• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই, ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২, ০৭ মুহররম ১৪৪৬

কান চলচ্চিত্র উৎসবের বাংলা ছায়াছবি ‘রেহানা মরিয়ম নূর’


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২১, ০৫:০৫ পিএম
কান চলচ্চিত্র উৎসবের বাংলা ছায়াছবি ‘রেহানা মরিয়ম নূর’

আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ও কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত প্রথম বাংলাদেশী সিনেমা রেহানা মরিয়ম নূর (আরএনএম)। এতে বাংলাদেশী একটি মেডিকেল কলেজের মেডিসিনের অধ্যাপক রেহানা মরিয়ম নূরের চরিত্রে অভিনয় করা আজমেরি হক বাধন একদিকে যেমন অদম্যভাবে এক নারীবাদীর প্রতিনিধিত্ব করেছেন, তেমনি নিজের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কঠিন সব পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গেছেন।

ডা: রেহানা মেরিয়াম নূরের নামানুসারেই সিনেমার নামকরণ, তবে এই নামের মহিমা জানতে অপেক্ষা করতে হবে শেষ দৃশ্য পর্যন্ত। মেডিসিনের তরুণ সহকারী অধ্যাপক রেহানাকে শুরতেই দেখা যায় প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া কন্যার বিধবা মা হিসেবে। এরপরই পরীক্ষার হলে স্কেলের মধ্যে চিরকুট লিখে নকল করতে গিয়ে ধরা পড়া মেডিকেল শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের মাধ্যমে নিজের চরিত্রের কঠোর দিকটাও দেখিয়ে দেন তিনি। কিন্তু সেই রেহানা যখন আরেক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করা প্রফেসরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামেন তখন পুরো দৃশ্যপটই বদলে যায়।

নবাগত বাধনের অসাধারণ অভিনয়ের মাধ্যমে লেখক ও পরিচালক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ এই চলচ্চিত্রে কেবল নারীর অসহায়ত্বকেই তুলে ধরেননি, যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে একজন নারীর একক প্রতিবাদকেও ফুটিয়ে তুলেছেন। চরিত্রের দৃঢ়তা একদিকে যেমন নায়িকা হিসেবে রেহানার প্রতি দর্শককে আবেগাপ্লুত করে, ঠিক তেমনি যারা অন্যায়কে মুখ বুজে সহ্য করেন তাদেরকেও অস্বস্তিতে ফেলে দেয়।

রেহানার কর্মক্ষেত্র মেডিকেল কলেজটিতে একদিকে যেমন চলে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের আধিপত্য, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অপকর্মের প্রতি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা। প্রফেসর আরেফিনের (কাজী সামি হাসান) যেখানে শিক্ষার্থীদের অন্যায় আচরণকে প্রশ্রয় দিতে চান সেখানে রেহানা তাঁর ঠিক উল্টো। অপরাধের উপযুক্ত শাস্তিটাই যেন তাঁর পছন্দ। যদিও রেহানার মাথার উপরের সাদা ওড়নাটি যেন তাঁর অন্তরের বিশুদ্ধতাকেই প্রকাশ করে।

একদিন আরেফিন ম্যাডামের অফিস থেকে ছাত্রী অ্যানিকে অশ্রুসজল চোখে বেরিয়ে আসতে দেখে কৌতূহলী হয়ে ওঠেন রেহানা। বুঝতে পারেন মেয়েটির সঙ্গে ভয়াবহ কিছু ঘটেছে। গল্পটি যতই এগিয়ে যায়, এই ঘটনার সঙ্গে রেহানারও তত বাজেভাবে জড়িয়ে পড়েন। রেহানা নিজেকে বোঝান, “আমি এই অন্যায়ের সাক্ষী। আমি কিছুতেই চুপ করে থাকতে পারি না।”

অ্যানিকে অধ্যক্ষের কাছে এই ব্যাপারে অভিযোগ দিতে সর্বাত্মকভাবে উৎসাহিত করেন তিনি। কিন্তু সে ভয়ে পিছিয়ে এলে অপরাধীকে দোষ স্বীকার করাতে ও পদত্যাগে বাধ্য করতে রেহানা নিজেকেই ধর্ষণের শিকার বলে দাবি করে বসেন। ভবিষ্যতে কোন মেয়েকে কেউ যেন কেউ নির্যাতন করতে সাহস না পায় নিজের সব শক্তি দিয়ে সেটাই নিশ্চিত করতে চান তিনি।


তবে এই সংগ্রামের এক পর্যায়ে এসে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন রেহানা। নির্যাতন, উদ্বেগ আর সহিংসতার শিকার নারীর অবসন্নতা সিনেমার দ্বিতীয়ার্ধে দর্শকদের যেম দম বন্ধকর এক পরিস্থিতির মধ্যে ফলে দেয়। এদিকে কর্মব্যস্ত মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত ছোট্ট ইমু (আফিয়া জাহিন জাইমা) রেহানার জীবনের একটা বড় অংশ। যার অবাধ্য আচরণ যেন মায়ের কঠোর চরিত্রেরই প্রতিফলন। তাই মা-মেয়ের সম্পর্কের টানাপড়েন আর দৃঢ়তা একে অপরের পরিপূরক হিসেবে তাদের সামনে আনে। তাই সিনেমটিতে মানসিকতা ও নৈতিকতার লড়াই কেবল প্রাধান্য পায়নি সন্তানের প্রতি মায়ের আকুলতাও চিত্রিত হয়েছে সুনিপুণভাবে।

পর্দায় সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন বাধনের সেরা অভিনয়টাই বের করে এনেছেন সাদ। একইসঙ্গে ডিপি তুমিল তামিজুলের সঙ্গে প্রযুক্তিগত দিকগুলোতেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন এই পরিচালক। বিশেষ করে বেশ কিছু দৃশ্যে নীলাভ রঙের ছোঁয়া যেন গল্পের হিমশীতল উত্তেজনা আর বিষাদ জীবন সংগ্রামকে তুলে ধরে। অন্যদিকে রেহানার একাগ্রতা আর দৃঢ়চেতা মনকে তুলে ধরতে বিভিন্ন দৃশ্যে তার চেহারাকে ক্যামেরার খুব কাছ থেকে দেখিয়ে পেছনের দৃশ্যটাকে ঝাপসা করে রাখা হয়েছে। তাই পুরো সিনেমাতে ক্যামেরার কাজটাও ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং।

মূল লেখা: ডেবোরা ইয়ং
তথ্যসূত্র: দ্য হলিউড রিপর্টার

Link copied!