• ঢাকা
  • শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫, ৩০ কার্তিক ১৪৩২, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

৫ আগস্টের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র? ‘বিশ্বাস করেন না’ শেখ হাসিনা


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৫, ১০:১৬ পিএম
৫ আগস্টের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র? ‘বিশ্বাস করেন না’ শেখ হাসিনা
ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বধীন সরকার পতনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অন্য কোনো বিদেশি শক্তি ‘সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত’ ছিল বলে ‘বিশ্বাস করেন না’ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তবে অর্থনীতিবিদ হিসেবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রভাবশালী পশ্চিমা সমর্থকদের একটি বলয় তৈরি করতে পেরেছিলেন বলে মনে করেন তিনি।

ভারতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘নিউজ এইটটিনে’ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন, যিনি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে দিল্লিতে অবস্থান করছেন।

সাক্ষাৎকারে জুলাই অভ্যুত্থান, অভ্যুত্থানের সময় সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের ভূমিকা, অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা, বাংলাদেশে উগ্রপন্থি দলের ‘উত্থান’ ও ভারতের ভূমিকাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি।

সাক্ষাৎকারের শুরুতে শেখ হাসিনার কাছে নিউজ এইটটিনের সাংবাদিক মনোজ গুপ্ত জানতে চান, তিনি সুনির্দিষ্ট কোনো গোয়েন্দা তথ্য বা হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন? এটা কি সত্যিই কোনো অভ্যুত্থানের চেষ্টা ছিল, না কি কমান্ড কাঠামো ভেঙে পড়েছিল, না কি নিজের নিরাপত্তা বলয়ের ‘নীরব সম্মতির’ কারণে তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন।

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, এক সময়ের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অগাস্টের শুরুতে উগ্রপন্থি একটা অংশের নেতৃত্বে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে রূপ নেয়। ছাত্রদের কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে পরিস্থিতি অনেক দূরে চলে যায়।

“এটা ঠিক যে ষড়যন্ত্রের পুরো চিত্রটা অনেক পরে গিয়ে স্পষ্ট হয়। যখন ইউনূস সহিংস আন্দোলনকারীদের দায়মুক্তি দিয়ে দেন এবং আমাদের সময়কার তদন্ত কার্যক্রম বিলুপ্ত করেন, তখন স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, সরকার উৎখাত করার জন্য একটা ছক কষা হয়েছিল।”

তিনি বলেন, “ওই সময়টায় দেশ ছাড়াটা বাঁচা-মরার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আমি দেশ ছাড়তে চাইনি। কিন্তু আমাকে স্পষ্ট করে বলা হল, আমি থেকে গেলে শুধু আমার জীবন নয়, আমার চারপাশের মানুষের জীবনও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।”

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার সপ্তাহ খানেক পরে শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার উৎখাতের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হাত ছিল।

দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া এক বার্তায় সেদিন তিনি বলেন, “সেন্ট মার্টিন আর বঙ্গোপসাগর আমেরিকার হাতে ছেড়ে দিলে আমি ঠিকই ক্ষমতায় থাকতে পারতাম।”

১৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে এ ধরনের অভিযোগ একাধিকবার তুলেছেন শেখ হাসিনা, যিনি এখন চব্বিশের জুলাই আন্দোলন দমানোর অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের মুখোমুখি। তিনি এবং তার সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতারা ‘খুন ও গুমের’ অভিযোগে কয়েক ডজন মামলার আসামি।

২০২৩ সালের মে মাসে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়ত তাকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না।

পরের মাসে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “এখনও যদি বলি যে, না, ওই সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বা আমাদের দেশ কাউকে ইজারা দেব, তাহলে আমার ক্ষমতায় থাকার কোনো অসুবিধা নাই, আমি জানি সেটা। কিন্তু আমার দ্বারা সেটা হবে না।”

এছাড়া ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বিএনপিবিহীন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও শেখ হাসিনা বলেছিলেন, এক ‘শ্বেতাঙ্গ’ ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি একটি প্রস্তাব পেয়েছেন। তাকে বলা হয়েছিল, বিমানঘাঁটি করতে দিলে তিনি সহজে ক্ষমতায় আসতে পারবেন।

এমন প্রেক্ষাপটে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সাংবাদিক মনোজ গুপ্ত জানতে চান, “ওয়াশিংটনের ভূমিকা আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? যুক্তরাষ্ট্র কি শুধু রাজনৈতিক সংস্কারই চাচ্ছিল, না কি তারা সক্রিয়ভাবে সামরিক ও বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠীকে সমর্থন যুগিয়েছিল, যারা গণতন্ত্র পুনর্গঠনের নামে আপনাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চেয়েছিল?”

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “মার্কিন সরকারের সঙ্গে আমাদের বরাবরই ভালো সম্পর্ক ছিল। আমাদের এ কথা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই যে, মার্কিন সরকার কিংবা অন্য কোনো বিদেশি শক্তি সক্রিয়ভাবে এতে জড়িত ছিল।

“তবে ইউনূস একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে নিজের কাজের মাধ্যমে প্রভাবশালী পশ্চিমা সমর্থকদের একটি বলয় তৈরি করেছিলেন। এই বলয় তার অর্থনৈতিক তত্ত্বগুলোকে ভুলভাবে গণতান্ত্রিক যোগ্যতা হিসেবে ধরে নিয়েছিল।”

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, ইউনূসের সমর্থকদের ভুল ভাঙতে শুরু করেছে এবং তারা প্রধান উপদেষ্টার প্রকৃত রূপ দেখতে পাচ্ছেন।

“তিনি একজন অনির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান, যিনি উপদেষ্টা পরিষদে উগ্রপন্থিদের স্থান দিয়েছেন, বাংলাদেশের সংবিধান বদলে দিয়েছেন এবং সংখ্যালঘুরা যখন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তখন তিনি চুপ থেকেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, যার সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক, তিনি প্রকাশ্যে ইউনূসকে অপছন্দ করার কথা জানিয়েছেন।”

জুলাই আন্দোলনে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের ভূমিকা সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, সামরিক বাহিনী একটা ‘অসম্ভব পরিস্থিতির’ মধ্যে পড়ে গিয়েছিল।

“এক দিকে ব্যাপক সহিংসতা থেকে একটি সাংবিধানিক সরকারকে রক্ষা করার চাপ; আরেক দিকে প্রাণহানি এড়ানো। আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঠেকানোর পাশাপাশি ঢাকার রাজপথে আমার পরিবার, কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বাইরের চাপ সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে কি না, কিংবা কী ধরনের প্রভাব ফেলেছে, তা আমি বলতে পারি না।”

জুলাই অভ্যুত্থান ও অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ভারতের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, “ভারত দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং আমাকে গ্রহণ করায় আমি ভারতীয় জনগণের প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।

“বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে ভারত চায় বাংলাদেশে একটি স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার ক্ষসতায় আসুক। দিল্লির সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের দূরত্বের বিষয়ে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। এই দূরত্ব তৈরি হয়েছে চরমপন্থিদের প্রতি তার পৃষ্ঠপোষকতা, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিতে না পারা এবং তার ভারতবিরোধী বক্তব্যের কারণে।”

মুহাম্মদ ইউনূস কি পশ্চিমাপন্থি ‘বেসামরিক মুখ’, না কি আওয়ামীবিরোধী জোটের প্রতীক–এমন প্রশ্ন করা হয় শেখ হাসিনাকে।

জবাবে তিনি বলেন, “এটা গোপন কোনো বিষয় নয় যে, অর্থনীতিবিদ হিসেবে অধ্যাপক ইউনুস ক্যালিফোর্নিয়ার ‘সেলুনগুলোতে’ জনপ্রিয় ছিলেন। কিন্তু তিনি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের কোনো প্রতীক নন, বিশাল জনসমর্থনও তার নেই।

“তিনি একজন অনির্বাচিত ব্যক্তি, যিনি এখন এমন একটি দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছেন, যে দলের প্রতি কোটি কোটি মানুষের সমর্থন রয়েছে এবং অতীতে যে দলটি নয়বার নির্বাচিত হয়েছে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “পশ্চিমারা যদি মনে করে, ইউনূস ‘বন্ধুসুলভ ব্যক্তি’, তাহলে তারা প্রতারিত হচ্ছে। বাস্তবে তার প্রশাসনের উগ্রপন্থিরা তাকে সামনে রেখে কাজ করছে, যাদের উদ্দেশ্য একটি সাম্প্রদায়িক, প্রতিশোধমূলক ও সামাজিকভাবে পশ্চাদমুখী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা।”

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!