• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২০ মুহররম ১৪৪৫
জুলহাস-তনয় হত্যা মামলার রায়

নেই অনুশোচনা, উল্টো ঔদ্ধত্য প্রকাশ


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ৩১, ২০২১, ০৮:৫৯ পিএম
নেই অনুশোচনা, উল্টো ঔদ্ধত্য প্রকাশ

সমকামী অধিকারকর্মী জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয় হত্যা মামলার রায় হয়েছে মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট)। রায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ছয় আসামির মধ্যে চারজনকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তাদের দেখা গেছে খোশমেজাজে। আসামিদের একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসাহাসি ও কথাবার্তা বলতেও দেখা গেছে। এক পুলিশ কর্মকর্তা এ সময় তাদের হাসি থামাতে বলেন। জবাবে আসামিরা বলেন, “আমাদের কি কথা বলার অধিকার নেই? আমরা কি মানুষ না?”

এমনকি হাতকড়া পরানোয় নিজেদের মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা। আদালতে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের উদ্দেশ করে জুলহাজ-তনয়ের এই হত্যাকারীরা নিজেদের ‘জঙ্গি’ উল্লেখ করে বলেন, “আমরা জঙ্গি বলে কি আমাদের কোনো মানবাধিকার নেই?”

বিচারক আদালতে আসার আগে এক ফাঁকে তাদের একজন আদালতে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, “আমরা দুই-তিনটা মামলায় ফাঁসির আসামি। তা-ও কেন আদালতের এজলাসে আমাদের হাতকড়া পরিয়ে রাখতে হবে?” তারা বলেন, হাতকড়া পেছনে না বেঁধে, সামনে বাঁধা হলে তাদের জন্য ‘একটু ভালো হয়’। তারা তো আরও কয়েকটা মামলার ফাঁসির আসামি। সে ক্ষেত্রে ‘অন্য কিছু’ করার সুযোগও পাবেন না বলে দাবি করেন তারা। এরপর ‘বিশেষ বিবেচনায়’ আদালতের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা পুলিশকে তাদের হাতকড়া পেছন থেকে সামনের দিকে এনে দিতে বলেন।

এদিকে রায়ের আগে পুলিশ হেলমেট, বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরিহিত আসামিদের কাঠগড়ায় হাতকড়া পরাতে গেলে পুলিশের সঙ্গেও তারা রাগ দেখায়। এ সময় আসামিদের মধ্যে আরাফাত রহমান ও শেখ আব্দুল্লাহ তাদের হাতকড়া পরিয়ে পেছনে হাত রাখাতে আপত্তি জানান। তারা বলেন, “আমাদের হাতকড়া লাগানো হয়েছে কেন? আপনারা (পুলিশ) মানবাধিকার বিষয়ে কথা বলেন। আমাদের কি কোনো মানবাধিকার নেই?”

রায় শোনার পর দেখা গেছে তাদের আস্ফালন। রায় শুনে কাঠগড়ায় দাঁড়ানো জঙ্গি আরাফাত বলেন, “এই ‘তাগুতি’ বিচারব্যবস্থা আমাদের পায়ের নিচে।”
আরেক আসামি আসাদুল্লাহ বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ। এই রায়ে আমরা সফল। আমরা আখেরাতে সফল হব।”

মঙ্গলবার বেলা ১২টা ৮ মিনিটে রায় পড়া শুরু করেন বিচারক। রায়ে সাব্বিরুল হক চৌধুরী ও মওলানা জুনায়েদ আহম্মেদ খালাস পান। বাকি ছয়জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। রায় পড়ার সময়ও বেশ হাসিখুশি দেখা যায় জুলহাজ-তনয়ের হত্যাকারীদের। একপর্যায়ে তাদের ‘আলহামদুলিল্লাহ’ এবং তাদের ‘কোনো অনুশোচনা নেই’ বলতেও শোনা যায়।

ফাঁসির রায় শুনেও দণ্ডিতদের যে প্রতিক্রিয়া তাতেই তাদের বেপরোয়া মনোভাবের বিষয়টি উঠে এসেছে। আসামিরা রায় শুনে হেসেছেন, উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।

মঙ্গলবার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান মোট ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন, যাদের মধ্যে চারজন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আর দুই আসামি ছিলেন পলাতক। আদালতে উপস্থিত ছিলেন মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন, আরাফাত রহমান ওরফে সিয়াম ওরফে সাজ্জাদ ওরফে শামস, শেখ আব্দুল্লাহ ও আসাদুল্লাহ।

চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে জিয়া, আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে আবদুল্লাহ পলাতক।

২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় কলাবাগানের বাসায় ঢুকে জুলহাস মান্নান ও তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ সময় বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী পারভেজ মোল্লাকেও কুপিয়ে আহত করা হয়। হত্যার পর পালানোর সময় রাস্তায় এক হামলাকারীকে জাপটে ধরেন পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক মমতাজউদ্দিন। তাকেও কুপিয়ে পালিয়ে যায় ওই সন্ত্রাসী। ওই ঘটনায় কলাবাগান থানায় জুলহাজের বড় ভাই মিনহাজ মান্নান ইমন হত্যা মামলা এবং সংশ্লিষ্ট থানার এসআই মোহাম্মদ শামীম অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলা করেন।

Link copied!