• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হিজবুল্লাহ


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৩, ০৯:৪৯ পিএম
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হিজবুল্লাহ
হিজবুল্লাহ নেতা হুসেইন মাল্লা। (ফাইল ছবি)

পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন যে, হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামলে লেবাননে ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে। আবার লেবাননের হিজবুল্লাহ সতর্ক করে বলেছে যে, সীমান্তে তাদের সঙ্গে ইসরায়েলি সৈন্যদের কয়েকদিন ধরে পাল্টাপাল্টি গোলা বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে তারা এখন পুরোদমে প্রস্তুত।

এদিকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র দল হামাস ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে প্রায় ১৪০০ জন নিহত হয়। এরপর থেকে উভয় পক্ষই তাদের সীমান্তজুড়ে গোলাগুলি এবং রকেট ছোঁড়া অব্যাহত রেখেছে।

দুই পক্ষের সহিংসতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন যে, হিজবুল্লাহ তার নেতাদের এবং ইরানি সমর্থকদের নির্দেশে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের একটি নতুন ফ্রন্ট খুলতে পারে।

বিশ্লেষকরা আল জাজিরাকে বলেছেন, এটি হলে হামাস এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের উপর চাপ উপশমে সহায়তা হতে পারে। তবে এটি হবে লেবাননের জন্য ধ্বংসাত্মক এবং ইসরায়েলের জন্য ব্যয়বহুল।

হিজবুল্লাহর সামরিক সক্ষমতা:

২০০৬ সালের জুলাইতেও হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে। সেই যুদ্ধে লেবাননের ১,১০০ জন এবং ইসরায়েলের ১৬৫ জন নিহত হয়েছিল। ওই যুদ্ধ ৩৪ দিন স্থায়ী হয়েছিল।

হিজবুল্লাহ লেবানন সীমান্তে দুইজন ইসরায়েলি যোদ্ধাকে আটক করলে সেই যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। ওই যুদ্ধে চূড়ান্তভাবে কেউ জিততে পারেনি। তবে লেবাননের বেসামরিক মানুষ ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল কমিটি ফর দ্য রেড ক্রসের মতে, সেই যুদ্ধে ইসরায়েল লেবাননের প্রায় ৩০ হাজার বাড়ি, ১০৯টি সেতু এবং ৭৮টি চিকিৎসাকেন্দ্র ধ্বংস করে দিয়েছিল।

ওয়াশিংটন ডিসির থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, নিকোলাস ব্ল্যান্ডফোর্ড আটলান্টিক কাউন্সিলের সঙ্গে আলোচনায় জানান, সেই সময় তাকে হিজবুল্লাহর এক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ইসরায়েলে আঘাত করার জন্য হিজবুল্লাহর কাছে তিন থেকে পাঁচ হাজার যোদ্ধা এবং স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।

কিন্তু গত ১৭ বছরে, হিজবুল্লাহ তার সামরিক সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করেছে।
ব্ল্যান্ডফোর্ড আল জাজিরাকে বলেন, “আমি মনে করি এখনকার হিজবুল্লাহ ইসরায়েলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে।”

হিজবুল্লাহ এখন কতটা শক্তিশালী?
নিকোলাস ব্ল্যান্ডফোর্ড অনুমান করেছেন যে, বর্তমানে হিজবুল্লাহর কমপক্ষে ৬০ হাজার যোদ্ধা রয়েছে, যার মধ্যে নিয়মিত এবং রিজার্ভ সৈন্যও রয়েছে। তিনি বলেন, “গ্রুপটি ২০০৬ সালের ১৪ হাজার থেকে বর্তমানে দেড়লাখ ক্ষেপণাস্ত্রের মজুদ বাড়িয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই স্বল্পপাল্লার। এছাড়াও নিশানায় নির্ভুল আঘাত হানতে পারে ইরানের নির্মিত তিনশ কিমি. পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে হিজবুল্লার কাছে। আবার যুদ্ধের সময়ে ইসরায়েলে অনুপ্রবেশ করতে পারে হিজবুল্লার বিশেষ বাহিনীকে সেই প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়।”

তিনি আল জাজিরাকে আরও বলেছেন, “অবাক হওয়ার কিছু নেই যে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা গত কয়েক বছর ধরে হিজবুল্লাহকে তাদের প্রাথমিক হুমকি হিসাবে বিবেচনা করেছিল।”

মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের কনফ্লিক্ট অ্যান্ড রেজোলিউশন প্রোগ্রামের ডিরেক্টর রান্ডা স্লিমও আল জাজিরাকে বলেছেন যে, সিরিয়ার যুদ্ধে হিজবুল্লাহ দেশটির রাষ্ট্রপতি বাশার আল-আসাদের পক্ষে যুদ্ধ করেছিল। এই দলটি তখন থেকেই তাদের যুদ্ধের সক্ষমতা উন্নত করতে পেরেছে।

“সিরিয়ার দীর্ঘায়িত শহুরে যুদ্ধ থেকে তারা বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছে। তাদের গোয়েন্দা ব্যবস্থাও অনেক উন্নত হয়েছে।”

হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল যুদ্ধের সম্ভাবনা কতটা?

যদিও ইসরায়েল এবং হিজবুল্লাহর মধ্যে সীমিত সীমান্ত সহিংসতা অস্বাভাবিক নয়, তবে এই সময়ে যুদ্ধের ঝুঁকি রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, “গাজায় সংঘটিত নৃশংসতার মাত্রার উপর নির্ভর করে হিজবুল্লাহ এবং ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের দ্বিতীয় ফ্রন্ট খোলার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যদি ইসরায়েলের আক্রমণে হামাস নির্মূল হতেই থাকে, তবে এই যুদ্ধে হিজবুল্লাহ জড়িত হতে পারে।”

“ইরান তার ‘প্রতিরোধ অক্ষ’ ঠিক রাখার জন্য হিজবুল্লার মতো কয়েকটি দলকে নিয়ে ঐক্যমতের মোর্চা তৈরি করেছে। যা অনেকটা ন্যাটোর ৫ অনুচ্ছেদের মতো। অর্থাৎ এদের একজনের ওপর আক্রমণ হলে ধরে নেওয়া হবে সবার ওপর আক্রমণ হয়েছে। সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই মোর্চা পরিচালিত হবে। যেটি অতীতে ছিল না।

অন্যদিকে ব্ল্যান্ডফোর্ড বিশ্বাস করেন যে, ইরান এবং হিজবুল্লাহ সংযম অনুশীলন করবে। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, “ইরানে সম্ভাব্য ইসরায়েলি হামলা এবং মার্কিন পরিকল্পনার বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহ একটি বড় প্রতিরোধ হিসাবে কাজ করে।”

ব্লান্ডফোর্ড বলেন, “লেবাননে যদি যুদ্ধ হয়, তাহলে হিজবুল্লাহ বিপর্যস্ত হবে এবং ইরান প্রতিরোধের একটি প্রধান দলকে হারাবে।” তবে যুদ্ধের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেননি তিনি। তিনি বলেছিলেন যে, ইরান হয়তো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তার প্রক্সি যুদ্ধ এখনো সক্রিয় রাখতে পারে, অথবা এখনি আক্রমণ করার উপযুক্ত সময় মনে করতে পারে।

এদিকে হামাস ইসরায়েল সঙ্কটের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঝুঁকি এড়াতে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে দুটি বিমানবাহী রণতরী পাঠিয়েছে, যাতে ইসরায়েলকে লক্ষ্যবস্তু করা থেকে ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো বিরত থাকে। সূত্র: আল জাজিরা

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর

Link copied!