• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,
ভারতের ট্রেন দুর্ঘটনা

‘বুঝেই উঠতে পারছি না, সত্যিই কি বেঁচে আছি’


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২৩, ১০:৫৮ এএম
‘বুঝেই উঠতে পারছি না, সত্যিই কি বেঁচে আছি’

ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় ওডিশা রাজ্যে একাধিক ট্রেন ও মালগাড়ির সংঘর্ষে ২৮৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৯০০ জনের বেশি। নিহত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে ওডিশার বালেশ্বর জেলার বাহাঙ্গাবাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। শনিবার (৩ জুন) ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো পৃথক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। উদ্ধারকাজে নেমেছেন ভারতের ভারতের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রিলিফ ফোর্সের (এনডিআরএফ) সদস্যরা। রয়েছে ওডিশা ডিজাস্টার র‍্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সও (ওডিআরএএফ)। ট্রেনের দরজা ভেঙে ও গ্যাস কাটারের সাহায্যে উদ্ধারকাজ চালানো হচ্ছে। নামানো হয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীকেও।

দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের একটি বগিতে ছিলেন প্রশান্ত মণ্ডল এবং তার ভাইয়ের ছেলে কৃষ্ণপদ মণ্ডল। পেশায় রাজমিস্ত্রি প্রশান্ত যাচ্ছিলেন তামিলনাড়ুর কোয়ম্বত্তূরে। কোনোভাবে প্রাণে বেঁচেছেন তিনি। তবে পায়ে চোট লেগেছে তার।

ঘটনাস্থল থেকে মুঠোফোনে আনন্দবাজারকে বলেন, “হঠাৎই বিকট একটা ঝাঁকুনি। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের বগি এক দিকে হেলে পড়তে থাকে। এস ৪ বগি এতটাই কাত হয়ে যায় যে খোলা দরজা গলে বাইরে পড়ে যান দু-তিন জন। ওদের ঠিক সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি। বুঝতে পারছি, আমিও হেলে পড়ছি খোলা দরজার দিকে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই লোহার দরজাটা দড়াম করে বন্ধ হয়ে যায়। আমি গিয়ে পড়ি সেই দরজার উপর। এক মুহূর্ত আগে পড়লে আমিও ট্রেন থেকে বাইরে পড়ে যেতাম। কী বাঁচা যে বেঁচেছি, তা শুধু আমিই জানি।”

“সেই মুহূর্তে চার দিক থেকে কেবল চিৎকার আর আর্তনাদের শব্দ। হঠাৎ খেয়াল হল, কাকা কোথায়? খুঁজতে যে যাব, তারও উপায় নেই। কাঁধে, হাতে, পায়ে, কপালের কোণে চোট পেয়েছি। আর যে ভাবে পড়ে আছি, একা ওঠার সাধ্য নেই।”

তিনি আরও বলেন, “মধ্যে আমাদের কামরা বেশ কয়েক বার দুলে ওঠে। তাতে ভয় আরও বাড়ে। সেই সময় আরও কয়েকটি কান ফাটানো আওয়াজ শুনেছিলাম। জানি না কোথা থেকে আসছিল। বেশ কিছু ক্ষণ মড়ার মতো পড়েছিলাম সেখানেই। তার পর শক্তি সঞ্চয় করে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। তত ক্ষণে বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। অনেকেই দেখলাম মোবাইলের টর্চ জ্বেলে দৌড়াচ্ছেন আর চিৎকার করছেন- বাঁচাও, বাঁচাও। কী করব, কোথায় যাব কিছুই মাথায় আসছে না। সত্যি বলতে কী, বুঝেই উঠতে পারছি না, সত্যিই কি বেঁচে আছি?

যেভাবে বেঁচে ফিরলেন তিনি:

কৃষ্ণপদ বলেন, “কাকাকে খুঁজে পাওয়ার পর তাকি নিয়ে কামরা ছেড়ে বেরোতে হবে। অনেকেই আমার মতো বাইরে বেরোনোর চেষ্টা করছেন। আমাদের সঙ্গে থাকা মালপত্রের মায়া ত্যাগ করে তাদের দেখাদেখি আমরা দুজনও কোনো রকমে কামরা ছেড়ে বাইরে বেরোই। আর বেরিয়ে যে দৃশ্য দেখলাম, শরীরের সমস্ত রক্ত যেন মুহূর্তে হিম হয়ে গেল! চার দিকে ছড়ানো ট্রেনের বিশাল বিশাল সমস্ত কামরা। কোনোটা মালগাড়ির উপরে ঝুলছে। কোনো কামরা আবার অন্য কামরার তলায় ঢুকে গেছে। এখানে ওখানে ছড়িয়ে দেহাংশ।”

এরপর কাকা ও আমি নেমে পড়লাম উদ্ধারে। কিন্তু সেই দৃশ্য দেখে হাত নড়ছিল না। মুখ দিয়ে কথাও ফুটছে না। বাপের জন্মেও এমন দৃশ্য দেখিনি আমি।

এদিকে এ ঘটনায় রাজ্যে আজ এক দিনের শোক ঘোষণা করেছেন ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন তিনি। ঘটনাস্থলে গিয়েছেন দেশটির রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবসহ রেলের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। দুর্ঘটনার কারণ জানতে এরই মধ্যে তদন্ত শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে ভারতের কেন্দ্রীর রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব টুইট করে জানিয়েছেন, উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়ার জন্য ভারতীয় বিমানবাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

দুর্ঘটনার পর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, রাজ্যের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছেন।

Link copied!