যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আমেরিকার আর্থিক ব্যবস্থা নিরাপদ বলে আশ্বাস দেওয়ার পরও গতকাল সোমবার বিশ্বব্যাপী ব্যাংকের শেয়ারের দরপতন হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রযুক্তি খাতে ঋণদানকারী সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিবি) ও সিগনেচার ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মার্কিন সরকারকে গ্রাহকদের আমানত রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে হয়।
দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে রক্ষা করার জন্য ‘যা কিছু দরকার’ তাই করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু এরপরও বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক কাটছে না। বিনিয়োগকারীদের ভয়, অন্যান্য ঋণদানকারী ব্যাংকেরও হয়তো পতন হতে পারে। আর এই শঙ্কাই বিশ্বব্যাপী ব্যাংকের শেয়ারের দরপতন ঘটে।
এর আগে গতকাল সোমবার দিনের এক পর্যায়ে স্পেনের স্যান্টান্ডার এবং জার্মানির কমার্জব্যাংক তাদের শেয়ারের দর ১০ শতাংশেরও বেশি পতন দেখে। তবে ইউরোপীয় ব্যাংকগুলোর তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের ছোট ছোট ব্যাংকের শেয়ারের দরপতন বেশি হয়েছে। এমনকি আর্থিক ধাক্কায় থেকে গ্রাহকদের রক্ষায় প্রয়োজনের তুলনায় অধিক তারল্য আছে নিশ্চয়তা দেওয়ার পরও এই দরপতন ঘটে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলোর।
অন্যদিকে, এই অস্থিরতার মধ্যে গুঞ্জন তৈরি হয়, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সুদের হার বাড়ানোর যে পরিকল্পনা আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ করেছিল, সেই পরিকল্পনা স্থগিত করা হবে।
গতকাল বাইডেন বলেন, “সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকে যেসব মানুষ ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অর্থ জমা রেখেছিল, তারা সোমবার থেকে তাদের সব অর্থ ফেরত পেতে শুরু করবে।”
এছাড়া তিনি সিলিকন ভ্যালি ও সিগনেচার ব্যাংকের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেছেন, “এই বিশৃঙ্খলার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করব এবং এ ধরনের পরিস্থিতিতে যেন আমরা আর না পড়ি সেজন্য আমাদের ব্যাংকিং নীতি আরও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে কাজ করে যাব।”
এর আগে শুক্রবার বন্ধ হয়ে যায় সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক। বর্তমানে ওই ব্যাংকের গ্রাহকদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আটকে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ব্যাংক বন্ধের ঘটনার দিক থেকে এটি তৃতীয় বৃহত্তম নজির এবং ২০০৮ সালের পর দেশটির ব্যাংক খাতে এটিই সবচেয়ে বড় বিপর্যয়।
সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক বৃহস্পতিবার জানিয়েছিল, তারা নগদ অর্থ জোগাড়ে লসে কিছু বন্ড বিক্রি করে দিয়েছে। এছাড়া নগদ অর্থ জোগাড় করতে বাজারে আরও ২ বিলিয়ন ডলারের শেয়ার ছাড়ার ঘোষণা দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এমন ঘোষণার পরই ব্যাংকটির গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। তারা গণহারে অর্থ উত্তোলন শুরু করেন। এতে একপর্যায়ে ব্যাংকটিতে ধস নামে।
এদিকে সিলিকন ভ্যালি ও সিগনেচার ব্যাংকের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। পাশাপাশি জানিয়েছে, সব গ্রাহক তাদের অর্থ ফেরত পাবেন।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক মন্দা শুরু হয়েছিল। সে সময় দেশটির ছোট-বড় অনেক ব্যাংক একের পর এক দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল। সেই মন্দা পরিস্থিতির ১৫ বছর পর এই প্রথম শীর্ষস্থানীয় কোনো ব্যাংকের এমন আকস্মিক দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটল যুক্তরাষ্ট্রে।