বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেল ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থী লিওনসহ সকল শিক্ষার্থীকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি এবং ৯ দফা দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলে দেওয়ার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (৩ আগস্ট) দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক (ডেইরি গেইট) সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবরোধ শুরু করেন তারা। তবে অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি পরিষেবার বাহনগুলো অবরোধের আওতামুক্ত ছিল। পরে দুপুর ২টায় অবরোধ তুলে নেন আন্দোলনকারীরা। তখন যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
অবরোধ কর্মসূচিতে সাভার-আশুলিয়ার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
এরপর অবরোধস্থল থেকে মিছিল নিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক হয়ে জয় বাংলা ফটক (প্রান্তিক গেইট) দিয়ে ভেতরে ঢুকেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি উপাচার্যের বাসভবন হয়ে পুরোনো ফজিলাতুন্নেসা হল সংলগ্ন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় নিহতদের স্মরণে নবনির্মিত ছাত্র-জনতা শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের সামনে যায়। পরে সেখানে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর সেখান থেকে পুনরায় মিছিল নিয়ে শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদ ভবন সংলগ্ন মহুয়া মঞ্চের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গিয়ে শেষ হয়। এ কর্মসূচিতে সাভার-আশুলিয়ার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার সমন্বয়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, “আরিফ সোহেল ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী লিওনসহ সব শিক্ষার্থীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দেওয়া না হলে এবং আজকের মধ্যে শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি আদায় না হলে কাল থেকে অসহযোগ আন্দোলনে যাবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হলগুলো খুলে না দেয়, তবে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই তাদের করণীয় এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, “আমরা মূলত ৯ দফা দাবিতে আন্দোলন করছি, কিন্তু সাধারণ জনতার যে চাহিদা বা দাবি সেটা হচ্ছে এক দফা দাবি। স্বৈরাচার নিপাত যাক, এটাই হলো এক দফা দাবি। আমরা শাসকগোষ্ঠীকে হুঁশিয়ার করে বলে দিতে চাই, আমরা যতই ৯ দফা দাবিতে আন্দোলন করি না কেনো, সাধারণ জনতা কিন্তু আপনাদের চায় না, সেটা বুঝে নেবেন। পুরো ফেসবুকজুড়ে সয়লাব হয়েছে গেছে, গণভবনের কোন জায়গা সাধারণ জনতার কে কোন জায়গাটা দখলে নেবেন। তার মানে আপনি স্পষ্ট বুঝতে পারছেন গণভবন যে আপনার বাসস্থান সেখানে আপনি থাকতে পারছেন না। গণভবন এখন জনগণের ভবন হয়ে যাবে। অতএব আপনি, সরকারের যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সেই মূল্যবোধে ফিরে আসুন, নইলে আমরা আপনাকে গদি থেকে ফেলে দিতে আর দুইবারও বিবেচনা করব না।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী বলেন, “যতদিন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত না করা হবে, ততোদিন পর্যন্ত আমরা শিক্ষকরা চুপ থাকতে পারি না। গতকালও উত্তরা, খুলনা ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর সরাসরি গুলি করা হয়েছে। দেশের সকল মানুষকে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর আহ্বান জানাব, আপনারা প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে সোচ্চার হোন। আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর যে ম্যাচাকার হয়েছে, এটা বন্ধ করার জন্য তৎপর হোন।”