• ঢাকা
  • সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

প্রথমবারের মতো বাবাকে ছাড়া চঞ্চল চৌধুরীর দুর্গাপূজা


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৩, ০৫:৩৯ পিএম
প্রথমবারের মতো বাবাকে ছাড়া চঞ্চল চৌধুরীর দুর্গাপূজা
বাবা গোবিন্দ চৌধুরী সঙ্গে চঞ্চল চৌধুরী

এবারই প্রথম বাবাকে ছাড়া দুর্গাপূজা উদ্‌যাপন করছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত ও দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী । এ নিয়ে ফেসবুকে আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন চঞ্চল চৌধুরী। কাজের বাইরে নিজের পরিবারকে সময় দিতেই বেশি পছন্দ করেন এই অভিনেতা। বিশেষ করে বাবা-মাকে। তবে এখন শুধু মাকে ঘিরেই তার সবকিছু। কারণ ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান অভিনেতার বাবা গোবিন্দ চৌধুরী।

লেখার শুরুতে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, “শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসব। ছোটবেলা থেকেই আমাদের গ্রামে এই দুর্গাপূজার আমেজ শুরু হতো এক মাস আগে থেকেই। পাল মশাইয়ের প্রতিমা বানানো থেকে শুরু করে দেবী বিসর্জন পর্যন্ত— কি যে এক আনন্দোৎসব! সারা বছর ধরে অপেক্ষা করতাম কবে আসবে এই উৎসব। শরতের কাশফুলে সাদা হয়ে থাকতো পদ্মার চর। সবচেয়ে বড় লোভ, আনন্দ আর উত্তেজনা কাজ করতো নতুন পোশাক পাবার আশায়।”

স্মৃতিচারণ করে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, “সারা বছর তেমন নতুন পোশাক আমাদের কপালে জুটতো না। কঠিন দরিদ্রতার ভেতরেও পূজার সময় বাবা সাধ্যমতো চেষ্টা করতেন সব ভাই-বোনকে নতুন কাপড় কিনে দেবার। সারা বছর একমাত্র এই পূজাতেই আমাদের সৌভাগ্য হতো নতুন পোশাক পরার। ছিট কাপড় কিনে বাবা নিজে সঙ্গে করে শার্টের মাপ দেয়ার জন্য নিয়ে যেতো দর্জির কাছে। প্রতিদিন দর্জির কাছে গিয়ে বসে থাকতাম, কাপড় কাটা হলো কিনা, সেলাই হলো কতটুকু, বোতাম লাগানো শেষ হলো কিনা দেখবার জন্য।”

নতুন শার্টের গন্ধে মাতোয়ারা হতেন চঞ্চল। সেই দিনের কথা স্মরণ করে এ অভিনেতা বলেন, “আহারে! কত কত অপেক্ষা! যে দিন শার্টটা হাতে পেতাম, সে যে কি আনন্দ! নতুন কাপড়ের আনন্দ, পূজার আনন্দ। নতুন কাপড়ের গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে যেতাম। এভাবেই কেটে গেছে অনেকগুলো বছর। আস্তে আস্তে বোনগুলোর বিয়ে হয়ে গেছে সমর্থ পরিবারে, আমরা ভাইয়েরাও লেখাপড়া শেষ করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি যার যার মতো। বাবা-মায়ের নিদারুণ কষ্টের সংসারে ফিরে এসেছে সচ্ছলতা।”

“এখন আমরা নিজেদের সন্তানসহ, আত্মীয়-স্বজন অনেককেই পূজার সময় সাধ্যমতো নতুন পোশাক কিনে দিই। এখন আমার ঘর ভর্তি কত কত নতুন পোশাক। পোশাকগুলো পরার সময়ও পাই না ঠিকমতো। এছাড়া প্রতিবছর পূজায় আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকেও অনেক নতুন পোশাক উপহার পাই। কিন্তু সেই পোশাকে কেন জানি সেই আগের নতুন গন্ধ পাই না, যে গন্ধ পেতাম বাবার কিনে দেয়া ছিট কাপড় থেকে বাজারের দর্জির বানানো শার্টে! যে গন্ধে বুঁদ হয়ে থাকতাম, ছিলাম বহু বছর।”—বলেন চঞ্চল।

পূজা উপলক্ষে এবার বাবার জন্য কিছু কিনেননি চঞ্চল। ব্যাখ্যা করে এ অভিনেতা বলেন, “কিছুটা সামর্থ্য হবার পর থেকেই প্রতিবছর পূজায় সবার আগে বাবা-মায়ের জন্য নতুন পোশাক কেনা আমার জন্য ছিল সবচেয়ে বড় প্রশান্তির, সবচেয়ে বড় আনন্দের অভ্যাস। এবারও নিজ হাতে সবার জন্য নতুন কাপড় কেনার লিস্ট তৈরি করতে গিয়ে প্রথমেই বাবার নামটা লিখে ফেলেছি। হঠাৎ মনে হলো, আরে বাবা তো নেই। চুপ করে বসে থাকলাম অনেকক্ষণ। চোখের জল কোনোভাবেই বন্ধ করতে পারছিলাম না। গত বছর বাবা চলে গেছেন পরলোকে। জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত বাবা-মাকে ছাড়া কোনো দুর্গাপূজা পালন করিনি। এবারই প্রথম বাবা নেই। বাবার জন্য কিছু কেনাও হয়নি।”

বাবার কাছে প্রশ্ন রেখে চঞ্চল বলেন, “বাবা বেঁচে থাকলে একটা কথা জিজ্ঞেস করতাম, প্রথম যে বছর আমি দুর্গাপূজায় তোমার জন্য পাঞ্জাবি কিনে দিয়েছিলাম, সেই নতুন পাঞ্জাবির ঘ্রাণটা তোমার কাছে কেমন লেগেছিল বাবা? শুদ্ধ কি পূজায় আমার কিনে দেয়া নতুন শার্ট বা পাঞ্জাবিতে কোনো ঘ্রাণ খুঁজে পায়? যে ঘ্রাণ এখনো আমার নাকে, মুখে, সারা শরীরে লেপ্টে আছে; সেই আমার বাবার কিনে দেয়া ছিট কাপড় থেকে একমাস ধরে দর্জির ২০ টাকা মজুরিতে বানানো জামার গন্ধ। বাবা, তুমি ওই রকম একটা গন্ধ হয়ে আমৃত্যু আমার শরীরে মেখে থেকো। যেখানেই থাকো ভালো থেকো বাবা। এবারো পূজাতেও হয়তো বাড়িতে গেলে গাড়ির হর্ন শুনে, গেটের বাইরে এসে তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলবে, ‘রাস্তায় কোনো সমস্যা হয়নি তো বাবা?’ সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা। মা দুর্গা সকলের মঙ্গল করুন।”
 

Link copied!