• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

সুদানে সংঘর্ষ অব্যাহত, নিহত বেড়ে ১০০


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৭, ২০২৩, ১১:০২ এএম
সুদানে সংঘর্ষ অব্যাহত, নিহত বেড়ে ১০০

সুদানের রাজধানীতে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দেশটির একটি শক্তিশালী আধা সামরিক বাহিনীর মধ্যে ক্ষমতার লড়াই তৃতীয় দিনেও অব্যাহত রয়েছে। আর এতে এখন পর্যন্ত ১০০ জন নাগরিক নিহত হয়েছেন। রোববার দুই পক্ষই অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার পরও বিভিন্ন জায়গায় লড়াই  হয়েছে।

সোমবার (১৭ এপ্রিল) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে। এতে বলা হয়, সুদানজুড়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী সশস্ত্র দলের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। সেনাবাহিনী ও র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) নামে একটি আধা সামরিক গোষ্ঠীর মধ্যে সহিংসতা তৃতীয় দিনেও অব্যাহত ছিল।

সুদানিজ ডক্টরস ইউনিয়ন এক বিবৃতিতে বলেছে, সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০০ জন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছে এক হাজারের অধিক মানুষ।

সেনা ও আধা সামরিক বাহিনীর রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে প্রথম দিন দুই পক্ষই বিভিন্ন জায়গায় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি করে বিবৃতিতে দেয়। কিন্তু তৃতীয় দিনের মাথায় এসে রাজধানী খার্তুমে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় জানা গেছে, লড়াইয়ে এখন সেনাবাহিনী এগিয়ে গেছে।

এর আগে রোববার উভয় পক্ষ আহতদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি করেছিল। এ সময়ে সংঘাতের দ্বিতীয় দিনে আহতদের সরিয়ে নেওয়া হয়। জাতিসংঘের তিন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে বিরতি চলাকালেও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খার্তুমের হাসপাতালের পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন। সংঘর্ষের কারণে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার কিংবা চিকিৎসা সরবরাহ উভয়ই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

রোববার আরএসএফ দাবি করেছিল, রাজধানী খার্তুম, পার্শ্ববর্তী শহর ওমদুরমান, দারফুরের পশ্চিমাঞ্চলে, সুদানের উত্তরে মেরোওয়ে বিমানবন্দরের অংশগুলো দখলে নিয়েছে। পরবর্তী সময়ে বিমানবন্দরসহ বেশ কিছু জায়গায় পুনরুদ্ধার করেছে জানিয়ে পাল্টা বিবৃতিতে দিয়েছে সেনাবাহিনী।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আরএসএফের ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালানোয় লড়াইয়ে এগিয়ে গেছে সেনাবাহিনী।

কিন্তু সোমবার ভোরে সুদানের প্রেসিডেন্টের বাসভবন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কার্যালয়, গ্রাউন্ড ফোর্সের সদর দপ্তর নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে জানিয়ে একে বিজয় বলে আবারও দাবি করেছে আরএসএফ।

রাজধানী খার্তুমে দুই বাহিনীর মধ্যে এমন লড়াইয়ে আতঙ্কে সময় পার হচ্ছে বাসিন্দাদের।

একজন বলেন, “আমরা খুবই ভয় পাচ্ছি। প্রচণ্ড গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দে বাড়ি কেঁপে উঠছে। ২৪ ঘণ্টা ঘুমাতে পারিনি। আমার অসুস্থ বাবার জন্য সুপেয় পানি, খাবার এবং জরুরি ওষুধ ফুরিয়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তিত।”

খার্তুমের বাসিন্দা খুলুদ খায়ের বলেন, “এখানকার বাসিন্দারা কোথাও নিরাপদ না। বেসামরিক নাগরিকদের আপাতত ঘরে অবস্থান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখানেও নিরাপদ না তারা।”

যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও আরব লিগসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এই সংঘাত বন্ধে উভয় পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে। দ্বন্দ্ব নিরসনে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে মিসর ও দক্ষিণ সুদান।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, সেনা ও আরএসএফের লড়াইয়ে ৮৩ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত ১ হাজারের বেশি।

২০২১ সালে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে বেসামরিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। এর পর থেকে সেনাবাহিনীর জেনারেলরা ‘স্বাধীন কাউন্সিলের’ নামে দেশ চালাচ্ছিলেন। এই স্বাধীন কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হলেন জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো। অপর দিকে স্বাধীন কাউন্সিলের প্রধান হলেন জেনারেল আব্দেল ফাতাহ আল-বুরহান।

বেসামরিক সরকার গঠনের অংশ হিসেবে আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টি নিয়েই সেনাবাহিনী এবং আরএসএফের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। সেনাবাহিনী বলছে, আরএসএফকে দুই বছরের মধ্যে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করা হবে। কিন্তু আরএসএফ বলছে এই একীভূতকরণের প্রক্রিয়া যেন অন্তত ১০ বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরএসএফকে একীভূত করলে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব কে দেবে এ নিয়েও দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।

Link copied!