• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

ব্যাংক খাতে সংকটের আশঙ্কায় এশিয়ার শেয়ার বাজারে দরপতন


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ১৬, ২০২৩, ০১:২৭ পিএম
ব্যাংক খাতে সংকটের আশঙ্কায় এশিয়ার শেয়ার বাজারে দরপতন

সুইজারল্যান্ডের গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক ‘ক্রেডিট সুইস’ জানিয়েছে, সুইস ব্যাংক থেকে বড় আকারের ঋণ নিতে যাচ্ছে তারা। তাদের এমন ঘোষণার পর বিশ্বজুড়ে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সংকটের আশঙ্কায় এশিয়া জুড়ে শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতন হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। এতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার বিশ্ব ব্যাংকের অংশীদার প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক ক্রেডিট সুইস তাদের অর্থায়নের জন্য সুইস ব্যাংক থেকে ৫০ বিলিয়ন ফ্রাঙ্ক বা ৫৪ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ঋণ নিতে যাচ্ছে।

ব্যাংক নিয়ন্ত্রকরা জানিয়েছে, তারা যেকোনো প্রয়োজনে সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকিং জায়ান্টদের সহায়তা করার জন্য পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।

মার্কিন সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের পতনের পর সারা বিশ্বের বিনিয়োগকারীরা বেশ উদ্বিগ্ন অবস্থায় রয়েছে। এরই মধ্যে ক্রেডিট সুইসের এই অবস্থা বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর ব্যাংক সঙ্কট সম্পর্কিত ভয়কে আরও তীব্র করেছে৷ আর এ কারণে জাপান, হংকং এবং অস্ট্রেলিয়ায় প্রধান সূচকে ব্যাংকগুলোর শেয়ারদর ১ শতাংশেরও বেশি কমে গেছে।

বিবিসি জানিয়েছে, ব্যাংক অব ইংল্যান্ড পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে ক্রেডিট সুইস এবং সুইস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

টোকিওর কিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক সায়ুরি শিরাই বলেন, “বিনিয়োগকারী এবং ঋণদাতারা তাদের সম্ভাব্য ঝুঁকি নিয়ে উদ্বিগ্ন। কেননা ব্যাংকগুলো তহবিল সংকটে ভুগতে পারে। এছাড়া বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ওপর প্রভাব পরবে।”

এশিয়ান ট্রেডিংয়ে দিনে মধ্যভাগে জাপানের নিক্কেই কোম্পানির শেয়ারদর ১ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে। টপিকস ব্যাংকের শেয়ারদর ৪ শতাংশেরও বেশি কমে গেছে। গত তিন বছরের মধ্যে এটি সবচেয়ে খারাপ দিন ছিল ব্যাংকটির। সম্পদের দিক থেকে বৃহত্তম ঋণদাতা মিতসুবিশি ইউএফজে ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপের শেয়ারদর ৩ শতাংশ কমেছে। এছাড়া হংকং এবং সিডনির প্রদান সূচকে ১ দশমিক ৫ শতাংশ দরপতনের ঘটনা ঘটেছে।

এসপিআই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের স্টিফেন ইনেস বলেছেন, “বাজার দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে যদি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলোর যে সংকট দেখা দিয়েছে সেটির সমাধান হয়। এশিয়ার ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা ভালো হওয়ায় এখনই এ অঞ্চলে সংকটের আশঙ্কা সীমিত।”

এদিকে ক্রেডিট সুইস ব্যাংকটি তাদের আর্থিক প্রতিবেদনে দুর্বলতার কথা উল্লেখ করার পর বুধবার অন্যান্য ব্যাংকগুলোর শেয়ার ২৪ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। এর ফলে সাথে সাথে শেয়ার বাজারে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।

ক্রেডিট সুইস ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উলরিচ কোরনার একটি বিবৃতিতে বলেছেন, ক্লায়েন্টের চাহিদাকে কেন্দ্র করে ব্যাংকিং সুবিধা সরবরাহ করতে আমার দল এবং আমি এগিয়ে যাওয়ার জন্য সংকল্পবদ্ধ।

এদিকে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক এবং সুইস ফাইন্যান্সিয়াল মার্কেট সুপারভাইজরি অথরিটি বলেছে তারা প্রয়োজনে ক্রেডিট সুইসকে সাহায্য করতে প্রস্তুত।

তবে বিশিষ্ট জনেরা মনে করছেন, বিনিয়োগকারীদের ভয়কে শান্ত করার চেষ্টা করেছে সুইজারল্যান্ডের বড় বড় ব্যাংকগুলো।

এর আগে বন্ধ হয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক ও সিগনেচার ব্যাংক। দেশটির ইতিহাসে ব্যাংক বন্ধের ঘটনার দিক থেকে এটি তৃতীয় বৃহত্তম নজির এবং ২০০৮ সালের পর দেশটির ব্যাংক খাতে এটিই সবচেয়ে বড় বিপর্যয়।

এদিকে সিলিকন ভ্যালি ও সিগনেচার ব্যাংকের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। পাশাপাশি জানিয়েছে, সব গ্রাহক তাদের অর্থ ফেরত পাবেন।

প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক মন্দা শুরু হয়েছিল। সে সময় দেশটির ছোট-বড় অনেক ব্যাংক একের পর এক দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল। সেই মন্দা পরিস্থিতির ১৫ বছর পর এই প্রথম শীর্ষস্থানীয় কোনো ব্যাংকের এমন আকস্মিক দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটল যুক্তরাষ্ট্রে।

Link copied!