• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

সুরে সুরে কথা হয় যে গ্রামে


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২১, ০২:৩৫ পিএম
সুরে সুরে কথা হয় যে গ্রামে

বিশ্বজুড়েই ভিন্ন গ্রামবাসীর ঐতিহ্যগত পার্থক্য রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে ভাষাগত পার্থক্যও। বিভিন্ন গ্রামের বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষা থাকে। কিন্তু সুরের ছন্দে কথা হয় এমন ভাষা কি কখনো শুনেছেন! গানের জন্য় নয়, ভাব প্রকাশে ছন্দ মিলে গ্রামবাসীর। মেঘালয়ের গহিন অরণ্যে অবস্থিত এই গ্রামটি, যার নাম কংথং।

পাহাড়ের গায়ে গাছগাছালি দিয়ে ঘেরা শান্ত-নিবিড় একটি গ্রাম কংথং। বিচিত্র শিসের মাধ্যমেই ভাব প্রকাশ করেন এখানকার বাসিন্দারা। কখনো কিচিরমিচির শব্দের সুরও শোনা যায়। পাখির সুরের মতো করেই এখনকার বাসিন্দারা নিজেদের ভাব আদান-প্রদান করেন।

কংথং গ্রামটি ভারতের চেরাপুঞ্জি থেকে ৫৬ কিলোমিটার দূরে এবং শিলং থেকে ৫৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মেঘের আড়ালে ঢাকা ছোট্ট এই পাহাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ৭০০ জন। তারা আর্থিকভাবে স্বনির্ভর। গ্রামবাসীর আলাদা নামও রয়েছে। তবু একে অপরকে ডাকেন সুরে সুরে। সবার জন্য়ই পৃথক নামের সুর রয়েছে। একজনের ডাকে অন্যজন ভুলেও সাড়া দেন না। আর এই কারণেই এই গ্রামের নাম হয়েছে আ হুইসেল ভিলেজ। যেখানে নামের বদরে পাখির আওয়াজ করে একে অপরকে ডাকা হয়।

তুরস্কের কুস্কয় আর স্পেনের লা গোমেরা থেকে ভারতের চেরাপুঞ্জির কংথং। ভৌগোলিক অবস্থানের ৩টি পৃথক দেশের হলেও তাদের ভাব প্রকাশে মাধ্যম কিন্তু একই রকম। মানে তারা পাখির ডাকেই ডাকেন।

গ্রামবাসীরা জানান, এই গ্রামের মানুষের কথা বলার এক বিশেষ ঐতিহ্য রয়েছে। শব্দে নয়, তারা গান বা সুললিত সুরে একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, ডাকেন। আগে শিকারের সময় এইভাবে নাম ডাকার শুরু। সেই প্রথাই এখনো চলছে।

প্রতিবছর গ্রীষ্মকালে নির্দিষ্ট পূর্ণিমায় গ্রামের অবিবাহিত নারী-পুরুষ আগুন জ্বেলে গানের আসর বসান। যে ছেলে ভালো গান করে, সে গ্রামের সবচেয়ে সুন্দরী কুমারীকে বিয়ে করতে পারেন।

কংথং ট্যুরিজম কো-অপারেটিভ সোসাইটির চেয়ারম্যান রোথেল খংসিট জানান, বহু যুগ ধরে এই গ্রামের গর্ভবতী নারীরা পাহাড় জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে কান পেতে পাখির ডান, ঝরনার শব্দ শোনেন। সেই শব্দ থেকেই তারা সুর বোনেন। সন্তান জন্মের পর সেই সুর তার কানের কাছে গুনগুন করে। সেই সুর থেকেই গান হয়, যার নাম জিংগারওয়াই লেওবেই। ওই গানের প্রথম অক্ষর আর তার সুর দিয়ে সন্তানের নাম ঠিক হয়।

এই গ্রামের মানুষ লেখাপড়াও জানে। প্রতিটি শিশুই স্কুলে যায়। অনেকে স্নাতক ডিগ্রিও নিয়েছেন। কংথং ছাড়াও এর আশপাশের আরও বেশ কিছু গ্রামের বাসিন্দারাও এখন সুরের ছন্দে ডেকে নেয়ে এক অন্যকে।

Link copied!