• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

যে কারণে বন্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের দুই ব্যাংক


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ১৪, ২০২৩, ০৪:২৫ পিএম
যে কারণে বন্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের দুই ব্যাংক

যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক সিলিকন ভ্যালি (এসভিবি) ও সিগনেচার ব্যাংক তিন দিনের ব্যবধানে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর প্রভাবে সোমবার বিশ্বব্যাপী ব্যাংকের শেয়ারের দরপতনও হয়েছে। সবার মনে প্রশ্ন উঠেছে, এই ব্যাংকগুলো ঠিক কী কারণে বন্ধ হলো? মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে।

একটি বিশ্লেষণে তারা জানিয়েছে, দেশটির মধ্যম মানের ব্যাংকগুলো সংকটের মুখে পড়েছে। মূলত এ কারণেই ব্যাংক দুটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এসভিবি ধসে পড়ার ঘটনায় পৃথিবীজুড়ে আর্থিক খাতে রীতিমতো আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এ ঘটনা কি আরও ধ্বংস ডেকে এনে পুরো ব্যাংক খাতকে পতনের পথে নিয়ে যাবে?

এসভিবি ব্যাংকের গ্রাহক ছিল মূলত স্টার্টআপ কোম্পানিগুলো। সিগনেচার ব্যাংক ঋণ দিত মূলত আবাসন খাতে। সেই সঙ্গে তারা সম্প্রতি ক্রিপ্টোকারেন্সির গ্রাহকদের টানতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিল। শুক্রবার এসভিবি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়, সিগনেচার ব্যাংক অনেকটা তার জেরেই বন্ধ হয়েছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো গ্রাহকদের আশ্বস্ত করে, আমানতের পরিমাণ যা-ই হোক না কেন, তাদের ক্ষতি হবে না।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন এর মূল কারণ গুজব। বুধবার হঠাৎ শোনা যায়, গুরুতর আর্থিক ঘাটতিতে ভুগছে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক। ঘাটতির পরিমাণ এতটাই যে ব্যাংকের ব্যালান্সশিটের কিনারা করতেই প্রয়োজন অন্তত ২২৫ কোটি ডলার। কিন্তু গুজব একবার ছড়িয়ে পড়লে দাবানলের মতো হয়ে যায়। এ গুজব ছড়িয়ে পড়তেই সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের গ্রাহকদের মধ্যে টাকা তোলার হিড়িক পড়ে যায়। বুধবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার পর্যন্ত হাজার হাজার গ্রাহক টাকা তুলে নেন ব্যাংকটি থেকে।

ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বুধবার এসভিপির সব কটি শাখায় মোট ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বেশি পরিমাণ অর্থ ছিল। কিন্তু গ্রাহকদের প্রায় সবাই টাকা তুলে নেওয়ার পর এখন অবশিষ্ট আছে মাত্র ৯৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

ডিজিটাল ব্যাংকিং ও আর্থিক পরিষেবা খাতের বিনিয়োগকারী রায়ান ফ্ল্যাভেই বলেন, “ইউনিয়ন স্কয়্যার ভেঞ্চার্স এবং কোচুয়ে ম্যানেজমেন্টসহ কিছু মার্কিন আর্থিক ও ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান এই গুজব ছড়ানোর সঙ্গে যুক্ত। বুধবার তারা এসভিবির বেশ কয়েকজন গ্রাহকের কাছে ই-মেইল পাঠিয়ে বলেন, “এসভিপি গুরুতর তারল্য সংকটে ভুগছে। যদি ব্যাংকটিতে আপনার টাকা থেকে থাকে দ্রুত তুলে নিন।”

বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব ই-মেইলের স্ক্রিনশট খুব অল্প সময়ের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। গ্রাহকরাও কোনো কিছু চিন্তা না করে ব্যাংক কার্যালয় কিংবা এটিএম বুথ থেকে সমানে নিজেদের আমানতের টাকা তুলে নেওয়া শুরু করেন।

রায়ান ফ্ল্যাভেই বলেন, “কেউ যদি আপনাকে বলে ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে, দ্রুত অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিন, দেরি করলে সেই টাকার কোনো হিসাব আর পাবেন না আপনি কী করবেন?”

আর এই ব্যাংকের অবস্থার কারণে বলি হলো সিগনেচার ব্যাংক।

শুক্রবার এসভিবি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই সিগনেচার ব্যাংকের গ্রাহকেরা আমানত তুলে নিতে শুরু করেন। রোববার সকালে অর্থ তুলে নেওয়ার গতি অনেকটাই কমে এসেছিল। কিন্তু একপর্যায়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদের জানায়, তারা ব্যাংকটি বন্ধ করে দিতে যাচ্ছে। এই কথা শোনার পর ব্যাংকের নেতৃত্বের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। নিউইয়র্ক রাজ্যের ব্যাংক নিয়ন্ত্রক সংস্থা এফডিআইসির সঙ্গে সমন্বিতভাবে এর নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়েছে। সেই ঘটনায় তাদের শেয়ারদর পড়তে শুরু করে। শুধু তা-ই নয়, সিগনেচার ব্যাংকের সমকক্ষ আরও কয়েকটি ব্যাংকের শেয়ারদরও পড়ে যায়।

নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুল বলেন, “সিগনেচার ব্যাংকের অনেক আমানতকারী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, যারা মূলত উদ্ভাবনী অর্থনীতির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নিউইয়র্কের শক্তিশালী অর্থনীতির পেছনে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।”

অধিকাংশ বিশ্লেষক মনে করেন, এসভিবির ঘটনা শুধু একটি নির্দিষ্ট কোম্পানির ব্যাপার। এটি প্রযুক্তিবিষয়ক স্টার্টআপগুলোকে ঋণ দিত। কিন্তু অর্থনীতির ধীরগতি এবং গত এক বছরে আটবার নীতি সুদহার বাড়ানোর কারণে সিলিকন ভ্যালির স্টার্টআপগুলোর বিনিয়োগ কমে যায়। তখন তারা বাধ্য হয়ে এসভিবি থেকে তহবিল তুলে নিতে শুরু করে, যার চাপে বন্ধ হয়ে যায় এই ব্যাংক।

দেশটির সম্প্রচার মাধ্যম সিএনএন বলছে, শতকোটি ডলারের মালিক হেজফান্ড ব্যবস্থাপক বিল অকম্যান এসভিবির সঙ্গে বেয়ার স্টানর্সের তুলনা করেছেন। ২০০৭-০৮ সালে যে বৈশ্বিক আর্থিক সংকট হয়েছিল, তার শুরুতেই ধসে পড়েছিল এই ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান।

টুইটারে বিল অকম্যান লিখেছেন, একটি ব্যাংকের ব্যর্থতা ও আমানত হারানোর ঝুঁকির জায়গা হলো, এ ধরনের ঘটনা যদি কম সম্পদধারী ব্যাংকে এরপর ঘটে এবং তা ধসে পড়ে, তাহলে এ ধরনের ঘটনা একের পর এক ঘটতে পারে। সিগনেচার ব্যাংকের বন্ধ হয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে তার কথা অনেকটাই ফলে গেল।

Link copied!