• ঢাকা
  • সোমবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

কার্বন শোষণের বদলে নিঃসরণ করছে যে বন, চিন্তায় বিজ্ঞানীরা


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২৫, ০৫:৫৩ পিএম
কার্বন শোষণের বদলে নিঃসরণ করছে যে বন,  চিন্তায় বিজ্ঞানীরা

বন মানেই গাছ, আর গাছ মানেই হলো পরিবেশ থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করা। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, অস্ট্রেলিয়ার একটি রেইনফরেস্ট এখন ঠিক এর উল্টো কাজ করছে। নতুন এক গবেষণা দেখা গেছে, এই বন এখন কার্বন শোষণের চেয়ে বেশি কার্বন বায়ুমণ্ডলে ছেড়ে দিচ্ছে। 

বিজ্ঞানীরা বলছেন, উচ্চ তাপমাত্রা, শুষ্ক বাতাস এবং দ্রুত গাছ মরে যাওয়ার কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এটিই বিশ্বের প্রথম রেইনফরেস্ট, যা কার্বন শোষক থেকে কার্বন উৎসে পরিণত হওয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। এই ঘটনাটি পৃথিবীর অন্যান্য বনাঞ্চলের ভবিষ্যৎ নিয়ে গুরুতর সতর্কবার্তা দিচ্ছে। এই পরিস্থিতি ভবিষ্যতে কার্বন শোষণের জন্য বনাঞ্চলের ওপর নির্ভরতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলবে বলে চিন্তায় পড়েছেন বিজ্ঞানীরা।

গত ১৫ অক্টোবর বিখ্যাত বিজ্ঞান জার্নাল ‘নেচার’-এ প্রকাশিত এই গবেষণায় অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রেইনফরেস্টের প্রায় ১১ হাজার গাছের ওপর চালানো প্রায় ৫০ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ইতিহাস, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি নির্ভর স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন এই গবেষণার ফলাফল নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। 

গবেষকরা দেখেছেন, এই বনে বিরল কিছু কাষ্ঠল জৈববস্তু সাধারণত বিপুল পরিমাণ কার্বন ধরে রাখে। এই প্রজাতের গাছগুলো এখন শোষণের চেয়ে বেশি কার্বন বাতাসে ছাড়ছে। প্রায় ২৫ বছর আগে এই পরিবর্তন শুরু হয়েছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

গবেষকরা বলছেন, সাধারণত গাছ যখন মারা গিয়ে পচতে শুরু করে, তখন কার্বন পুনরায় বায়ুমণ্ডলে ফিরে আসে। এর ফলে বোঝা যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার এই রেইনফরেস্টের গাছগুলো কয়েক দশক আগের তুলনায় এখন অনেক দ্রুত মারা যাচ্ছে।

ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির বন বাস্তুতন্ত্র (ফরেস্ট ইকোসিস্টেম) গবেষক এবং এই গবেষণার প্রধান লেখক হান্নাহ কার্ল অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনকে বলেন, শুষ্ক বাতাস, উচ্চ তাপমাত্রা এবং খরার কারণে গাছ দ্রুত মরে যাচ্ছে।

১৯৭‍১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত এই বনের গাছগুলো প্রতিবছর একরপ্রতি গড়ে প্রায় ৫৫৩ পাউন্ড কার্বন শোষণ করত বলে গবেষণায় দেখা গেছে। কিন্তু ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বনটি প্রতিবছর একরপ্রতি গড়ে প্রায় ৮৩০ পাউন্ড কার্বন বাতাসে নিঃসরণ করেছে। এটিই বিশ্বের প্রথম কোনো রেইনফরেস্ট, যা কার্বন শোষক থেকে কার্বন উৎসে পরিণত হওয়ার দৃষ্টান্ত দেখাল। 

হান্নাহ কার্ল বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য বনাঞ্চলের ভবিষ্যতের জন্য এই পরিস্থিতি বিপদের ইঙ্গিত দিতে পারে। এটি একটি সতর্কবার্তা।

স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত অন্য কোনো রেইনফরেস্টে কার্বন শোষণের চেয়ে বেশি নিঃসরণের প্রমাণ মেলেনি। যদিও আমাজন রেইনফরেস্টের কার্বন ধারণক্ষমতা কমেছে এবং মানবসৃষ্ট বন উজাড় ও দাবানলের কারণে এর কিছু অংশ কার্বন উৎসে পরিণত হয়েছে। তবে সেখানকার গাছপালা বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড বেড়ে যাওয়ায় নিজেদের বৃদ্ধিও বাড়িয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া আরও চরম আকার ধারণ করেছে। সেখানে তীব্র ঘূর্ণিঝড়সহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রবণতা বেড়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গাছের মৃত্যু হচ্ছে, ফলে রেইনফরেস্টের কার্বন ধারণক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে বলে গবেষণায় দেখা গেছে।

সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে হান্নাহ কার্ল বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ার আর্দ্র গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল অন্য মহাদেশের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনের তুলনায় কিছুটা উষ্ণ ও শুষ্ক জলবায়ুতে অবস্থিত। তাই ভবিষ্যতে বিশ্বের অন্যান্য গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন কী ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে, এটি হয়তো তার একটি উদাহরণ হিসেবে কাজ করবে।

বিজ্ঞানীরা আগে ধারণা করতেন, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বায়ুমণ্ডলে ধারাবাহিকভাবে কার্বন ডাই-অক্সাইড বাড়ছে। কিন্তু আগের গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেইনফরেস্টগুলো প্রতিক্রিয়া হিসেবে তাদের কার্বন সঞ্চয়ের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এই অর্ধ শতাব্দীর তথ্য সেই বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ করে।

অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির বন গতিবিদ্যা গবেষক রাফায়েল ট্রুভ জানান, এই দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা তথ্যগুলো থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, আগের ধারণা সঠিক নয়। তবে, তিনি এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর

Link copied!