ইউরোপের যেদেশে সংসার সামলাতে ঘণ্টা হিসেবে ‘স্বামী’ মিলছে ভাড়ায়


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২৫, ০১:৫৮ পিএম
ইউরোপের যেদেশে সংসার সামলাতে ঘণ্টা হিসেবে ‘স্বামী’ মিলছে ভাড়ায়
প্রতীকী ছবি

ইউরোপের দেশ লাটভিয়ায় দেখা দিয়েছে পুরুষের তীব্র সংকট। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সাংসারিক কাজকর্ম সামলাতে নারীরা এখন বাধ্য হয়ে ঘণ্টা হিসেবে 'স্বামী' বা সাময়িক সাহায্যকারী ভাড়া করছেন।

ইউরোস্ট্যাটের তথ্যমতে, লাটভিয়ায় পুরুষদের চেয়ে নারীর সংখ্যা ১৫.৫ শতাংশ বেশি, যা ইইউ গড়ের তিন গুণেরও বেশি। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এই ব্যবধান আরও বাড়ে। দেশটিতে গড় বয়স ৪৪.১ বছর এবং প্রতি ১,০০০ জনে মৃত্যুর হার ১৪.৯। এছাড়া আত্মহত্যার ঘটনাগুলোর ৮০ শতাংশেরও বেশি ঘটে পুরুষদের ক্ষেত্রে।

এই পরিস্থিতিতে লাটভিয়ার স্মার্ট ও সুন্দরী নারীদের একাই জীবন সামলাতে হচ্ছে এবং সাংসারিক শূন্যতা পূরণে তারা আধুনিক সেবাগুলোর ওপর নির্ভর করছেন।

পুরুষের এই ঘাটতি পূরণে লাটভিয়ায় 'কোমান্ডা-২৪'-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা 'মেন উইথ গোল্ডেন হ্যান্ডস' বা দক্ষ হাতের পুরুষদের সরবরাহ করে, যারা প্লাম্বিং, কাঠমিস্ত্রি, মেরামত এবং টিভি মাউন্টিংয়ের মতো কাজগুলো করে দেয়। তবে এখানে ডেটিং বা ফ্লার্ট করার কোনো সুযোগ নেই।

এছাড়া 'রেমন্টডারবি ডট এলভি' নামের একটি ওয়েবসাইট নারীদের অনলাইনে বা ফোনের মাধ্যমে 'এক ঘণ্টার স্বামী' ভাড়া করার সুবিধা দিচ্ছে। বুকিং দেওয়ার ৬০ মিনিটের মধ্যে তারা উপস্থিত হয়ে দেয়াল রং করা, পর্দা টাঙানো বা অন্যান্য গৃহস্থালি কাজ করে দেন। লাটভিয়ার পুরুষদের অভাবজনিত শূন্যতা পূরণে এই সেবাগুলো সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

দেশটিতে নারী-পুরুষের এই ভারসাম্যহীনতা ও একাকিত্বের কথা উঠে এসেছে ফেস্টিভ্যাল কর্মী দানিয়ার কথায়। সংবাদমাধ্যম 'দ্য সান'কে তিনি বলেন, 'এতে

দোষের কিছু নেই... তবে জীবনের ভালো ভারসাম্যের জন্য আপনি চাইবেন ফ্লার্ট বা গল্প করার মতো আরও পুরুষ সঙ্গী থাকুক। এটা জীবনকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।'

দানিয়ার বন্ধু জেন এ বিষয়ে বলেন, 'এ কারণেই আমার সব বান্ধবী বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে এবং সেখানে প্রেমিক খুঁজে নিয়েছে।'

অবশ্য স্বামী ভাড়া দেওয়ার এই ধারণা শুধু লাটভিয়াতেই সীমাবদ্ধ নয়। ২০২২ সালে লরা ইয়াং নামের এক নারী তার স্বামী জেমসকে ছোটখাটো কাজের জন্য ভাড়া দিয়ে অতিরিক্ত আয়ের ব্যবস্থা করে ভাইরাল হয়েছিলেন। তাদের ব্যবসা 'রেন্ট মাই হ্যান্ডি হাজবেন্ড'-এর অধীনে জেমস সাধারণ মেরামত, রং করা, টাইলস ও কার্পেট লাগানোর কাজ করতেন। ৪২ বছর বয়সী জেমস প্রতি ঘণ্টায় ৪৪ ডলার বা সারা দিনের জন্য ২৮০ ডলার নিতেন। সেবাটি এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে, অনেক কাজ তাদের ফিরিয়ে দিতে হতো।

কেন এই পুরুষ সংকট?

বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার নানা নেতিবাচক উপাদানের কারণে পুরুষদের গড় আয়ু কমে যাওয়ায় এই ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে। 'ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাস'-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'নারীদের (১০%) তুলনায় পুরুষদের (৩১%) ধূমপান করার সম্ভাবনা তিন গুণ বেশি। এছাড়া পুরুষদের ৬২ শতাংশই অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতায় ভুগছেন, যেখানে নারীদের ক্ষেত্রে এই হার ৫৭ শতাংশ।'

লাটভিয়ার সমাজবিজ্ঞানী বাইবা বেলা বলেন, '৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সের মধ্যে প্রথমবারের মতো লিঙ্গ ভারসাম্যহীনতা স্পষ্ট হয়। এই বয়সের নারীদের তুলনায় পুরুষদের মৃত্যুর হার তিন গুণ বেশি।'

তিনি আরও বলেন, 'গাড়ি চালানো, মদ্যপান এবং কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা—এসব ঝুঁকি নারীদের চেয়ে পুরুষদের ক্ষেত্রেই বেশি দেখা যায়।'

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোর মধ্যে লাটভিয়ায় নারী ও পুরুষের গড় আয়ুর ব্যবধান সবচেয়ে বেশি। সেখানকার নারীরা পুরুষদের চেয়ে ১১ বছর বেশি বাঁচেন। 

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এগ্রিস রিকস্টস এর পেছনে দেশটির তথাকথিত 'পৌরুষত্ব' বা মাচো সংস্কৃতিকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, 'এখানে পৌরুষত্বের ধারণা হলো—আপনি যত বেশি অ্যালকোহল পান করতে পারবেন, আপনি তত বড় পুরুষ।'

মনোবিশ্লেষক অ্যানসিস স্ট্যাবিঙ্গিস উল্লেখ করেন, অর্থনৈতিক চাপ এবং সামাজিক পরিবর্তন অনেক পুরুষকে বিষণ্নতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। তিনি বলেন, 'সমস্যা সমাধান করতে না পেরে তারা তখন অ্যালকোহল বা জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে।'

লাটভিয়ার জনপ্রিয় কলামিস্ট ডেসে রুকসানে বলেন, 'স্মার্ট মেয়েরা একা। সত্যিকারের সুন্দরী মেয়েরাও একা—যদি তারা স্মার্ট হয়। তারা নিজেদের সমকক্ষ সঙ্গী খুঁজে পেতে চায়। কিন্তু পুরুষদের হাতে অনেক বিকল্প থাকায় তাদের নিখুঁত হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তারা জানে টিভি সেটের সামনে বসে থাকলেও তারা একজন নারী পাবে। আর একজন না মিললে, অন্যজন তো আছেই। স্মার্ট নারীরা এমন পুরুষদের সঙ্গী হিসেবে চায় না।'

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর

Link copied!