• ঢাকা
  • সোমবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

হত্যা মামলায় হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে খুন হন মামুন


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২৫, ০৬:২৬ পিএম
হত্যা মামলায় হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে খুন হন মামুন

হত্যা মামলায় আদালতে হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে পুরান ঢাকায় দিনে-দুপুরে গুলি করে হত্যা করা হয় এক সময়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে। সোমবার (১০ নভেম্বর)  বেলা ১১টার দিকে পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে এই ঘটনা ঘটে। তিনি ২৮ বছর আগে জাহিদ আমিন ওরফে হিমেল হত্যা মামলায়  হাজিরা দিতে এসেছিলেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২৫ বছরের যুবক জাহিদ আমিন ওরফে হিমেলকে ১৯৯৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে মোহাম্মদপুর পিসি কালচার হাউজিং এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয়। সেদিন হিমেলের বন্ধু সাইদও আহত হন। এ ঘটনায় হিমেলের মা জাফরুন নাহার সাতজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে একই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর তারিক সাইফ মামুনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অপর আসামিরা হলেন— ওসমান, মাসুদ ওরফে নাজমুল হোসেন, রতন, ইমন এবং হেলাল।

ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মমিনুন নেসার আদালতে এদিন মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। আদালতে হাজিরা দেন তারিক সাইফ মামুন। তবে কোনও সাক্ষী আদালতে হাজির হননি। এজন্য আদালত আগামী বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী দিন ধার্য করেন।

পরে আদালত থেকে বের হয়ে  মামুন যান ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ১০টা ৫১ মিনিটের দিকে হাসপাতাল থেকে তিনি বের হচ্ছিলেন। প্রধান ফটক পার হয়ে একটু সামনে রাস্তায় গেলে দৌড় দিয়ে আবার হাসপাতালে ঢুকে পড়েন। তখন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা লোকজনকেও ছোটাছুটি করতে দেখা যায়।

হাসপাতালের নিরাপত্তার কাজে দায়িত্বে থাকা মো. তারেক জানান, দুইজন দুর্বৃত্ত তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। তবে সেই গুলি গিয়ে লাগে হাসপাতালের জানালার গ্লাসে। তারা আরও পাঁচ রাউন্ড গুলি করে তারা। তিনটি গিয়ে মামুনের শরীরে লাগে। তাকে উদ্ধার করে জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। তবে অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিক্যালে পাঠানো হয়। শুনেছি, তিনি মারা গেছেন।

নিরাপত্তাকর্মী তারেক আরও জানান, শুনেছি, যে লোক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, তার কাছে একজন ভিক্ষুক খাবারের জন্য টাকা ভিক্ষা চেয়েছিলেন। সেই টাকা দিতে নাকি তিনি হাসপাতালে এসেছিলেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, তিনি গাড়ি পার্কিং করতে এসেছিলেন।

যোগাযোগ করা হলে মামুনের আইনজীবী মেহেদী হাসান জানান, তিনি আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। মামলাটি ১৯৯৭ সালের। সাক্ষীরা আসে না। আদালতকে মামলাটি শেষ করার জন্য বলি। পরে আবার সাক্ষীর জন্য তারিখ ধার্য করা হয়।

মামুন কেন হাসপাতালে গিয়েছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তো বলতে পারবো না। আমার অন্য মামলা থাকায় আমি চলে গিয়েছিলাম। তিনিও আদালত থেকে বের হয়ে যান।

ঘটনার পর তারিক সাঈদ মামুনের খালাতো ভাই হাফিজ সাংবাদিকদের জানান, আমার ভাই একজন সাধারণ মানুষ। কী কারণে তাকে কে হত্যা করলো আমি জানি না। সে কোনও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। কারা তাকে হত্যা করেছে, কী কারণে করেছে আমার জানা নেই।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় ২০ বছরের বেশি সময় জেল খেটে ২০২৩ সালে জামিনে মুক্তি পান মামুন। তিন মাসের মাথায় তেজগাঁও বিজি প্রেস এলাকায় তাকে হত্যার চেষ্টা হয়।

সে সময় রাস্তার ওপর মামুনের গাড়ি আটকে এলোপাতাড়ি গুলি চালানো হলে ভুবন চন্দ্র শীল নামে এক আইনজীবী গুরুতর আহত হন। পরে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

হামলার লক্ষ্যে থাকা মামুনকে খুন করতে না পারলেও সে সময় চাপাতি দিয়ে কোপায় হামলাকারীরা। মামুন সে সময় পুলিশকে বলেছিলেন, তেজগাঁওয়ের ওই হামলার পেছনে পুলিশের আরেক তালিকাভুক্ত ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ সানজিদুল ইসলাম ইমনের হাত রয়েছে।

উল্লেখ্য, সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় গত বছরের ৯ মে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তারিক সাইফ মামুনসহ ৬ জন খালাস পান। তবে ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজসহ ৩ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় একই ট্রাইব্যুনাল।

Link copied!