শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাস। প্রতিবারের মতো এবারো রমজানের আগেই অতি প্রয়োজনীয় বেশ কিছু খাদ্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। রমজানে তৃষ্ণা মেটাতে লেবুর সরবতের চাহিদা থাকে অনেক বেশি। সে সুযোগকে কাজ লাগিয়েছে কাঁচামাল ব্যবসায়ীরা। বাজারে বড় সাইজের লেবুর ডজন বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। লেবুর সাথে ইফতারের আরেক পণ্য বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি। শশা বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৯০ থেকে ১২০ টাকা। এর মধ্যে চাল, ডাল, আটা, পেঁয়াজ, ময়দা, মসলা, ছোলা, ডিম, মুরগি, মাছ ও মাংসের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) রাজধানীর বেশ কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। বাজারে চাহিদার তুলনায় জোগান কম, এমন অজুহাতে বেড়েই চলেছে লেবুর দাম। জাত এবং আকার ভেদে প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। এমন পরিস্থিতিতে অনেক ক্রেতাকেই দাম শুনে ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে।

রমজানের আগে বাড়তে শুরু করেছে সবজির দাম। বাজারভেদে প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ১১০—১২০ টাকায়, শিম ৫০—৬০ টাকা, পটল ৮০—৯০ টাকা, টমেটো ৫০—৬০ টাকা, বেগুন ১২০ টাকা, চিচিংগা ৬০—৮০ টাকা ও ঝিঙ্গা ৬০—৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারে লাউ প্রতি পিসি বিক্রি হচ্ছে ৫০—৮০ টাকায় এবং মিষ্টি কুমড়া প্রতি ফালি ২০—৪০ টাকা দরে।এছাড়া কাঁচামরিচ ১০০ থেকে ১২০ টাকায়, ফুলকপি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, বাঁধাকপি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, শসা ৮০ থেকে ১০০ টাকায়।
বাজারে আসা ক্রেতা হোসেন মিয়া সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “বেশির ভাগ সবজির দাম ১০০—২০০ টাকা। ৫০—৬০ টাকার নিচে পেঁপে ছাড়া কিছুই নেই। এমন হলে সাধারণ মানুষকে না খেয়ে থাকতে হবে। শুধু সাদা ভাত খেতে হবে।”
সবজি বিক্রেতা এনামুল হক বলেন, “শীতকালীন সবজি শেষ হয়ে গেছে। তাছাড়া অনেক সবজির ক্ষেতে ধান লাগানোর কারণে উৎপাদন কমে গেছে। রোজা শুরু হওয়ায় বেগুন, শসা, লেবু, টমেটো ও ধনেপাতার দাম কিছুটা বেড়েছে।”

রোজাকে সামনে রেখে বাড়তে শুরু করেছে মুদি পণ্যের দামও। বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি খোলা চিনি ১১৫—১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মসুর ডাল ১৩৫—১৫০ টাকা, খেসারি ডাল ৮০—৯০ টাকা, অ্যাংকরের বেসন ৭৫—৮৫ টাকা এবং বুটের বেসন বিক্রি হচ্ছে ১০০—১১০ টাকায়। তবে কিছুটা কমেছে ছোলার দাম। প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮৫—৯৫ টাকা, যা আগে ছিল ৯০—১০০ টাকা।
সপ্তাহের বাজার করতে আসা আনোয়ার হোসেন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “নিত্যপণ্যের দাম জিজ্ঞেস করতে ভয় হয়! প্রতিদিনই দাম বাড়ে, আমাদের বেতন তো বাড়ে না। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি, এভাবে দাম বাড়তে থাকলে না খেয়ে থাকতে হবে। জানি না এ সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে কবে?”
সবজির দাম বাড়লেও অপরিবর্তিত রয়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। গত সপ্তাহের মতো এ সপ্তাহেও প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায়। তবে কিছুটা বেড়েছে পাকিস্তানি কর্ক ও দেশি মুরগির দাম। বাজারভেদে পাকিস্তানি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৮০—৩৯০ টাকায়। প্রতি কেজি বড় কর্ক মুরগি কিনতে গুণতে হচ্ছে ৩২০—৩৬০ টাকা। এদিকে দেশি মুরগির দাম প্রতি পিস (৮০০—৯০০ গ্রাম) ৫০০—৫৫০ টাকা।
মাংস ক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, “ব্রয়লার মুরগির দাম যে এতো বেড়েছে, তা জানতাম না। ২৭০/২৮০ টাকা ব্রয়লারের দাম, এটা চিন্তাও করতে পারছি না। এই দৌড় কে ঠেকাবে? দাম বেশি হওয়ায় গরু-খাসির মাংস খেতে পারি না, এবার মুরগির মাংসও খাওয়া বন্ধ হবে।”
মুরগি ব্যবসায়ী সফিকুল ইসলাম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এতটা বাড়তি দামে ব্রয়লার মুরগি কখনো বিক্রি হয়নি। ব্রয়লারের দাম বাড়ার কারণে এখন সোনালি ও কর্কসহ দেশি মুরগির দামও বেড়েছে। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও অনেক খামার বন্ধ হওয়ায় বাজারে ডিম ও মুরগির সংকট দেখা দিয়েছে। তাতে প্রকৃতপক্ষেই দাম কিছুটা বেড়েছে।”