দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখনো প্রায় ৬৬ হাজার শিক্ষক এসএসসি ও এইচএসসি পাস যোগ্যতায় কর্মরত আছেন। আধুনিক পাঠ্যক্রমে ক্লাস নেওয়া, নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার ও শিশুদের হাতে-কলমে শেখানোর ক্ষেত্রে তাদের অনেকে হিমশিম খাচ্ছেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ৬৫ হাজার ৫০০টির বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক আছেন প্রায় ৩ লাখ ৮৫ হাজার। এর মধ্যে এসএসসি পাস নারী শিক্ষক ১১ হাজার ৭০০ জন এবং এইচএসসি পাস পুরুষ শিক্ষক ৫৩ হাজারের বেশি। দাখিল, আলিম ও সমমান ডিগ্রিধারীসহ কম উচ্চশিক্ষিত শিক্ষকের সংখ্যা মিলিয়ে মোট দাঁড়িয়েছে ৬৬ হাজার ২৯৭ জনে।
পুরনো নীতির ফলেই বর্তমান সমস্যা
অধিদপ্তর জানায়, ১৯৯১ সালের বিধিমালা অনুযায়ী তখন নারী প্রার্থীরা এসএসসি পাস আর পুরুষ প্রার্থীরা এইচএসসি পাস হলেই শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতেন। সেই সময় যাঁরা নিয়োগ পেয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই এখনো চাকরিতে আছেন। ফলে শিক্ষক সমাজে এখনো উচ্চশিক্ষার বড় বৈষম্য রয়ে গেছে।
এসএসসি ও এইচএসসি পাস শিক্ষকেরা স্বাভাবিক নিয়মে অবসরে যেতে আরও ১০ বছর সময় লাগবে। তখনই শতভাগ স্নাতক ডিগ্রিধারী শিক্ষক দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা কাঠামো গড়া সম্ভব হবে বলে আশা করছে অধিদপ্তর।
নতুন নিয়োগে আসছে পরিবর্তন
সম্প্রতি তিন ধাপে প্রায় ২০ হাজার নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে সরকার, যাঁদের সবাই স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। নভেম্বর মাসে প্রকাশিত সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে ১০ হাজার ২১৯টি নতুন পদ খালি ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে আবেদন করতে পারবেন কেবল স্নাতক পাস প্রার্থীরা।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “যারা আগের নিয়মে নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। তবে নতুন প্রজন্মের শিক্ষকদের মানই হবে প্রাথমিক শিক্ষার ভবিষ্যৎ।”
দশম গ্রেডে পদোন্নতির পথে বাধা
প্রাথমিকের শিক্ষক সমাজ দীর্ঘদিন ধরে সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেডে উন্নীত করার দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু অধিদপ্তরের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, এসএসসি ও এইচএসসি পাস শিক্ষকেরা অবসরে না যাওয়া পর্যন্ত এই গ্রেড বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।
অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, “এই বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল। এখনই পরিবর্তন আনলে বিভ্রান্তি তৈরি হবে। তবে সময়ের সঙ্গে পরিস্থিতি বদলাবে।”
মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য: স্মার্ট ও উচ্চশিক্ষিত শিক্ষক
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা বলেন, “প্রাথমিক স্তরেই জাতি গঠনের ভিত্তি তৈরি হয়। তাই আমাদের লক্ষ্য এখন উচ্চশিক্ষিত, প্রযুক্তিনির্ভর ও স্মার্ট শিক্ষক নিয়োগ। পুরনো প্রজন্মের শিক্ষকেরা ধীরে ধীরে অবসরে যাবেন, তখন পুরো ব্যবস্থাটিই হবে আধুনিক ও দক্ষ হাতে।”








































