• ঢাকা
  • রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩০, ১৭ শা'বান ১৪৪৬

যে অরণ্যে পুরুষদের প্রবেশে মানা


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২১, ০৩:১৫ পিএম
যে অরণ্যে পুরুষদের প্রবেশে মানা

ইন্দোনেশিয়ার ৩৪টি প্রদেশের একটি হল পাপুয়া। এর উত্তরে প্রশান্ত মহাসাগর দক্ষিণে আরফুরা সমুদ্র। পাপুয়া’র এক ম্যানগ্রোভ অরণ্যে শুধু মেয়েরাই প্রবেশ করতে পারে। নাম টোনোটিওয়াট। যার অর্থ ‘ফিমেল ফরেস্ট’ বা নারীদের অরণ্য। 

পাপুয়ার বাসিন্দাদের পছন্দের খাবার ঝিনুক এবং নানারকম ফলের জোগান দেয় এই অরণ্য। সে সব সংগ্রহ করে আনার কাজও মেয়েরাই করেন। রাজধানী জয়পুরার ক্যামপাং এনগ্রোসের মাঝামাঝি ওই ম্যানগ্রোভ অরণ্য ছড়িয়ে আছে প্রায় ৮ হেক্টর এলাকা জুড়ে।

এই অরণ্যে পুরুষেরা প্রবেশ করতে পারেন শুধুমাত্র কাঠ সংগ্রহের জন্য। তবে তার আগে তাদের নিশ্চিত হতে হয় যে জঙ্গলে কোনও নারী নেই। তা নাহলে গুনতে হয় জরিমানা। 

জরিমানার পরিমাণ নেহাৎ কম নয়। জঙ্গলে প্রবেশ করার জন্য ১০ লক্ষ রুপাইয়া (স্থানীয় মুদ্রা) জরিমানা দিতে হয়।

নারীদেরও অবশ্য জঙ্গলে প্রবেশের বেশ কিছু নিয়ম আছে। জঙ্গলে প্রবেশের পর একত্রিত হয়ে শপথ নেন জঙ্গলে থাকাকালীন কেউ কাউকে ছেড়ে যাবেন না। সমুদ্র লাগোয়া জঙ্গলের জলাভূমিতে নেমে ঝিনুক সংগ্রহ করেন মেয়েরা।

এই জঙ্গল পাপুয়ার নরীদের কাছে একটা খোলা আকাশের মতো। স্থানীয় নারী আগস্টিনা আইও জানান, এখানে তারা চিৎকার করে নিজেদের মনের কথা বলেন। দুঃখের কথা, এমনকি না বলতে পারা যন্ত্রণার কথাও বলেন নিশ্চিন্তে। মনকে হালকা করতে পারেন। একে অপরের কাছে পরামর্শ চাইতে বা দিতে পারেন। এক কথায় জঙ্গল তাদের ভাল থাকার ঠিকানা।

স্থানীয় নারীরা জানান, ভাটার সময় কাঠের নৌকায় চেপে বেরিয়ে পড়েন তারা। সারা দিন থাকেন জঙ্গলেই। লম্বাটে কাঠের ওই নৌকার নাম ‘কোলে কোলে’। তার ভিতরে থাকে তাদের দুপুরের খাবার। জঙ্গলে ঝিনুক সংগ্রহ করতে গোটা দিন কেটে যায়। তাই দুপুরের খাবার সঙ্গে রাখা। সারা দিনের সংগ্রহও ওই নৌকায় নিয়েই ফেরেন মহিলারা। বিক্রি করেন স্থানীয় বাজারে।

জঙ্গলে থাকার আরও একটি নিয়ম আছে। যত ক্ষণ জঙ্গলে থাকেন তত ক্ষণ গলা ছেড়ে গান করেন মহিলারা। এই গান আসলে জঙ্গলে ভুল করে ঢুকে পড়া পুরুষের প্রতি সঙ্কেত। গান গেয়েই বলা ‘তফাৎ যাও, আমরা আছি।’

তবে নারীদের প্রিয় জঙ্গল এখন বিপন্ন। শহরের আবর্জনা ক্রমে এসে জড়ো হচ্ছে ম্যানগ্রোভের চার পাশে। প্লাস্টিকের বোতল, পাত্র ভরে গিয়েছে সর্বত্র। স্থানীয় মহিলারা জানিয়েছেন, এখন ঝিনুক, ফলমূলের বদলে তাঁরা প্লাস্টিক খুঁজে পান বেশি।

সূত্র: আনন্দবাজার।

Link copied!