• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

পুড়ে গেলে কী করবেন জেনে নিন


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২৩, ০১:০৪ পিএম
পুড়ে গেলে কী করবেন  জেনে নিন

আগুনে পুড়ে গেলে নিজেই প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু করা সম্ভব। তবে যদি পুড়ে যাওয়া অংশ অনেক বেশি হয় কিংবা গভীর ক্ষত সৃষ্টি হলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। শরীরের কোথাও পুড়ে গেলে তীব্র ব্যথা হতে পারে। এ ছাড়াও পোড়া স্থানে কী কী হতে পারে চলুন জেনে নিই

  • ত্বক লাল হয়ে যেতে পারে
  • চামড়া উঠে আসতে পারে
  • ফোসকা পড়া
  • ফুলে যাওয়া
  • ত্বক পুড়ে কালো অথবা একেবারে সাদাটে হয়ে যাওয়া
  • জ্বালাপোড়া হওয়া

তবে,মারাত্মকভাবে পুড়ে গেলেও তেমন ব্যথা না-ও হতে পারে। কারণ শরীরের কোথাও গভীরভাবে পুড়ে গেলে ব্যথা অনুভব করার জন্য প্রয়োজনীয় নার্ভ বা স্নায়ুও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই এমন ক্ষেত্রে অবহেলা না করে রোগীকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত।

পুড়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা
উচ্চ তাপ দুই ধরনের উৎস থেকে সৃষ্টি হতে পারে। যেমন শুকনা ও ভেজা। শুকনা তাপের উৎসের মধ্যে রয়েছে আগুন, গরম তৈজসপত্র ও গরম ইস্ত্রি। অন্যদিকে গরম পানি ও জলীয় বাষ্প হলো ভেজা তাপের উৎস। তবে উভয় ধরনের পোড়ায় একই রকম চিকিৎসা দেওয়া হয়। যেকোনো ধরনের পোড়ার ক্ষেত্রেই যত দ্রুত সম্ভব প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করতে হবে। এর মাধ্যমে ত্বকের ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা যায়। পোড়ার প্রাথমিক চিকিৎসায় ধাপগুলো-

  • রোগীকে তাপের উৎস থেকে দ্রুত কোথাও সরিয়ে নিতে হবে। আশেপাশে কেউ থাকলে তাকে সাহায্যের জন্য ডাকতে হবে।
  • মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে, ভারী কম্বল দিয়ে পেঁচিয়ে, পানি দিয়ে কিংবা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের সাহায্যে জ্বলন্ত আগুনের শিখা নিভিয়ে ফেলতে হবে। কাপড়ে আগুন ধরলে সেটি সাথে সাথে খুলে ফেলতে হবে।
  • আক্রান্ত স্থান ঠান্ডা করার জন্য ট্যাপের পানির মতো প্রবাহমান পানির নিচে কমপক্ষে ২০ মিনিট ধরে রাখতে হবে। এটি সম্ভব না হলে বালতি ও মগের সাহায্যে কমপক্ষে ২০ মিনিট ধরে পানি ঢালতে হবে।
  • সাধারণ তাপমাত্রার অথবা সামান্য ঠান্ডা পানি ব্যবহার করতে হবে। বরফ বা বরফ-ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা যাবে না।
  • পুড়ে যাওয়া স্থান থেকে কাপড় ও গয়না খুলে ফেলতে হবে। তবে কোনো কিছু চামড়ার সাথে লেগে গেলে সেটি টানাটানি করে খোলার চেষ্টা করা যাবে না।
  • ক্ষতস্থানটি পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত গজ দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। গজ না থাকলে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত কাপড় অথবা পলিথিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • রোগীকে একটি পরিষ্কার কম্বল অথবা চাদর দিয়ে মুড়িয়ে শরীরের অনুকূল তাপমাত্রা বজায় রাখতে হবে। ক্ষতস্থানে যেন কোনোভাবেই চাপ অথবা ঘষা না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল অথবা আইবুপ্রোফেন সেবন করা যাবে।
  • মুখ অথবা চোখ পুড়ে গেলে রোগীকে বসিয়ে রাখার চেষ্টা করতে হবে। এটি ফোলা কিছুটা কমাতে সাহায্য করবে। অন্যদিকে পা কিংবা শরীরের নিচের অংশ পুড়ে গেলে রোগীকে শুইয়ে দিয়ে পা উঁচু করে রাখতে হবে।
  • রাসায়নিকে ভেজা কাপড় সাবধানে সরিয়ে ফেলতে হবে। হাসপাতালে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ক্ষতস্থানটি প্রচুর পরিমাণে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুতে হবে।

যা করবেন না
 

  • ঘরে বসে বড়সড় পোড়ার চিকিৎসা করার চেষ্টা করা যাবে না।
  • টুথপেস্ট, তেল ও হলুদ ক্ষতস্থানে লাগানো যাবে না।
  • ক্ষতস্থানে বরফ বা তীব্র শীতল পানি লাগানো যাবে না। এতে ক্ষতটি আরও গভীর হয়ে যেতে পারে।
  • লম্বা সময় ধরে রোগীর শরীরে ঠান্ডা পানি ঢালা যাবে না। এতে রোগীর শরীর অতিরিক্ত ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে।
  • ক্ষততে সরাসরি তুলা, টিস্যু কিংবা ক্রিম লাগানো যাবে না।
  • হাসপাতালে যাওয়ার আগে ফোসকা ফাটানো যাবে না।
  • ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ক্ষতস্থানের ড্রেসিং করা কিংবা কোনো অ্যান্টিবায়োটিক অথবা অন্য কোনো মলম লাগানো ঠিক নয়।
  • নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে অন্যকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া শুরু করবেন না।
  • প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পরে রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে কি না সেটি পোড়ার ধরন ও আকারসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে।

গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য

কখনো কখনো গুরুতরভাবে পুড়ে যাওয়া রোগীর শরীরে অক্সিজেন মারাত্মকভাবে কমে যেতে পারে। এর ফলে রোগীর জীবন বিপন্ন হতে পারে। একে ডাক্তারি ভাষায় ‘শক’ বলা হয়। এই অবস্থায় নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে—

  • শরীর ঘাম দিয়ে ঠান্ডা হয়ে যাওয়া
  • পালস বা নাড়ির গতি বেড়ে যাওয়া
  • শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়ে যাওয়া
  • চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া
  • হাই তুলতে থাকা
  • জ্ঞান হারিয়ে ফেলা

 

এই ধরনের লক্ষণ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে নিকটস্থ হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সম্ভব হলে রোগীকে চিৎ করে শুইয়ে দিয়ে দুই পা উঁচু করে রাখুন। প্রয়োজনে পায়ের নিচে পরিষ্কার বালিশ দিতে পারেন। 

রোগীর মুখ ও শরীরের পুড়ে যাওয়া অংশ বাদে শরীরের বাকি অংশ পরিষ্কার কম্বল কিংবা চাদর দিয়ে ঢেকে দিন। 

রোগীকে মুখে কোনো ধরনের খাবার অথবা পানীয় দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। এগুলো শ্বাসনালীতে গিয়ে ইনফেকশন করতে পারে। এমনকি রোগীর জীবন হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে।

Link copied!