• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২, ২ জ্বিলকদ ১৪৪৬

সরস্বতী পূজায় উৎসব যেভাবে পালন হয়


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৫, ০৫:৩৫ পিএম
সরস্বতী পূজায় উৎসব যেভাবে পালন হয়
সূত্র: সংগৃহীত

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে প্রচলিত অন্যতম উৎসব সরস্বতী পূজা। এই পূজা হলো বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আরাধনার বিশেষ উৎসব। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং বিদ্যাচর্চার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা এই পূজাকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে উদযাপন করে থাকেন।

সরস্বতী পূজার কয়েকদিন আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়। মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ঘরবাড়িতে সরস্বতীর মূর্তি বসানোর জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়। অনেক জায়গায় বিশেষভাবে সাজিয়ে তোলে প্যান্ডেল, যাকে ‘মন্ডপ’ বলা হয়। পূজার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন—দেবীর মূর্তি, বেদী, চন্দন, ধূপ, দীপ, ফুল, ফল, মিষ্টি, হলুদ, দুগ্ধ, ঘি, কলা পাতা ইত্যাদি সংগ্রহ করা হয়। শিক্ষার্থীরা তাদের বই-খাতা পূজার জন্য আলাদা করে রাখে।

পূজার দিন সকাল থেকেই পূজার আয়োজন শুরু হয়। প্রথমে দেবী সরস্বতীর মূর্তির সামনে কলাগাছের দাঁড়া দিয়ে বেদী সাজানো হয়। এরপর সরস্বতী বন্দনা ও মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে পূজা শুরু হয়। পুরোহিত বা পরিবারের প্রবীণ ব্যক্তি মন্ত্রপাঠ করে দেবীকে আহ্বান জানান।

পূজার প্রধান ধাপসমূহের মধ্যে রয়েছে ঘট স্থাপন। পূজার শুরুতে একটি তামার বা মাটির ঘট (কলস) স্থাপন করা হয়, যার মধ্যে গঙ্গাজল, আম্রপল্লব ও নারকেল রাখা হয়। এটি শুভ প্রতীক হিসেবে পূজার সময় ব্যবহার করা হয়।

মন্ত্রপাঠ ও বিশেষ বিধি অনুসারে সরস্বতীর মূর্তিতে দেবীর শক্তি আহ্বান করা হয়। এই প্রক্রিয়াকে ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’ বলা হয়। এরপর দেবীকে ফুল, ফল, মিষ্টি ও অন্যান্য উপকরণ নিবেদন করা হয়। বাসন্তী রঙের ফুল, বিশেষ করে শিউলি ও পালাশ ফুল বেশি ব্যবহার করা হয়।

পুষ্পাঞ্জলি প্রদান এই পূজার অন্যতম প্রধান অংশ। ভক্তরা পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণ অনুসারে দেবীর উদ্দেশ্যে ফুল অর্পণ করেন। সাধারণত, শিক্ষার্থীরা কলম, খাতা বা বই হাতে নিয়ে দেবীর কাছে বিদ্যার বর কামনা করে অঞ্জলি প্রদান করে।

কিছু জায়গায় সরস্বতী পূজার সঙ্গে যজ্ঞও করা হয়। পূজার শেষে ধূপ, দীপ ও ঘণ্টাধ্বনির মাধ্যমে দেবীর আরতি করা হয়। এরপর ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। এতে ফল, খিচুড়ি, পায়েস, মিষ্টি ইত্যাদি থাকে।

এই পূজায় বিশেষ রীতি ও উৎসবের মধ্যে রয়েছে বিদ্যারম্ভ। ছোট শিশুরা যারা এখনও বিদ্যাচর্চা শুরু করেনি, তাদের জন্য এই দিনটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। শিশুকে প্রথমবারের মতো অক্ষর লেখানোর রীতি ‘হাতেখড়ি’ পালন করা হয়।

অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পূজার পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ছাত্র-ছাত্রীরা গান, নাচ, আবৃত্তি ও নাটক পরিবেশন করে। এছাড়াও অনেক স্থানে সরস্বতী পূজার সঙ্গে বসন্ত উৎসবও পালন করা হয়। এদিন অনেকে হলুদ রঙের পোশাক পরে, যা বসন্তের প্রতীক।

পূজার শেষে দেবীর মূর্তি বিসর্জন দেওয়া হয়। দলবদ্ধভাবে নদী, পুকুর বা জলাশয়ে প্রতিমা বিসর্জন করা হয়। এই সময় ঢাক-ঢোল, গান-বাজনার মাধ্যমে আনন্দ উদযাপন করা হয়। সরস্বতী পূজা শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি বিদ্যা, সংস্কৃতি ও আনন্দের এক মিলনক্ষেত্র।

Link copied!