লিবিয়ার উত্তরপূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সড়কে সড়কে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে লাশ। দের্নায় বাঁধ ধসে-স্রোতের টানে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সাগরেও ভেসে গেছে হাজার হাজার মানুষ। তাদের মৃতদেহ এখন ভেসে আসছে।
ঝড়ের আঘাতে অনেক পরিবারের সবাই মারা গেছে। দের্নার বাইরে গ্রাম ও মফস্বলগুলো দানিয়েলের আঘাতে বিধ্বস্ত। তবে এসব জায়গা প্রত্যন্ত, স্থানীয় প্রশাসনও দুর্বল।
শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে লিবিয়ার পূর্ব উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় দানিয়েল। ঝড় আর প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে উত্তর আফ্রিকার দেশটির এই অঞ্চল। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বন্দর নগরী দের্নায়। শহরটি রূপ নিয়েছে এক ধবংসস্তূপে।
লিবিয়ার রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মতো আনুষ্ঠানিক সহায়তা সংস্থাগুলো এ পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ থাকার কথা জানাচ্ছে। কিন্তু, তার চেয়েও অনেক বেশি ২০ হাজার মানুষের প্রাণহানির অনুমান করছেন আল-বায়দা মেডিকেল সেন্টারের পরিচালক আব্দুল রহিম মাজিক।
আল-বায়দা মেডিকেল সেন্টার লিবিয়ার একটি বৃহৎ হাসপাতাল। তাদের এ অনুমানই সত্য হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। তারপরও ধবংসযজ্ঞের মাত্রা কর্মকর্তারা যতটা অনুমান করেছিলেন, তার চেয়েও ভয়ঙ্কর।
পূর্ব লিবিয়ার প্রশাসনের বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী হিশেম আবু শিকোয়াত বলেন, সাগর থেকে প্রতিনিয়ত ডজন ডজন লাশ ভেসে আসছে। পুনঃনির্মাণ ব্যয় শত শত কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলেও জানান তিনি।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জানিয়েছে, দানিয়েলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দের্না শহরের ৩০ হাজার অধিবাসী বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। সে তুলনায়, ঝড়ের তাণ্ডবে বেনগাজীসহ অন্যান্য বড় জনপদে ৬ হাজার ৮৫ জন বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। মৃতের প্রকৃত সংখ্যা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
তবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাতে বুধবার বিকেল নাগাদ ৬ হাজার জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল।
পরিস্থিতিকে নারকীয় বললেই যেন সঠিক হয়। চারপাশের লাশ পচে রোগব্যাধী দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে, এ জন্য যতসম্ভব মরদেহকে একই গণকবরে দাফন করতে হচ্ছে। দের্নার বিদ্যমান দুটি হাসপাতালই লাশের স্তূপে ভরে গেছে। এই অবস্থায় নতুন ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনের দাবি জানাচ্ছেন নগরবাসী।
সৈকতে ভেসে আসা লাশ সংগ্রহ করতে উপকূলে নৌটহল বাড়ানো হয়েছে। মৃতদের শনাক্ত করতে তবরুক শহরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।