নতুন পে-স্কেল: অর্থের জোগান হবে সরকারি বাসা ভাড়া বৃদ্ধি আর আয়কর থেকে?


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২৫, ০৯:৩৯ এএম
নতুন পে-স্কেল: অর্থের জোগান হবে সরকারি বাসা ভাড়া বৃদ্ধি আর আয়কর থেকে?

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়নে ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে বলে ধারণা করছে অর্থ বিভাগ। তবে শুধু ব্যয় নয়, নতুন কাঠামো কার্যকর হলে রাজস্ব আদায়ের পরিধিও বাড়বে—এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছে সংস্থাটি।

সম্প্রতি জাতীয় পে-কমিশনের কাছে পাঠানো মতামতে অর্থ বিভাগ জানিয়েছে, নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে, যার প্রভাবে অর্থনীতিতে লেনদেন বাড়বে এবং সরকারের রাজস্বও বৃদ্ধি পাবে।

এক দশক পর নতুন কাঠামো

২০১৫ সালের পর থেকে চাকরিজীবীদের বেতনভাতা আর পুনর্বিন্যাস করা হয়নি। নিয়মিত ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট থাকলেও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে নিম্নবেতনভুক্ত কর্মচারীরা এখন কঠিন পরিস্থিতিতে আছেন। তাই নতুন পে-স্কেলকে সময়ের দাবি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

জাতীয় পে-কমিশনের সূত্রে জানা গেছে, জীবনযাত্রার ব্যয়, মূল্যস্ফীতি ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার বেতন শতভাগ পর্যন্ত বাড়তে পারে। তবে এতে সরকারের মোট ব্যয়ও দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পে-কমিশনের সভাপতি ও সাবেক অর্থ সচিব জাকির আহমেদ খান বলেন, “আমাদের হাতে সম্পদ সীমিত। সেই সীমাবদ্ধতার মধ্যেই সর্বোচ্চ বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব আমরা দেব।”

চলতি মেয়াদেই বাস্তবায়ন

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, নতুন পে-স্কেল বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদের মধ্যেই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, “এটির বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ চলতি (২০২৫–২৬) অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া হবে। আগামী বছরের মার্চ বা এপ্রিলেই এটি কার্যকর করা সম্ভব।”

অর্থের উৎস নিয়ে পরিকল্পনা

অতিরিক্ত অর্থের সংস্থান করতে অর্থ বিভাগ দুটি সম্ভাব্য উৎস চিহ্নিত করেছে—
১️. চাকরিজীবীদের আয়কর
২️. সরকারি বাসার ভাড়া বৃদ্ধি

বর্তমানে সর্বনিম্ন বেতন স্কেল ৮,২৫০ টাকা। নতুন কাঠামোয় এটি বেড়ে ১৬ হাজার টাকার বেশি হতে পারে। এতে এখন পর্যন্ত করমুক্ত থাকা সর্বনিম্ন বেতনভোগীরাও আয়করের আওতায় আসবেন। ফলে সরকার নতুন উৎস থেকে বড় অঙ্কের রাজস্ব পাবে বলে মনে করছে অর্থ বিভাগ।

এছাড়া, সরকারি বাসায় বসবাসরত কর্মচারীদের বাড়িভাড়া হারও সমন্বয় করা হবে। এতে সরকার অতিরিক্ত রাজস্ব আয় করতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অর্থ বিভাগের মতে, “বেতন বৃদ্ধি শুধু ব্যয় নয়, বরং রাজস্ব সংগ্রহেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সামগ্রিকভাবে এটি অর্থনীতিতে ভারসাম্য আনতে সহায়ক হবে।”

অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট ও প্রয়োজনীয়তা

অর্থ বিভাগ তাদের মতামতে আরও বলেছে, “চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের অগ্রযাত্রা এবং ২০২৬ সালে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে সরকারি প্রশাসনে দক্ষ ও মেধাবী জনবল আকৃষ্ট করা জরুরি।”
তাদের মতে, একটি প্রতিযোগিতামূলক ও সময়োপযোগী বেতন কাঠামো জনসেবা কার্যক্রমে পেশাগত দক্ষতা, সুশাসন ও মনোবল বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

কমিশনের কাজের অগ্রগতি

সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ন্যায়সংগত ও কার্যকর বেতন কাঠামো প্রণয়নে গঠিত জাতীয় পে-কমিশন ইতোমধ্যে অনলাইনে চার দফা মতামত সংগ্রহ করেছে। সংগঠন ও সমিতিগুলোর সঙ্গে একাধিক বৈঠকও সম্পন্ন হয়েছে। প্রাপ্ত মতামত যাচাই-বাছাই শেষে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সুপারিশপত্র সরকারের কাছে জমা দেওয়ার আশা করছে কমিশন। তথ্যসূত্র: যুগান্তর

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!