রাজধানীর হাইকোর্ট মোড়ে প্লাস্টিকের ড্রামে করে ফেলা কাঁচামাল ব্যবসায়ী আশরাফুল হক (৪২) হত্যার ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব ও পুলিশ। শনিবার পৃথক দুই সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাদ্বয় দুই সন্দেহভাজনের বয়ানভিত্তিক দুই রকম মোটিভ তুলে ধরেছে—একটি বলছে টাকার জন্য ফাঁদ, অন্যটি বলছে ত্রিভুজ প্রেমই মৃত্যু ডেকে এনেছে।
গ্রেপ্তার করা হয়েছে জরেজুল ইসলাম (৩৯) এবং শামীমা আক্তার (৩৩)–কে। তাদের শুক্রবার ঢাকা ও কুমিল্লায় অভিযান চালিয়ে ধরা হয়।
র্যাব বলছে—১০ লাখ টাকা আদায়ের পরিকল্পনায় হত্যা
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন সকালে কারওয়ান বাজারে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে জানান—শামীমার বরাতে তারা জেনেছে, জরেজুল ও শামীমা প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন এবং আশরাফুলকে ব্যবহার করে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
র্যাবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী—
- ১১ নভেম্বর জরেজুল ও আশরাফুল রংপুর থেকে ঢাকায় আসেন
- পরের দিন শনির আখড়ায় এক ফ্ল্যাট ভাড়া নেন, সেখানে শামীমাও ছিলেন
- শরবতে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে আশরাফুলকে অচেতন করা হয়
- শামীমার মোবাইলে আশরাফুল ও শামীমার ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করা হয়
- ভিডিও দেখিয়ে টাকা আদায়ের পরিকল্পনাও প্রস্তুত ছিল
র্যাব জানায়, দুপুরে অচেতন হয়ে গেলে আশরাফুলকে দড়ি দিয়ে বেঁধে স্কচটেপ লাগানো হয়। এরপর হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করলে তিনি মারা যান।
১৩ নভেম্বর সকালে মরদেহ গুমের পরিকল্পনায় প্লাস্টিকের দুটি ড্রাম কেনা হয়। এরপর লাশ টুকরো করে ড্রামে ভরে সিএনজিতে করে হাইকোর্ট মোড়ে ফেলে আসা হয়।
অন্যদিকে দুপুরে মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন—এটি মূলত ত্রিভুজ প্রেমের জটিলতার পরিণতি।
ডিবির ভাষ্য—
- মালয়েশিয়ায় থাকা অবস্থায় জরেজুলের সঙ্গে অ্যাপে পরিচয় হয় শামীমার
- সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পর জরেজুল দেশে ফেরেন প্রবাসজীবন শেষে
- এরই মধ্যে জরেজুলের স্ত্রী বিষয়টি টের পেয়ে তার বন্ধু আশরাফুলের সাহায্য চান
- এই সূত্রে আশরাফুল ও শামীমার মধ্যে যোগাযোগ বাড়ে এবং প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে
- ১৪ লাখ টাকায় জরেজুলকে জাপানে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেন শামীমা, যার ৭ লাখ টাকা দেবেন তিনিই
- গত ১১ নভেম্বর জাপানে যাওয়ার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে জরেজুল ও আশরাফুল ঢাকায় আসেন
- শনির আখড়ায় এক বাসায় ওঠার পর প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়
- তর্কের এক পর্যায়ে শামীমা চিৎকার করলে জরেজুল ক্ষিপ্ত হয়ে হাতুড়ির আঘাতে হত্যা করেন আশরাফুলকে
পরে একইভাবে মরদেহ স্কচটেপ ও ওড়না দিয়ে মুড়িয়ে টুকরো করে ড্রামে ভরা হয় এবং গাড়িতে করে হাইকোর্ট এলাকায় ফেলে দেওয়া হয়।
র্যাব ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা পাঞ্জাবি-পায়জামা, দড়ি, স্কচটেপ এবং ভিডিও ধারণের ডিভাইস উদ্ধার করেছে।
এ ঘটনায় দুই সংস্থার বক্তব্যে ভিন্ন মোটিভ পাওয়া গেলেও উভয়ের দাবি—হত্যাকাণ্ডে শামীমা ও জরেজুলের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা স্পষ্ট। তদন্তে প্রকৃত কারণ উদঘাটনে সব বয়ানই যাচাই করা হবে।































