এক বছরের ব্যবধানে ঢাকার মেট্রোরেলে একই ধরনের দুর্ঘটনার পর অনেকের কৌতূহল এখন বিয়ারিং প্যাড নিয়ে। গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়েছিল। ওই ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। তবে ট্রেন চলাচল ১১ ঘণ্টা বন্ধ ছিল।
ওই দুর্ঘটনার পর বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে গুরুতর নিরাপত্তা উদ্বেগ তৈরি হয়। তারপর রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফার্মগেটে পুনরায় বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার ঘটনা ঘটে। ৮০ কেজি ওজনের ওই বস্তু পড়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এরপর মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক ঘণ্টা পর আগারগাঁও থেকে উত্তরা পর্যন্ত চলাচল শুরু হলেও মতিঝিল পর্যন্ত চলাচল এখনো বন্ধ।
মেট্রোরেলের ‘বিয়ারিং প্যাড’ হচ্ছে রাবার ও ইস্পাতের মিশ্রণে তৈরি আয়তাকার একধরনের প্যাড, যা অনেকটা বিছানার ম্যাট্রেসের মতো করে ব্যবহৃত হয়। মেট্রোরেলের উড়ালপথটিকে বলা হয় ভায়াডাক্ট। এর ওপরই রেললাইনসহ যাবতীয় স্থাপনা বসানো হয়। আবার ভায়াডাক্ট বসানো হয় স্তম্ভ বা পিলারের ওপর। এই স্তম্ভকে প্রকৌশলের ভাষায় বলা হয় পিয়ার।
মেট্রোরেলের উড়ালপথটি কংক্রিটের তৈরি, যা ৩০ থেকে ৪০ মিটার লম্বা একেকটি স্প্যান জোড়া দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। যেহেতু ভায়াডাক্ট ও পিয়ার দুটিই কংক্রিটের তৈরি, তাই দুটি কংক্রিটের বস্তুর একটির ওপর আরেকটি স্থাপন করলে ঘর্ষণজনিত সমস্যা হতে পারে। হতে পারে ক্ষয়, ঘটতে পারে স্থানচ্যুতিও। এ জন্যই ভায়াডাক্ট ও পিলারের মাঝখানে রাবার ও স্টিলের তৈরি বিয়ারিং প্যাড দেওয়া হয়, যা স্থাপনাটির সুরক্ষায় কাজ করে।
পিলার ও ভায়াডাক্টের সংযোগস্থলে বিয়ারিং প্যাডগুলো বসানোর জন্য বেজ বা ভিত্তি রয়েছে। এটি নাট-বল্টু কিংবা অন্য কিছু দিয়ে আটকানো থাকে না; বরং পিলার ও ভায়াডাক্টের মতো ভারী বস্তুর চাপে এটি টিকে থাকে। একেকটি স্প্যানের ওজন কয়েক শ টন হবে। কেন এই দুই ভারী বস্তুর চাপের পরও এভাবে ভিত্তি থেকে ছিটকে বিয়ারিং প্যাড নিচে পড়ে গেল, তা সবার কাছেই বড় প্রশ্ন। কারণ, এ ধরনের ঘটনা মেট্রোরেলের ইতিহাসে অনেকটা বিরল বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এর পেছনে নকশাগত ত্রুটি থাকতে পারে বলে মনে করেন ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তারা। মেট্রোরেলের লাইনসহ যাবতীয় নকশা প্রণয়নের দায়িত্বে ছিল জাপানের কয়েকটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের জোট এনকেডিএম অ্যাসোসিয়েশন।
ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, গত বছর যে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়েছিল, ওই একই স্থানে রোববার ঘটনা ঘটেনি। ৪৩৩ নম্বর পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়েছে, যা ফার্মগেট স্টেশনের ঠিক পশ্চিম পাশে। গত বছর ৪৩০ নম্বর পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়েছিল। মেট্রোরেলে (মতিঝিল থেকে উত্তরা পর্যন্ত) মোট পিলার আছে ৬২০টি। প্রতিটি পিলারে চারটি করে বিয়ারিং প্যাড আছে। সে হিসেবে মেট্রোরেলে মোট বিয়ারিং প্যাড আছে ২ হাজার ৪৮০টি।






























