বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৫ হাজার ১৬৩ জন শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। ১৫ হাজার ১৬৩ পদের মধ্যে ১২ হাজার ৮০৭টি এমপিওভুক্ত শূন্য পদ। নন-এমপিও পদ আছে ২ হাজার ৩৫৬টি। বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসব শিক্ষক নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগ্রহীরা ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।
প্রার্থীকে এনটিআরসিএ কর্তৃক সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিবন্ধনধারী এবং সমন্বিত মেধা তালিকাভুক্ত হতে হবে। এছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে জারিকৃত সর্বশেষ জনবল কাঠামো অনুযায়ী কাম্য শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে। ১ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে ৩৫ বছর বা তার কম হতে হবে। তবে ২০১৮ সালের ১২ জুনের আগে যাঁরা শিক্ষক নিবন্ধন সনদ পেয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা শিথিলযোগ্য।
শূন্য পদের বিপরীতে প্রার্থীসংখ্যা বেশি থাকায় যেকোনো প্রার্থী মনে করতে পারেন, একটি বা দুটি আবেদন করলে তার চাকরি না-ও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তিনি নিজের বাড়ির আশপাশে অবস্থিত একাধিক প্রতিষ্ঠানে এবং অনেক দূরের একাধিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারেন। আবেদন করার আগে কিছু বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এনটিআরসিএ আবেদন করতে হলে কোন বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে, সে সম্পর্কে—
● নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর বেশি বা মেরিট পজিশন আগে না থাকলে ভালো প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা কম। সে ক্ষেত্রে অধিকসংখ্যক আবেদন করার প্রয়োজন হতে পারে।
● নিজের এলাকায় ও কম দূরের প্রতিষ্ঠানগুলোকে পছন্দের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিশেষ করে যাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যা আছে এবং যারা নারী প্রার্থী, তাদের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
● প্রতিষ্ঠানের অবস্থা, কর্মপরিবেশ, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, আর্থিক সচ্ছলতা ও শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি সন্তোষজনক কি না, তা জেনে নিতে হবে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম থাকলে প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধা কম।
● আবেদনের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত পদটি এমপিওভুক্ত কি না বা এমপিওভুক্ত হবে কি না, হলে কত দিন লাগতে পারে, তা নিশ্চিত হতে হবে।
● কোনো কারণে নন-এমপিও পদে আবেদন করতে চাইলে, তা জেনে-বুঝেই করা উচিত। কারণ, সরকারি আদেশ থাকার পরেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান থেকে নন-এমপিও শিক্ষকদের আর্থিক সুবিধা কম দেওয়া হয়।
● দূরের কোনো প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে হলে, সেই প্রতিষ্ঠান ও এলাকা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। সেখানে যাতায়াত সুবিধা কেমন, থাকা-খাওয়ার সুবিধা আছে কি না, নিরাপত্তাব্যবস্থা কেমন, ছুটিতে বা প্রয়োজনে নিজের আপনজনের কাছে যাওয়া-আসা করা যাবে কি না, এসব বিষয়ে খোঁজখবর নিতে হবে আগে।
● গ্রামে কিংবা শহরে যেখানে বসবাস করতে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, সেখানকার প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শহরে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানে আবেদন করার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, শহরের প্রতিষ্ঠানে বেতন-ভাতা কিছুটা বেশি থাকলেও জীবনযাপনের ব্যয় আরও অনেক বেশি।
● স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানে চাকরি আপনি বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বা অস্বস্তি বোধ করবেন, তা ভেবে নেওয়া উচিত।
● যে পদে আবেদন করবেন সে পদের বেতন স্কেল, বর্তমান মূল বেতন, অন্যান্য ভাতার পরিমাণ, বেতন বৃদ্ধির পরিমাণ, পদোন্নতির সুযোগ, অবসরকালীন সুবিধা এসব বিষয় আগেই নিশ্চিত হওয়া উচিত।
● একাধিক স্তরবিশিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত পদে যোগদান করলে কোন কোন স্তরে ক্লাস নিতে হবে, তা জেনে নেওয়া এবং সেই স্তরে ক্লাস নেওয়ার জন্য নিজের ইচ্ছা ও যোগ্যতা আছে কি না বা থাকবে কি না, তা ভেবে নেওয়া উচিত।
● আধুনিক শিক্ষকতায় কাজের ধরন-পরিধি কেমন, লেখাপড়ায় লেগে থাকতে ভালো লাগে কি না, শিক্ষকের দায়িত্ব-কর্তব্য কতটুকু ও কর্মকালে ছুটি ভোগের বিধান কেমন, অন্যান্য পেশার তুলনায় সুযোগ-সুবিধা কতটুকু, নিজের যোগ্যতা ও মন-মানসিকতার সঙ্গে এই পেশা খাপ খায় কি না, ইত্যাদি বুঝে নেওয়া দরকার।
● প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠানের অবস্থা ও অবস্থান বর্তমান প্রতিষ্ঠানের অবস্থা ও অবস্থানের তুলনায় অধিক ভালো কি না এবং সেখানে গেলে পরিবর্তনের উদ্দেশ্য পূর্ণ হবে কি না, তা জেনে নেওয়া উচিত।
বর্তমানে সরকারি মাধ্যমিক স্তরে সহকারী শিক্ষকের মূল বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা। উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ে প্রভাষকের প্রাথমিক মূল বেতন ২২ হাজার টাকা। এ ছাড়া সব স্তরের শিক্ষকদের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ, বাড়ি ভাড়া ভাতা ১ হাজার টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা, উৎসব ভাতা ২৫ শতাংশ, বাংলা নববর্ষ ভাতা ২০ শতাংশ দেওয়া হয়ে থাকে। মূল বেতন থেকে অবসর ও কল্যাণ তহবিলের জন্য ১০ শতাংশ টাকা জমা রাখা হয়। নিয়মিত ২৫ বা তার বেশি বছর চাকরি করে অবসরে গেলে কল্যাণ ও অবসর তহবিল থেকে সর্বশেষ মূল বেতনের প্রায় ১০০ গুণ টাকা পাওয়ার বিধান রয়েছে। এসব সরকারি সুবিধার বাইরে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের নিয়মের ওপর নির্ভর করে।
সূত্র: প্রথম আলো