• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

আজ আষাঢ়ের প্রথম দিন


হাসান শাওন
প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২৩, ০৮:৪৫ এএম
আজ আষাঢ়ের প্রথম দিন

আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে,
আসে বৃষ্টির সুবাস বাতাস বেয়ে
এই পুরাতন হৃদয় আমার  আজি 
পুলকে দুলিয়া উঠিছে আবার বাজি
নূতন মেঘের ঘনিমার পানে চেয়ে
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

ষড়ঋতুর দেশে এখন তীব্র দাবদাহের আধিপত্য। তাপমাত্রা কখনো কখনো ছুঁয়ে যাচ্ছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরও। এমন তাপমাত্রায় অনভ্যস্ত বাঙালি তাই চাতকের মতো তাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে। এক টুকরো মেঘের আশায়, যে মেঘ স্বস্তির বৃষ্টি নামাবে।

বাঙালির সে অপেক্ষার পালা হয় তো শেষ। কারণ, আজ আষাঢ়ের প্রথম দিন। কবি কালিদাসের ভাষায়, আসাঢ়ষ্য প্রথম দিবসঃ। ব্যাকুল যক্ষের মতো বাঙালির উদাস হওয়ার দিন। নদী বিধৌত এ জনপদে এক ভিন্ন আবহের স্রষ্টা এ ঋতু। আনুষ্ঠানিকভাবে বর্ষাকালের সূচনা আজ থেকে। যদিও এবার বৃষ্টি হচ্ছে বেশ আগে থেকেই। আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

কৃষিনির্ভর বাংলাদেশ অনেকভাবে ঋণী এই বর্ষার কাছে। তবে বিপত্তি ঘটে অতিবৃষ্টিতে। একই দশা আবার অনাবৃষ্টিতে। খরা যেন না হয়। তেমন চাই না কারও যত্নে লালিত মাছ ভেসে যাক বর্ষার পানিতে। চাই ইলশে গুঁড়ি বৃষ্টিতে বেশি বেশি ইলিশ উঠুক উজান ভাটি পাড়ি দেওয়া জেলেদের জালে। সে ইলিশ শুধু শহরবাসীর জন্য নয়, জেলে পাড়ায়ও সৌরভ ছড়াক ভাজা ইলিশের গন্ধ।

বাংলা সাহিত্য অপূর্ণ বর্ষাবন্দনা ছাড়া। কালিদাস থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল হয়ে হুমায়ূন, সুনীল ছাড়িয়ে বিস্তৃত বর্ষাগীতি। কিন্তু কবিতার আবেগ কতক্ষণ ধরে রাখা যায়? বাস্তবে যখন দেখি প্রাচুর্যে ভরা শহর তলিয়ে একটু বৃষ্টিতে। কিংবা সদ্য তৈরি নতুন রাস্তা আবার গর্ত করে খোঁড়াখুঁড়ি চালায় সরকারি লোকেরা। তখন বুঝতে হয় বর্ষা কোনো ঘটনা নয়। আসল ঘটনা জুন-জুলাইয়ের বাজেট। বরাদ্দ অর্থের নয়ছয় করতেই বর্ষাকে দায়ী করার এই তৎপরতা।

বৃষ্টির পানি বিশুদ্ধ। ভূগর্ভের পানি কম ব্যবহার করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন বর্ষার পানি জমিয়ে রাখার কথা। আধুনিক স্থাপত্য মণ্ডিত অনেক ভবন গড়ে উঠছে শহরে। যেগুলোকে ডাকা হচ্ছে ‘স্মার্ট বিল্ডিং’ হিসেবে। এর কতটিতে বর্ষার পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে, সে তথ্য জানা নেই কারোই।

তাই মনে হয়, বৃষ্টিস্নাত প্রকৃতি যেন কাঁদে আমাদের মানুষের অসহায়ত্বে। একেই কি আমরা বর্ষা নামে ডাকি? আমরা ঝিরিঝিরি ভিজতে থাকি। পথে নামতে বাধ্য কিন্তু প্যাসেঞ্জার না পাওয়া রিকশাচালকের মতোন। ক্রন্দনের বর্ষা যেন না আসে। প্রশান্তির বর্ষণ যেন সবাইকে ছুঁয়ে যায়। যাতে স্নিগ্ধ হয় চারপাশ। যদিও ইটকাঠ পাথরের শহরে বর্ষা স্রেফ এক ঋতু মাত্র। ফ্ল্যাটবন্দী মানুষের হৃদয়ে কখনোই প্রবেশ করে না বর্ষার গান। যা উপলব্ধি করেছেন কবীর সুমনও। তাই তার গিটারে বেজে উঠেছে—রিয়েল এস্টেট শোনে কি কখনো মেঘমল্লার...

Link copied!