• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

মান্না দে আছেন নিরন্তর জেগে থাকা নক্ষত্রের মতোন


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মে ১, ২০২৩, ১০:০৩ এএম
মান্না দে আছেন নিরন্তর জেগে থাকা নক্ষত্রের মতোন

প্রবোধচন্দ্র দে নামের শিশুটি জন্মে ১৯১৯ সালের আজকের দিন পয়লা মে কলকাতায়। এ ছিল শ্রমের আরাধনা করার এক দিবস খচিত প্রহর। এর সারার্থ মিথ্যে হয়নি। ধ্রুপদী সংগীতে দক্ষতা থাকলেও মান্না দের গান বিস্তৃত হয়ে আছে শ্রমিকসহ সর্বজনের হৃদয়ে। হাটে, মাঠে, গঞ্জে, গাঁয়ে সবাই স্বাদ নেন সে সুরের। মন ভাঙাদের কাছে উল্লাসস্রষ্টা হয়ে মান্না দে বরণীয় হয়ে আছেন আজও।

আরও অনেক শিল্পমাধ্যমের মতো সংগীতও গুরুমুখী বিদ্যা। মান্না দের গুরু ছিলেন ওস্তাদ আমান আলী খাঁন। বেশ শৈশবেই দীক্ষা। ভেতরে তা পৌঁছায় নিবিড়ভাবে। নইলে এ মায়েস্ত্রোর গাওয়া গানের সংখ্যা ৪ হাজারের বেশি হবে কেন? ১৯৪২ সাল থেকে সংগীত জগত মাতিয়েছেন মৃত্যু অবধি। মান্না দে হয়ে আছেন রবীন্দ্র উত্তর বাংলা আধুনিক গানের এক অসামান্য প্রতিভূ।  

ভিত্তি মজবুত হলে সে গাছ নুয়ে পড়ে না। এর মানব নজির মান্না দে। শৈশব থেকে পাওয়া ধ্রুপদী পাঠ তাকে দৃঢ়তা দেয়। লোক মাতানোর ফিল্মের গানেও তিনি সফল হয়েছেন এ কারণে। মান্না দে ছিলেন একাধারে গায়ক, সুরকার, গীতিকার, সংগীত আয়োজক, সংগীত পরিচালক ও সঙ্গত কারণেই সংগীত বোদ্ধা। বাদ থাকবে কেন তার লেখক সত্ত্বা? তার লিখিত আত্মজীবনী ‘জীবনের জলসাঘর’ অনুদিত হয়েছে একাধিক ভাষায়। জীবনীভিত্তিক ছবি পর্যন্ত হয়েছে এ নিয়ে।

৯৪ বছরের জীবনে মান্না দে স্বীকৃতি পেয়েছেন বহু। ভারতের সরকারের দেওয়া পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ, পদ্মশ্রী—সবই আছে তার ঝুলিতে। যে সিনেমার গানে তিনি জনপদ মাতিয়েছেন সে আঙিনা থেকে পেয়েছেন ‘দাদা সাহেব ফালকে’ সম্মাননা। এ তো গেল দেশের কথা। ১৯৮৫ সালে মান্না দে ফ্রান্স সরকারের দেওয়া বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার অর্জন করেন। সংগীতে অবদান রাখায় কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মাননা পর্যন্ত অর্জন করেছেন তিনি।  

মান্না দে তার বৈচিত্র্যময় কণ্ঠের গুণে ক্যারিয়ারজুড়ে প্রায় দেড়শ সংগীত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন। তার সহশিল্পীরা বিশ্ব সংগীতের নক্ষত্রসম। কাজ করেছেন রবি শংকর, আল্লারাখা, এসডি বর্মণ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সলিল চৌধুরী, কিশোর কুমার, লতা মুঙ্গেশকর, আশা ভোসলে, পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, ওস্তাদ জাকির হোসেন, নুসরাত ফতেহ আলী খান, মোহাম্মদ রফি, তালাত মাহমুদ, ফিরোজা বেগম, ভীমসেন যোশি, হৈমন্তী শুক্লার মতো শিল্পীর সঙ্গে। বাঙালি মান্না বিস্তৃত হয়েছেন শুধু হিন্দি সিনেমার হিন্দি গানে ভর করে নয়। মারাঠি, কানাড়া, তেলেগু, গুজরাটি, নেপালি বহু ভাষার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন এ কিংবদন্তি।  

প্রয়াণেও অমর থাকেন এমন শিল্পী মান্না দে। ২০১৩ সালে চলে যাওয়ার পর বহুভাবে চর্চিত হচ্ছে তার গাওয়া গান। এ কালের তারুণ্য মানে তাকে। বিপুল রকম রিমিক্স আর ম্যাশআপ চলছে মান্না দের গাওয়া গান নিয়ে। নিশ্চিতভাবেই বলা যায় তা চলবে অনাগত ভবিষ্যতেও। সমষ্টির মাঝে যে সৃষ্টি প্রবাহিত হয় তাই তো কালজয়ী। তাই সংগীতে মান্না দে আছেন নিরন্তর জেগে থাকা নক্ষত্রের মতোন।

Link copied!