মাঝে মাঝেই আমাদের এই সমস্যাটা হয়। বিশেষ করে ঠান্ডার সময়, শীতকালীন সময়ে এই বিষয়টির সম্মূখিন হতে হয় বেশি। আমাদের স্বরযন্ত্রের গঠন প্রকৃতি আর কার্য প্রণালি বেশ জটিল। ল্যারিংস বা স্বরযন্ত্রের মাঝ বরাবর থাকে ভোকাল কর্ড, যার আবার দুটি অংশ আছে, সে ভোকাল কর্ডের সমন্বিত নাড়াচাড়া এবং সে সঙ্গে জিহ্বা, মুখের মাংসপেশি, খাদ্যনালির অংশ বিশেষসহ আরও অনেক অঙ্গ-প্রতঙ্গের সহযোগিতায় আমরা কথা বলার কাজটি করে থাকি।
অনেক উঁচু গলায় কথা বললে গলার স্বর ভেঙে যেতে পারে, আবার ঠান্ডায়ও গলার স্বর পরিবর্তন হয়। ল্যারিনজাইটিস হলে ভয়ের কারণ নেই খুব একটা, এর প্রধান চিকিৎসাই হচ্ছে কথা না বলা, যার ফলে স্বরযন্ত্র বিশ্রাম পায় ও তাড়াতাড়ি আরাম পাওয়া যায়। ঠান্ডা, ধুলাবালি এড়িয়ে চলা, হালকা গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করা, আদা, লবঙ্গ ইত্যাদি খেলেও কণ্ঠস্বর ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে আসে।
যারা পেশাগত বা ব্যক্তিগত কারণে কথা বেশি বলেন যেমন, শিক্ষক, চিকিৎসক, গায়ক, ক্যানভাসার, এদের ক্ষেত্রেও গলার স্বরের সমস্যা দেখা দিতে পারে, ক্রমাগত কথা বলার কারণে স্বরযন্ত্রে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হয়, যাকে বলা হয় ক্রনিক ল্যারিনজাইটিস। কখনো কখনো ভোকাল কর্ডে পলিপ, নডিউল বা টিউমার হতে পারে, এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোনো ব্যথা বা অসুবিধা থাকে না, শুধু গলার স্বর বসে যায়, যা সময়ের সঙ্গে বেড়ে যেতে পারে, সঙ্গে শ্বাসকষ্টও হতে পারে।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহনূর শারমিন বলছেন, মারাত্মক কিছু কারণেও গলার স্বরের পরিবর্তন হতে পারে। বিশেষ করে স্বরযন্ত্র বা শ্বাসনালির ক্যানসারজাতীয় সমস্যা হলেও গলার স্বর বসে যায়, তাই কারও ক্ষেত্রে যদি গলার স্বরের সমস্যা চার থেকে ছয় সপ্তাহের বেশি হয়ে যায়, সঙ্গে কাশি, কফ বা গলা দিয়ে রক্ত পড়ার সমস্যা থাকে, ওজন কমার লক্ষণ দেখা দেয়, শ্বাসকষ্ট থাকে বা ধূমপানের ইতিহাস থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
কিছু ক্ষেত্রে ভোকাল কর্ডের যে নার্ভ রয়েছে, রিকারেন্ট ল্যারিঞ্জিয়াল নার্ভ নামে, সে নার্ভ বিকল হলেও গলার স্বর একদম বসে যেতে পারে বা পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। গলা ভেঙে যাওয়ার সমস্যাকে আমরা অধিকাংশ সময় খুব একটা পাত্তা দেই না, কিন্তু এর পেছনে মারাত্মক কোনো কারণ থাকাও অসম্ভব নয়। তাই প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।