শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে সিরিয়া ও তুরস্ক। সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৪টায় ৭ দশমিক ৮ মাত্রার আঘাত হানে। এতে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এক হাজার ৮০০ জন নিহত এবং ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি। এরমধ্যে ১ হাজার ১৪ জন তুরস্কে এবং সিরিয়ায় ৭৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা আনাদলু এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পে তুরস্কের সাতটি প্রদেশের অন্তত দশটি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহরগুলো হলো গাজিয়ান্তেপ, কাহরামানমারাস, হাতে, ওসমানিয়া, আদিয়ামান, মালাতিয়া, সানলিউরফা, দিয়ারবাকির এবং কিলিস। এই সাতটি প্রদেশে এখনো পর্যন্ত ১ হাজার ১৪ জন নিহত এবং ৩ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতাই।
তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতাই আরও জানিয়েছে, ভূমিকম্পের ধ্বংসযজ্ঞের পাশাপাশি কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত মারাত্মক আবহাওয়ার সাথে লড়াই করছে। আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই অঞ্চলে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।
ফুয়াত ওকতাই বলেন, “সর্বত্রই তুষারপাত বা বৃষ্টিপাত, এবং এটি খুব ঠান্ডা। আবহাওয়া পরিস্থিতি জলবায়ু উদ্ধারকর্মী এবং বেসামরিকদের জন্য এটি খুব কঠিন করে তুলছে। এটি সবার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে হচ্ছে।”
অন্যদিকে সিরিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, সিরিয়ার আলেপ্পো, হামা এবং লাকাতিয়া শহরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই ভূমিকম্পে। এই তিনটি শহরে এখনো পর্যন্ত অন্তত ৪০৩ জন নিহত এবং ১২ শতাধিক আহত হয়েছে।
এছাড়াও স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের সংবাদ অনুযায়ী বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা আরও ৩৮০ নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সোমবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে প্রথম দফায় ভূমিকম্পটি আঘাত হানার ১১ মিনিট পর আরও একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে তুরস্কের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের একটি এলাকায়। এ দফায় ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৭। এর মাত্র ২ ঘণ্টার মধ্যেই ২০ বার আফটার শক অনুভূত হয়েছে তুরস্ক, সিরিয়া তার আশেপাশের এলাকায়। এরপরই সোমবার দুপুরে ৯ ঘণ্টার ব্যবধানে আরেকটি ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে তুরস্কে। দ্বিতীয় অগভীর ভূমিকম্পটি স্থানীয় সময় ১টা ২৪ মিনিটে আঘাত হানে।
এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের তীব্রতা এতই বেশি ছিল যে, তুরস্ক ও সিরিয়া ছাড়াও লেবানন এবং সাইপ্রাসেও এর ঝাঁকুনি অনুভূত হয়েছে। এমনকি মিসরের রাজধানী কায়রোতেও এর তীব্রতা টের পাওয়া গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগের (ইউএসজিএস) তথ্যানুসারে, তুরস্কের গাজিয়ান্তেপ প্রদেশের নূরদাগি শহরের পূর্বাঞ্চল ছিল ভূমিকম্পটির উপকেন্দ্র। জায়গাটি নূরদাগি থেকে ২৩ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। ভূমিকম্পটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ২৪ দশমিক ১ কিলোমিটার গভীরে উৎপত্তি হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার গভীরে।
আপনার মতামত লিখুন :