• ঢাকা
  • সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

৬০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণতম দিন দেখল বেইজিং


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০২৩, ০১:৩৪ পিএম
৬০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণতম দিন দেখল বেইজিং

ষাট বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ দিন দেখল চীনের রাজধানী বেইজিং। যা আগের সব রেকর্ডকে ভেঙে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ জুন) তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১০৫ দশমিক ৯ ফারেনহাইট রেকর্ড করা হয়েছে। জুনের শেষ দিকে এসে শহরটি চরম তাপপ্রবাহের সম্মুখীন হচ্ছে। দেশটির আবহাওয়া দপ্তর এসব তথ্য জানিয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে প্রতিকূল আবহাওয়া আরও মারাত্মক হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত প্যানেল সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে এ আশঙ্কা উত্থাপন করে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রতিটি ডিগ্রি তাপমাত্রা বিপদ আরও বাড়িয়ে তুলবে।

চীনের আবহাওয়া কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৯৬১ সালে রেকর্ড রাখা শুরু হওয়ার পর থেকে বৃহস্পতিবার জুনের সবচেয়ে উষ্ণতম দিন ছিল। এই বছর চীনে বেশ কয়েকটি মাসের তাপমাত্রার রেকর্ড বিগত বছরগুলোর রেকর্ডকে ভেঙে দিয়েছে। গত মাসে দেশটির বৃহত্তম শহর সাংহাই এর পূর্ব উপকূলে ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণতম দিনের রেকর্ড করা হয়। চীনের বৃহত্তম শহর জুজিয়াহুই স্টেশনে দিনের তাপমাত্রা ৩৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছিল, যা গত ১০০ বছরের মধ্যে মে মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড।

এদিকে দেশটির রাজধানী বেইজিং-এ ২১ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বসবাস করে। বৃহস্পতিবার বেইজিংয়ের উত্তরে একটি আবহাওয়া কেন্দ্র ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে। কর্তৃপক্ষ এর আগে কমলা সতর্কতা জারি করেছিল, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গুরুতর আবহাওয়া সতর্কতা। শনিবার থেকে দিনের তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসতে পারে।

জাতীয় আবহাওয়া ব্যুরোও গত সপ্তাহে হিট স্ট্রোক সতর্কতা জারি করেছে। গত বছরের তুলনায় এবার ১৫ দিন আগে এই সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

বেইজিং, তিয়ানজিন, উত্তর ও পূর্ব চীনের অন্য শহরগুলোর স্থানীয় কর্তৃপক্ষ উষ্ণতম দিনগুলোতে ঘরের বাইরে কাজ স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়া হিট স্ট্রোকের লক্ষণ দেখলে চিকিৎসা সহায়তা নেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছে।

জাতিসংঘের আন্তঃসরকারি সংস্থা প্যানেল অব ক্লাইমেট চেঞ্জের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এক সতর্কবার্তায় বলেছেন, দ্রুতহারে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জেরে বিভিন্ন অঞ্চলের আবহাওয়া ক্রমেই চরমভাবাপন্ন হয়ে উঠছে এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে খরা, তাপপ্রবাহ, ঘূর্ণিঝড় প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রবণতাও বাড়ছে।

জাতিসংঘ মে মাসে একটি সতর্কতা জারি করে বলেছে, ২০২৩ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণতম সময়কাল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন এবং এল নিনোর সংমিশ্রণে তাপমাত্রা অনেক বাড়বে।

তীব্র তাপ চীনের বৃহত্তম শহরের বাসিন্দাদের জন্য সমস্যা তৈরি করেছে। কেউ কেউ পানিশূন্যতা, মাথাব্যথা নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এমনকি হিটস্ট্রোকেরও খবর পাওয়া গেছে। ক্রমবর্ধমান এ তাপমাত্রা এবং ঘন ঘন তাপপ্রবাহ বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলাফল। গত মাসে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তন এশিয়ায় ৩০ গুণ বেশি তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

থাইল্যান্ড, লাওস, বাংলাদেশ এবং ভারতে এপ্রিল মাসে রেকর্ড ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা দেখা গেছে। প্রচণ্ড গরমের কারণে কিছু দেশে মৃত্যু ও হাসপাতালে ভর্তি, রাস্তা গলে যাওয়া এবং অন্যান্য অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। তাপপ্রবাহ বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলোর মধ্যে একটি, যার ফলে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ মারা যায়।

Link copied!