্রুটি চিহ্নিত করে সংস্কার করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা, সড়ক নিরাপত্তায় বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো, সড়ক মন্ত্রণালয়ে আলাদা সড়ক নিরাপত্তা ইউনিট গঠন, সড়ক নিরাপত্তায় ইতোমধ্যে প্রণীত যাবতীয় সুপারিশমালা বাস্তবায়ন উদ্যোগ নেওয়া, দেশের সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন করা ও জেব্রাক্রসিং অঙ্কন করা, গণপরিবহন চালকদের পেশাদার ট্রেনিং ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা, সড়ক পরিবহন সেক্টরে অনিয়ম-দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি বন্ধ করা, গাড়ির ফিটনেস ও চালকদের লাইসেন্স দেওয়ার পদ্ধতি উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়ন করা, সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক সহায়তা তহবিল গঠনপূর্বক হতাহতদের দ্রুত উন্নত চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, দেশব্যাপী চাহিদানুযায়ী পর্যাপ্ত মানসম্মত নতুন গণপরিবহন নামানোর উদ্যোগ নেওয়া, ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য ট্রেনিং একাডেমি গড়ে তোলা এবং গণপরিবহনে সেবা ও নিরাপত্তার মান পর্যবেক্ষণের জন্য দেশের সব মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সচিব, জেলা প্রশাসকদের প্রতি মাসে একদিন পরিচয় গোপন রেখে গণপরিবহন ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা।

Link copied!